দেশের বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী বস্ত্র খাত এবং পোশাকের রফতানি বর্তমানে নিম্নমুখী। খাতটির বিদেশী বিনিয়োগেও এখন দেখা যাচ্ছে ভাটার টান। দেশর ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছর শেষে বস্ত্র-পোশাকে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ প্রবাহ (এফডিআই) ৪২ শতাংশ কমেছে।
বিদেশী বিনিয়োগ প্রবাহ আকর্ষণের দিক থেকে দীর্ঘদিন ধরেই এগিয়ে বস্ত্রেএবং পোশাক খাত। খাতটিতে এফডিআই প্রবাহ হ্রাস পাওয়ার তথ্যে সংশ্লিষ্টদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তারা জানান, সামষ্টিক অর্থনীতির বিচারে এফডিআই প্রবাহ কমে যাওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু খাতটিতে বিদেশী বিনিয়োগ কমে আসার বিষয়টি ইতিবাচক না নেতিবাচক, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে হলে আরো গভীরে গিয়ে খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ দেশের পোশাক শিল্পে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বর্তমানে পর্যাপ্ত। ফলে খাতটির চেয়ে এটির ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ অথবা পশ্চাত্সংযোগ শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগের প্রয়োজন তুলনামূলক বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সর্বশেষ সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে টেক্সটাইল অ্যান্ড ওয়্যারিং খাতে এফডিআই প্রবাহ ছিল ৪৫ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার ডলারে। এই হিসাবে খাতটিতে গত অর্থবছরে এফডিআই প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে ৪২ শতাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়া জাতীয় স্বার্থে অবশ্যই খারাপ। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বা ভার্টিক্যাল সেটআপে কেউ যদি এফডিআই নিয়ে আসে, তা ভালো এবং আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা পোশাক খাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে পেরে ওঠা সম্ভব হবে না। কারণ বেশির ভাগ বিদেশী বিনিয়োগকারী বিদেশী ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে এদেশে বিনিয়োগ করেন। এদিকে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের প্রকল্প চালাতে হচ্ছে ১৩ শতাংশ সুদে ঋণ করে। তাই এখানে শুরুতেই ঝুঁকির মাঝে পড়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বিনিয়োগকারী। তাছাড়া বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা, দক্ষতা সবই স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের তুলনায় বেশি। ফলে পোশাক শিল্পে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ওপর বিদেশী বিনিয়োগের প্রভাবকে ইতিবাচক বলা চলে না।
আনন্দবাজার/এফআইবি