- সব ধরনের সূচক উত্থান
- লেনদেন ৪২৮ কোটি টাকা
- ফ্লোর প্রাইস বন্ধের দাবি
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল মঙ্গলবার সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। আগের দিনের চেয়ে এদিন লেনদেন পরিমাণ ডিএসইতে বাড়লেও সিএসইতে কমেছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন ৪শ কোটি টাকার ঘরে এসেছে। ক্রেতার পরিমাণ দুই স্টকেই ব্যাপক বেড়েছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, গতকাল মঙ্গলবারও ফ্লোর প্রাইজের কারণে দুই স্টকের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে। অবশ্য এদিন ক্রেতার চাপ বেশি ছিল। ক্রেতা চাপের একই অবস্থা ছিল সিএসইতে। এদিকে ফ্লোর প্রাইজও যেনো বাঁচাতে পারছে না পুঁজিবাজারকে। মন্দা লেনদেন থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ আ্যন্ড একচেঞ্জ কমিশন।
চলতি বছরের ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস অর্থ্যাৎ শেয়ার দর কমার সর্বনিম্ন সীমা নিধারন করে দেয়। এরপরে কিছুদিন পুঁজিবাজার ভালো থাকলেও পরবর্তীতে মন্দা ফিরে আসে। হাজার কোটি টাকার লেনদেন বর্তমানে ৪শ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। মন্দা বাজার প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ফ্লোর প্রাইস কখনোই ভালো পদ্ধতি না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার দাবি করেন তিনি।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, সরকারের নতুন সময় সূচির প্রথম কার্যদিবস ডিএসইতে গত ২৪ আগস্ট পতন হয়েছিল। যা আগের টানা ছয় কার্যদিবস উত্থানের পর এই মন্দা। পতন পরের দুই কার্যদিবস (বৃহস্পতিবার ও রবিবার) উত্থানে ছিল পুঁজিবাজার। ওইসময় লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিলো। পরেরদিন সোমবার লেনদেনে ভাটা পড়ে। সেখান থেকে পরের দুই কার্যদিবস লেনদেন কিছুটা বাড়ে।
পরেরদিন লেনদেন আবারো কমে। এরপরের কার্যদিবস লেনদেন বেড়ে ২৩শ কোটি টাকায় ওঠেছিল। পরে জোয়ার-ভাটায় চলে পুঁজিবাজারের লেনদেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর লেনদেন বছরের সেরা রেকর্ড করেছিলো। ওইদিন লেনদেন ২৮শ কোটি টাকা এসেছিলো। পরে ফের জোয়ার-ভাটায় পড়ে লেনদেন। এরই ধারায় গতকাল মঙ্গলবার লেনদেন ৪২৮ কোটি টাকায় চলে এসেছে।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রমতে, গতকাল ডিএসইতে ৪২৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস গত সোমবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৩৫১ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৯ দশমিক ৫২ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৩০ দশমিক ৫০ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ১২ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ১২ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ১৯০ দশমিক ২০ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৫৫ দশমিক ৫০ পয়েন্টে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১৩টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৭৮টি এবং কমেছে ৬টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ২২৯টির। এদিন ডিএসইতে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন জেনেক্স ইনফোসিস ৩৮ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ওরিয়ন ফার্মা ১৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, নাভানা ফার্মা ১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, সী পার্ল বিচ ১১ কোটি ৮১ লাখ টাকা, ইস্টার্ন হাউজিং ১১ কোটি ৪২ লাখ টাকা, সামিট এলায়েন্স পোর্ট ১১ কোটি ২ লাখ টাকা, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এবং ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন ৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
অপরদিকে, সিএসইতে গতকাল লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৩ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস গত সোমবার ১৩ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৪৩টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৫১টি, কমেছে ১৭টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৭৫টির।
এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৩৪ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪১৬ দশমিক ৮৬ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক দশমিক ৬৫ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ২০ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ২ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩১৯ দশমিক ৫১ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ২১১ দশমিক ৭৯ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৩৪ দশমিক ৭৫ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৫৮ দশমিক ২৫ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে জেএমআই হসপিটাল ৮৮ লাখ টাকা, কপারটেক ৭০ লাখ টাকা, নাভানা ফার্মা ৫৫ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা ৪৩ লাখ টাকা, জেনেক্স ইনফোসিস ৩২ লাখ টাকা, স্কয়ার ফার্মা ২১ লাখ টাকা, সামিট এলায়েন্স পোর্ট ১৭ লাখ টাকা, বিডি কম ১৫ লাখ টাকা এবং সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স ১৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।