ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মা হারিয়ে নির্বাক চার শিশু

দেশে ক্যান্সারে প্রতিদিনই ঘটছে অসংখ্য মৃত্যু। তবে এমন কিছু মৃত্যুর ঘটনা নাড়া দিয়ে যায় হৃদয়কে। এমনই এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বাগেরহাটে চিতলমারী উপজেলার রুইয়েরকুল গ্রামে। ১১ মাসের ছোট্টশিশুকে রেখে মা চলে গিয়েছেন পরপারে। সঙ্গে রেখে গেছেন আরও তিন শিশুকে। এমন মৃত্যুতে শিশুদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দশা। শঙ্কায় পড়েছে শিশুদের জীবন।

জানা যায়, রুইয়েরকুল গ্রামের দিনমজুর সুদাস ব্রহ্ম। দেড় মাস আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তার স্ত্রী ঝর্না রানী। দুই পুত্র ও দুই কন্যাসহ রেখে গেছেন চার সন্তান। দিনমজুর সুদাস ব্র² সন্তানদের রেখে সকাল হলেই চলে যান কাজে। সন্তানদের দেখাশুনার জন্য বাড়িতেও কেউ নেই।

স্থানীয়রা জানায়, বাড়ির চারপাশে রয়েছে জলাশয়। যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। রুইয়েরকুল গ্রামের গৃহবধূ তুলি বিশ্বাস বলেন, সুদাস ব্র² একেবারেই দরিদ্র লোক। ধার-দেনা করে স্ত্রী’র চিকিৎসা করিয়েও তাকে বাঁচাতে পারেনি। কাজ না করলে সংসার চলে না। যে কারণে শিশুদের একা রেখে কাজে যেতে হয়। এ মুহূর্তে তার সরকারি সহায়তার দরকার।

স্থানীয় সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য তারা রানী ব্রহ্ম জানান, মৃত ঝর্না রানীর বড় সন্তান সজলের বয়স ১১ বছর। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে সে। ছোট্ট ভাই-বোনদের রান্না করে খাবার তুলে দিতে হয় তাকে। ভাই-বোনদের দেখাশুনা করতে গিয়ে তার পড়াশুনা বন্ধ হতে বসেছে। ওই পরিবারটির সহায়তায় বিত্তবান, সমাজসেবা অধিদপ্তর ও জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে সুদাস ব্রহ্ম হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, স্ত্রীর মৃত্যুতে পুরো পরিবারটা এখন অচল হয়ে পড়েছে। তার বাড়ির ৩ শতক জায়গা ছাড়া কোনো সম্পত্তি নেই। এ পরিস্থিতে কিভাবে সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকবেন সে চিন্তায় দিশেহারা। এ ব্যাপারে চিতলমারী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন বলেন, মৃত ঝর্না রানীর পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

চিতলমারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোহেল পারভেজ বলেন, মা’হারা এ ছোট্টা শিশুদের বিষয়ে আমাকে আগে কেউ জানায়নি। পরিবারটির কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অবশ্যই তাদের জন্য সর্বাত্মক সেবা প্রদান করবো। অসহায় ও এতিম পরিবারের সদস্যদের জন্য আমাদের অনেক ধরনের সেবা রয়েছে।

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদা ফয়জুন্নেসা আনন্দবাজারকে বলেন, আমি বিষয়টি অবগত হয়েছি। আমাদের উপজেলা সমাজসেবা ও ইউপিতে বিধবা ভাতা, দুঃস্থ কার্ডসহ অন্যান্য সেবা রয়েছে। পরিবারটিকে উপজেলা থেকে সরকারি বিধি মোতাবেক সকল ধরনের সহায়তা করা হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন