ঢাকা | মঙ্গলবার
১১ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৬শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রীনগরে পাট নিয়ে ভোগান্তিতে চাষিরা

শ্রীনগরে পাট নিয়ে ভোগান্তিতে চাষিরা

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে সোনালী আঁশ হিসেবে পরিচিত পাট চাষে আগ্রহ কমছে কৃষকের। এক সময় উপজেলাব্যাপী ব্যাপক পাটের চাষ হলেও নানা কারণেই এ চাষে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। প্রায় একযুগ আগেও এই অঞ্চলের দুই ফসলি জমিতে আলু, সরিষা, গমসহ অন্যান্য ফসল তোলার পর পাটের চাষাবাদ করা হত।

বর্ষার ভরা মৌসুমে স্থানীয় হাটবাজার সংলগ্ন খালে পাট বোঝাই অসংখ্য নৌকার দেখা মিলত। এখন গ্রামীন পরিবেশে সেই দৃশ্য শুধুই অতীত। কালের বিবর্তণে পাট চাষ থেকে সরে দাড়াচ্ছেন স্থানীয়রা। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এখনও কিছুকিছু জমিতে পাটের চাষ করতে দেখা যাচ্ছে। গেল বছর উপজেলায় পাট চাষ করা হয় প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে। এ চাষে প্রদর্শনী ক্ষেত ছিল ১০টি। শোনা যাচ্ছে এ বছর খোলা বাজারে ভালমানের শুকনো পাটের মণ বেচাকেনা হচ্ছে ৩২০০-৪০০০ হাজার টাকা করে।

উপজেলার পূর্ব অঞ্চলের কুকুটিয়া, আটপাড়া, তন্তর, পাটাভোগ, বীরতারা ইউনিয়নের প্রায় জমিতে কৃষকের পাট কাটা শেষ। তবে প্রয়োজনীয় পানির অভাবে কাটা পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কৃষক বিপাকে পড়েন। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পাটাভোগ বেজগাঁও এলাকায় শুকনো জমিতে পাট কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। কাছাকাছি খাল/বিলে পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।

প্রান্তিক কৃষকরা কাটা পাট পিকআপসহ অন্যান্য পরিবহণে করে ৬/৭ কিলোমিটার দূরের বিলের পানিতে পাট জাগ দিতে নিচ্ছেন। দেখা যায়, বাড়ৈগাঁও, কর্কটপাড়া ও নাগভোগ সড়কের পাশে চকের কোমড় পানিতে নেমে শ্রমিকরা পাট জাগের কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। জানা গেছে, এখন ভরাবর্ষা মৌসুম হলেও বিভিন্ন খাল ও পানি প্রবাহের স্থাল দখল ও ভরাটের ফলে এই অঞ্চলের অনেক চক কিংবা খালে ঠিকমত পানি ঢুকতে পারছেনা।

লক্ষ্য করা গেছে, বীরতারা, বিবন্দী, দত্তগাঁও, তন্তর, সিংপাড়া, পানিয়া, ব্রাহ্মণখোলা, সোন্ধারদীয়া এলাকার বিভিন্ন রাস্তার পাশে নারীরা পাটখরি থেকে সোনালী আঁশ তুলছেন। নাগরভোগে কফিলউদ্দিন নামে এক শ্রমিক বলেন, এই চকে কোমড় পানি থাকায় দূর থেকে পাট এনে জাগ দেওয়া হচ্ছে। ৮-১০ দিনের মধ্যে এসব পাট পানি থেকে তোলা হবে। ৭০০ টাকা রোজে কাজ করছেন তারা। হরপাড়ার কৃষক আবুল হোসেন, পাটাভোগের সাইদুল ইসলাম, কুকুটিয়ার মো. কুদ্দুস, বীরতার আমির হোসেন, খৈয়াগাঁওয়ের এরশাদ ও মাশাখোলার কামাল জানান, আবহাওয়া-জলবায়ুর পরিবর্তণ, অতিখরা ও অসময়ে ঝড়বৃষ্টি, ভরাবর্ষায় পানির ধারাবাহিকতা না থাকাসহ ব্যাপক খাটা খাটোনী শেষে পাটের কাঙ্খিত বাজার মূল্য না পাওয়া এ চাষে কৃষক লাভবান হচ্ছেন না।

কৃষক মো. শুভ বলেন, পাটাভোগের বেজগাঁও দেড়কানি জমিতে (২১০ শতাংশ জমি) পাট চাষ করেছি। জমির পাশে হরপাড়া খালে পানি না থাকায় কাটা পাট প্রায় ৭ কিলোমিটার পূর্বদিকে কর্কটপাড়ার চকে জাগ দিতে নেয়া হচ্ছে। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি ব্যয় খরচও বাড়ছে। দেড়কানি জমিতে প্রায় ৩০ মণ পাট উৎপাদণের কথা ভাবছেন তিনি। শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহসিান জাহান তোরণ জানান, এ বছর উপজেলায় প্রায় ১৮০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ১টি ক্ষেতের প্রদর্শনী রয়েছে। উচ্চ ফলনশীল পাট চাষে স্থানীয়দের আগ্রহী করে তুলতে সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সরকারিভাবে এ বছর এখনও পাটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন