ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেভেন সিস্টারে আরও পণ্যের প্রবেশাধিকার

রিজওয়ান রাহমান, সভাপতি, ডিসিসিআই

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশ তার প্রতিবেশীর দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশ তার বিপরীত। এই সমস্যা সহজেই কাটিয়ে উঠা সম্ভব। পার্শ্ববর্তী দেশে যেহেতু প্রায় একই সংস্কৃতি ও চাহিদা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ব্যবসায় পরিধি এখানে বাড়ানো সম্ভব। তাতে অর্থ সাশ্রয়ের সঙ্গে সময়ও কম লাগে। পারস্পারিক সম্পর্কও ভালো থাকে।

এ বিষয় বিবেচনা করে দৈনিক আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে ভারত-বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানির ব্যাপারে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ও ইটিবিএল সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিজওয়ান রাহমানকে দুটি লিখিত প্রশ্ন পাঠানো হয়েছিল।

প্রথমটি ‘ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের প্রতিবন্ধকতা কী কী?’ প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ান রাহমান জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সোহার্দ্যপূর্ণ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান। উভয় দেশের মধ্যকার বাণিজ্য বেড়ে প্রায় ১০ বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছেছে। যেখানে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংকের মতে, দু’দেশের মধ্যকার বাণিজ্যসম্পর্ক প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। কিন্তু কিছু শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে রপ্তানি-বাণিজ্য প্রসার করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে ভারতে সহস্রাধিক পণ্য রপ্তানির সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশ মাত্র ২০০-২৫০ পণ্য রপ্তানি করে থাকে।

রিজওয়ান রাহমান আরও বলেন, ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্য বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীরা যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে থাকে তা হলো-
১. বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো পূর্ব আলোচনা ছাড়াই ভারতের দিক থেকে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এতে রপ্তানি পরিকল্পনা কঠিন হয়ে যায়। ভারতীয় কাস্টমস রুলস ২০২০ এর আওতায় বাংলাদেশি অনেক পণ্যকে রুলস অব অরিজিন সংক্রান্ত সাটির্ফিকেশন জটিলতায় পড়তে হয় যদিও বিষয়টি সাফটার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
২. বিভিন্ন পণ্য ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন-বিএসটিআই’র সার্টিফিকেটক স্বীকৃত নয়, যে কারণে দু’দেশের মধ্যে স্যানিটারি এবং ফাইটোস্যানিটারি ইস্যুতে অসামঞ্জস্যতা থেকেই যাচ্ছে।
৩. প্রধান প্রধান স্থলবন্দর যেমন- বেনাপোল, হিলি, ভোমরা ইত্যাদি বন্দরগুলোতে পণ্য সংরক্ষণে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো সুবিধার কারণে।

৪. যদিও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বা সেভেন সিস্টার এলাকাগুলোতে বাংলাদেশের শিল্প ও খাদ্যপণ্যের রপ্তানির অনেক সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশি পণ্যের সীমিত প্রবেশাধিকার রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক নয়। ৫. বাংলাদেশ থেকে পাট রপ্তানিতে প্রতি টন ১৯ টাকা থেকে ৩৫১.৭২ টাকা পর্যন্ত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রদান করতে হয়, যে কারণে ভারত আমাদের প্রধান পাট রপ্তানি বাজার হওয়া সত্ত্বেও সেখানে আমাদের পাট রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে না।

৬. সাফটার আওতায় ভারতের বেশকিছু পণ্য সেনসেটিভ লিস্টে রয়েছে সেগুলোকে এর আওতামুক্ত করতে হবে। যাতে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পায়।

দ্বিতীয় প্রশ্ন ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকারিভাবে কী ধরনের কার্যক্রম প্রয়োজন?” জবাবে ডিসিসিআই সভাপতি লেখেন, দু’দেশের সরকারকে

১. রপ্তানি বৃদ্ধিতে বিদ্যমান অশুল্ক বাধা দূরীকরণ, বন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন, রুল অব অরিজিন সংক্রান্ত জটিলতা এবং অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত এ সকল সমস্যা দূর করতে হবে।

২. ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বা সেভেন সিস্টার এলাকাগুলোতে আরো বেশি মাত্রায় বাংলাদেশ পণ্যের প্রবেশাধিকার এবং উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যর ক্ষেত্রে একটি সমতার পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতকে আন্তরিক ও সহযোগিতাপূর্ণ কাজ না করলে পরিস্থিতি উন্নত হবে না। পারস্পারিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে এসব সমস্যাগুলোর সমাধান আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে প্রত্যাশা করছি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন