ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিনিয়োগে নতুন স্বপ্ন

বিনিয়োগে নতুন স্বপ্ন
  • লেনদেনের জোয়ারে উচ্ছ্বাস
  • দুই স্টকের সূচক উত্থান
  • লেনদেন সেরা লার্ফাজ-হোল্ডসিম

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল বুধবার সব ধরনের সূচক উত্থান হয়েছে। বেড়েছে দুই স্টকের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। ডিএসইর লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

সরকারের নতুন সময় সূচির প্রথম কার্যদিবস গত ২৪ আগস্ট (বুধবার) পতন হয়েছিল। যা আগের টানা ছয় কার্যদিবস উত্থানের পর এই মন্দা। পতন পরের গত দুই কার্যদিবস (বৃহস্পতিবার ও রবিবার) ধরে উত্থানে রয়েছিল পুঁজিবাজার। এসময় লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিলো। পরেরদিন গত সোমবার লেনদেনে কিছুটা ভাটা পড়ে। সেই অবস্থান থেকে গত দুই কার্যদিবস লেনদেন বাড়ে। এর মধ্যে গতকালে লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়। এধরনের উত্থান পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক।

বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বলেন, কিছুদিন আগেও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, লোডশেডিং সহ দেশের বিভিন্ন ইস্যুর নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েছিল। এসব কারনে পুঁজিবাজার মন্দায় চলে আসে। ওইসময় বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সেই অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। লেনদেনও বাড়ে ডাবল গতিতে। বেড়ে লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়। বেড়েছে সূচক সহ অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর। এ ধরনের উর্ধ্বগতি পুঁজিবাজার দেখে স্বস্তিতে রয়েছে বিনিয়োগকারীরা। তাদের মধ্যে অনেকেই নতুন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আশা দেখছেন বলেও জানান তারা।

উত্থান পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে শাকিল রিজভী সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী হুমাইরা ওয়াহিদ বলেন, সরকারের নতুন সময় সূচির আগের পুঁজিবাজার পতনে লোকসান ছিল ২০ শতাংশ। বর্তমানে উত্থান সেই লোকসান বৃত্ত ছোট হয়ে এসেছে। লোকসান এখন ৬ শতাংশ কাছাকাছিতে চলে এসেছে। একই প্রসঙ্গে রয়েল সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আবু কাউস বলেন, পুঁজিবাজার উত্থানে পূর্বের লোকসান পরিমান কমেছে। আরো কিছুদিন উত্থান থাকলে লোকসান থেকে লাভে চলে আসবো।

বিনিয়োগ আগ্রহ দেখিয়ে ইবিএল সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আশরাফ উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগে মোট বিনিয়োগের ৫ শতাংশ লোকসান থাকলেও এখন লাভে। আমার কেনা সবগুলো কোম্পানির শেয়ারে লাভ দেখছি। বর্তমানে ব্যাংকে কিছু অলস অর্থ পড়ে আছে। ভাবছি ওই টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবো। একই সিকিউরিটিজের আরেক বিনিয়োগকারী তৌহিদ বলেন, অনেকদিন পর লাভের চেহারা দেখছি। বেশ ভাল লাগছে। শান্তিও পাচ্ছি। নতুন বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজার পর্যালোচনা করছি। কয়েক সপ্তাহ দেখবো, সবকিছু ঠিক থাকলে, সামনে নতুন বিনিয়োগ করবো।

স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ জুলাই পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছিল। ওইদিন রবিবারের মতো পরেরদিন পুঁজিবাজার উত্থান ছিল। এরপরের তিন কার্যদিবস (মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার) উত্থান ধারা অব্যাহত ছিল। উত্থান কারণে স্বস্তিতে ছিলো বিনিয়োগকারীরা। সেই স্বস্তি পরের চার কার্যদিবসের মন্দায় পুঁজিবাজারের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। টানা পতনে ক্রেতার সংখ্যা বহুগুণে হারায়। এরপর গত ছয় কার্যদিবস উত্থানে ফিরে আসলো। উত্থানের পর গত বুধবার পতনে ফিরেছিল পুঁজিবাজার। ওই পতন পরের পাঁচ কার্যদিবস উত্থানে পুঁজিবাজার।

আরও জানা যায়, গতকাল বুধবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৭৬৯ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১৭৯টি এবং কমেছে ১৩৫টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ৬৬টির। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৪ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৫৭ দশমিক ২১ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৩ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ২ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে যথাক্রমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮৩ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ৩৯৮ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে লার্ফাজ-হোল্ডসিমের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন লার্ফাজ-হোল্ডসিম ৯৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো ৭৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ৬৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা ৬০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, ম্যাকসন স্পিনিং ৫১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ইস্টার্ন হাউজিং ৪১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, মালেক স্পিনিং ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ন্যাশনাল পলিমার ৩৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৩৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং ইন্ট্রাকো ২৯ কোটি ৩১ লাক টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।

অপরদিকে সিএসইতে গতকাল বুধবার লেনদেন হয়েছে ৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার ৪২ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০৮টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৫৭টি, কমেছে ৯৯টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৫২টির।

এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১০৭ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৫ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ৬ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৯০ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৬২ দশমিক ৯০ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ৫ দশমিক ১২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩৭২ দশমিক ২৬ পয়েন্ট, ১৩ হাজার ৭০৫ দশমিক ৬১ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৩৮৯ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২০৮ দশমিক ৫৪ পয়েন্টে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন