দেশে প্রথমবারের মতো বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের জেটিতে নোঙর করেছে আট মিটার গভীরতার একটি বাণিজ্যিক জাহাজ। গতকাল সোমবার দুপুর ২টায় বন্দরের ৫ নম্বর জেটিতে পানামা পতাকাবাহী ‘এম সি সি টোকিও’ জাহাজটি পরীক্ষামূলকভাবে নোঙর করা হয়েছে। এতে রয়েছে ৩৭৭টি কন্টেইনার।
মোংলা বন্দর সূত্র জানায়, বন্দর জেটিতে নাব্য কম থাকায় সাত বা সাড়ে সাত মিটারের অধিক গভীর জাহাজ ভিড়তে পারতো না। যে কারণে আট, সাড়ে আট কিংবা ৯ মিটারের গভীর জাহাজের পণ্য নিয়ে পশুর নদীর মাঝে নোঙরে থেকে কিছু পণ্য খালাস করে পরে জেটিতে ভিড়তো। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই সংকট দূর না হওয়ায় বন্দরের ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা জেটি সংলগ্ন এলাকা ড্রেজিং করে নাব্য সংকট দূর করে গভীরতা বাড়ানোর দাবি জানান।
বিদেশি জাহাজ ‘এমভি এসটিল হারভেস্টের স্থানীয় শিপিং এজেন্ট কিউএনএস’র খুলনার ম্যানেজার মো. নাজমুল জানান, ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের আমদানিকৃত মালামাল নিয়ে দুই দিন ফেয়ারওয়ে এলাকায় থেমে ছিল একটি বিদেশি জাহাজ। ফেয়ারওয়েতে অবস্থানের আগে এই জাহাজের তিন হাজার ৯০০ মেট্রিক টন মালামাল নিয়ে বন্দর জেটিতে আনার কথা ছিল। এজন্য পাইলটও বুকিং দেওয়া হয়। কিন্তু সে সময় জেটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গভীরতা না থাকায় কর্তৃপক্ষ জাহাজটি আনতে পারেনি। বাধ্য হয়ে ফেয়ারওয়েতেই দুই দিন পর দ্বিগুণ খরচে ওই মালামাল খালাস করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আনা হয়।মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের জেটিতে নাব্য সংকটের কারণে সময়মতো অনেক জাহাজ আনতে না পারায় বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। তবে এখন থেকে আর সেই বিড়ম্বনা থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মোংলা বন্দর বার্থ ও শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা অপার সম্ভাবনার কেন্দ্রস্থল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে এ বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম। তাই বন্দর জেটি এলাকায় আট বা আট দশমিক ৫০ মিটার গভীরতার ড্রেজিং করার ফলে স্বাভাবিক জোয়ারের সহায়তায় ৯ দশমিক ৫০ থেকে ১০ মিটারের অধিক ড্রাফটের জাহাজ নির্বিঘ্নে হ্যান্ডল করা সম্ভব হবে।
বন্দর ব্যবহারকারী এস এম মোস্তাক মিঠু ও এইচ এম দুলাল বলেন, পদ্মা সেতুর সুফলে মোংলা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে। জেটি এলাকায় ড্রেজিংয়ের ফলে এ বন্দরের গতিশীলতা আরও বাড়বে। জাহাজের আগমনও বাড়বে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) কমডোর মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ তরফদার বলেন, ‘মোংলা বন্দরের পিপি জেটিতে (পার্মানেন্ট পোর্ট জেটি) ৮ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানোর লক্ষ্যে মেইন শিপিং লাইন ‘‘মার্স্ক লাইন’’ কার্যক্রম গ্রহণের ফলে আজকে এর ট্রায়াল শুরু হয়েছে। কন্টেইনার নিয়ে ৮ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রথমবারের মতো ৫ নম্বর জেটিতে ভিড়ে কন্টেইনার খালাস করেছে।’
তিনি আরও বলেন, এই ট্রায়াল সফল হলে আমাদের আর কোনও দুশ্চিন্তা নেই। ভবিষ্যতে ৮ মিটারের অধিক গভীরতার জাহাজ এই জেটিতে ভিড়তে পারবে। এছাড়া জেটিতে নাব্যতা বাড়াতে প্রতিনিয়ত জেটি সংলগ্ন এলাকায় বন্দরের নিজস্ব ড্রেজার ইমাম শাফি ও ইমাম বোখারী দিয়ে ড্রেজিং করে জেটির নাব্য বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হচ্ছে।