ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুশ্চিন্তা কাটছেনা সুনামগঞ্জের কৃষকদের

অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার হকনগর সুইসগেইট পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির আওতায় এ বছরের বোরো চাষাবাদ । সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সুইসগেইট পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির চরম বেখেয়ালির কারণেই এই বছর উপজেলার সীমান্ত এলাকার অনেকগুলো হাওরের হাজার হাজার হেক্টর বোরো জমি অনাবাদি থাকার আশংঙ্কা স্থানীয় কৃষকদের।বর্তমানে এখানকার কৃষকরা বোরো চারা উৎপাদনের ভরামৌসুমেও পানি পাচ্ছেনা । গত রবিবার(২২ ডিসেম্বর) এলাকাজুড়ে মাইকিং করে ঘোষণা করা হয়- সুইসগেইটের ক্রটি জনিত কারণে এ বছর বোরো চাষাবাদে সেচের পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবেনা। সমিতি কর্তৃপক্ষের এমন ঘোষণায় সীমান্ত এলাকার কৃষকরা এখন ভোগছেন চরম হতাশায় । পানির অভাবে চাষাবাদ বন্ধ থাকলে কৃষকের গোলায় এবার বোরো ফসল উঠবেনা এমন আশঙ্কায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে আছেন চরম বিপাকে ।

সরেজমিনে খোজ নিয়ে এবং স্থানীয় একাধিক কৃষকের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, বোরো মৌসুম শুরুর আগেই ড্রেনে এবং বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় মৌলা নদীর উজানের পানি সরবরাহ করে বোরো চাষাবাদ বর্তমানে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পানি না পেয়ে কৃষকদের বোরো চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ায় এ নিয়ে এলজিইডি ও পানি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মাঝে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে। নানা অজুহাত এবং কারণ দেখিয়ে তারা এখন দায়সারা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে ২০০৪ সালে সীমান্ত এলাকার কৃষকদের বোরো চাষের আওতায় নিয়ে আসতে স্থানীয় সরকার বিভাগ দেড়কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের হকনগর মৌলা নদীতে একটি নান্দনিক সুইসগেইট নির্মাণ করে। কিন্তু সুইসগেইট নির্মিত হওয়ার পর থেকে দোয়ারাবাজার উপজেলার বাঁশতলা, কলোনী, জুমগাঁও, পেকপাড়া, মৌলারপাড়, আলমখালী, নতুন বাঁশতলা, চৌধুরীপাড়াসহ অন্তত ৭/৮টি গ্রামের কৃষকরা ওই নদীর পানি দিয়ে বোরো চাষসহ মৌসুমী সবজি চাষ করে আসছিলেন।

বর্তমানে সমিতির আওতাভুক্ত কৃষক রয়েছেন ৪শ’১৪ জন সদস্য। নিয়ম অনুযায়ী তাদের প্রত্যেককেই প্রতি মাসে ২০ টাকা করে সমিতির তহবিলে জমা দিতে হয়। সমিতি কর্তৃপক্ষ নিয়মিত সঞ্চয়ের টাকা সদস্যদের নিকট থেকে উত্তোলনও করছেন। সদস্যদের সঞ্চয়ের ওই টাকা হতে উপকারভোগী সদস্যদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য ঋণ বিতরণ করার নিয়ম থাকলেও প্রকৃত উপকারভোগীরা ঋণ পাচ্ছে না। এ যাবৎ সমিতি প্রায় ৯লাখ টাকা ঋণও বিতরণ করেছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, সমিতির দায়িত্বশীলদের অনেকেই সিন্ডিকেট করে নিজেদের বলয়ে তাদের খেয়াল খুশি মতো ঋণের টাকা বিতরণ করেছেন। ঋণের টাকা উত্তোলনেও সমিতি কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অন্ত নেই। এছাড়া সমিতির কাছে এ যাবৎ কৃষকরা তাদের সঞ্চিত টাকার কোনো হিসাব-নিকাশ পাচ্ছেন না। অধিকন্তু কৃষকরা আজোবধি সমিতি থেকে কোনো লভ্যাংশের মুখ দেখেনি। দীর্ঘদিন ধরেই সমিতির দায়িত্বশীলদের এমন স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা ও নানা অনিয়ম-দূর্ণীতির কারণে প্রতি বছরই উপকারভোগী কৃষকদের চরম ভোগান্তি এবং সংকটে পড়তে হয়।

কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম এবং দূর্ণীতির অভিযোগ গুলো অস্বীকার করে হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি আব্দুল আহাদ জানান, প্রায় ১লাখ টাকা আমার হাতে আছে, আর বাকী টাকা সমিতির তহবিলে ব্যাংকে জমা আছে। তিনি আরো বলেন, ড্রেন সমস্যা থাকায় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছেনা।সমিতির নানা অনয়িম এবং দূর্ণীতির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মৈত্রেয়ী আচার্য্য বলেন, হকনগর সমিতির অব্যবস্থাপনার ব্যাপারে আমি ইতিপূর্বে অবগত হয়েছি, তবে এর সত্যতা খতিয়ে দেখিনি।

এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা এলজিইডি’র উপসহকারী প্রকৌশলী সাদিরুল ইসলাম জানান, হকনগর সুইচগেটের ড্রেন সংস্কারের ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো চাহিদা পাঠানো হয়নি। জুন মাসের পূর্বে চাহিদা প্রেরণ করা হলে হয়তো এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারতো।

আনন্দবাজার/এফআইবি

 

সংবাদটি শেয়ার করুন