বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একজন জোছনার কবি

একজন জোছনার কবি

‘মৃত্যু- ক্ষুধা-ভালোবাসা খেলা করে উত্তর হাওয়ায়। হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে রাতের আকাশ প্লাবনের গান বাজে শিরায় স্নায়ুতে।
একজোড়া কালো চোখ বসে থাকে যে শহরে অপেক্ষার প্রদীপ জ্বালিয়ে
সে শহর ছেড়ে আমি পালাব কোথায়?’
(ভালোবাসার শহর- দেওয়ান মমিনুল মউজদীন)

দেওয়ান মমিনুল মউজদীন ১৯৫৫ সালের ২৯ আগস্ট সুনামগঞ্জ শহরের এক বিখ্যাত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মরমী কবি দেওয়ান হাসন রাজার প্রপৌত্র। তিনি একাধারে একজন কবি ও প্রতিবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি তরুণ বয়সে সুনামগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সুনামগঞ্জ পৌরসভার তিনবারের নির্বাচিত পৌর-চেয়ারম্যান ছিলেন‌।
মরমী কবি মমিনুল মউজদীন জোছনার কবি হিসেবে পরিচিত। জ্যোৎস্না রাতে শহরের সব সড়কবাতি নিভিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতেন। পাশাপাশি সবাইকে জ্যোৎস্না উদযাপনের সুযোগ তৈরি করে দিতেন। তার এমন উদ্যোগের ফলে দেশের নানা প্রান্ত থেকে সুনামগঞ্জে জ্যোৎস্না দেখতে ভিড় জমাতেন অনেকেই। তখন সুনামগঞ্জ শহর জোছনার শহর হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি লাভ করে।

মমিনুল মউজদীন স্মরণে ২০০৭ বছরের ৮ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামে সর্বদলীয় নাগরিক শোকসভা হয়েছিল। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত সেই শোকসভায় যোগ দিয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তৎকালীন জাতীয় নেতারাও। তাদের দেওয়া ভাষণ সংকলিত করে মাহদীয়া ক্রিয়েশন নামের একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ‘এক স্টেডিয়াম শোক’ নামের একটি তথ্যচিত্র।

এক স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, কবি ও জনপ্রতিনিধি মমিনুল মউজদীন ছিলেন তরুণপ্রজন্মকে সম্মোহিত করে রাখা এক রাজনীতিবিদ। তার হাতে ছিল তরুণদের সমাজ ও রাজনীতিতে আকর্ষিত করে রাখার জাদুকরি গুণাবলী। একাধারে কবি আবার রাজনীতিবিদ। জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধিত্বে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী একজন। ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ সমাজজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলা রাজনীতিবিদদের স্মরণ করে সমাজ অনুশীলনের আয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে মত প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুনঃ  উত্থানে শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন

জ্যোৎস্নাবাদী সেই কবি মউজদীন এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর স্ত্রী-সন্তানসহ নিহত হন। তার অকাল মৃত্যু অপার এক শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। যা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ ফেরার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের নিকট মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি তার স্ত্রী তাহেরা চৌধুরী, ছোট ছেলে কহলিল জিবরান ও গাড়িচালক কবির মিয়া নিহত হন। গুরুতর আহত হয়েছিলেন মউজদীনের বড় ছেলে ফিদেল নাহিয়ান। সিঙ্গাপুরে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন।

মমিনুল মউজদীনের লেখা ‘এ শহর ছেড়ে পালাব কোথায়’ ও ‘হৃদয় ভাঙার গান’ নামের দুটো জনপ্রিয় কবিতার বই রয়েছে।
‘দূরের মানুষ দূরেই থাকা ভালো
সাইবেরিয়ান হাঁসের মতো দূরে
কাছে এলে দূরত্বটাই বাড়ে
দূরে গেলে বিরহের উত্তাপে
নির্বাপিত তৃষ্ণা আবার জাগে’।
(দূরের মানুষ- দেওয়ান মমিনুল মউজদীন )

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন