ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্রেতার চাপে পুঁজিবাজার উত্থান

পুঁজিবাজার উত্থানে স্বস্তিতে বিনিয়োগকারী
  • সেবায় শতভাগ কোম্পানির দর উত্থান
  • সেরা ডিএসইতে বেক্সিমকো, সিএসইতে বেক্সিমকো ফার্মা

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সব ধরনের সূচক উত্থান হয়েছে। এদিনে উভয় স্টকের লেনদেন বেড়েছে। এদিন দুই স্টকের অধিকাংশ কোম্পানি শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে।

এদিকে, গত রবিবার পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। ওইদিন বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতা বহুগুনে বেড়েছিল। ফলে শেয়ার ক্রেতার চাপের পড়ে হিড়িক। গত রবিবারের মতো গতকাল সোমবারেও উত্থান অব্যাহত ছিল। এদিনেও বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতা চাপ কিছুটা বেশি ছিল।

স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার ডিএসইর অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এর মধ্যে সেবা আবাসন খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান হয়েছে। এদিন সিরামিক ৮০ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং ৭৪ শতাংশ, ভ্রমন অবসর ৭৫ শতাংশ, আইটি ৭৩ শতাংশ, সিমেন্ট ৭১ শতাংশ, খাদ্য আনুষঙ্গিক ৭১ শতাংশ, বস্ত্র ৬৯ শতাংশ, বিবিধ ৬৭ শতাংশ, টেলিকম ৬৭ শতাংশ, ওষুধ রসায়ন ৬৬ শতাংশ, জ্বালানি শক্তি ৫৭ শতাংশ এবং নন ব্যাংকিং আর্থিক খাতের ৫৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। অপরদিক এদিন বিমা ৮০ শতাংশ ও পাট খাতের ৬৭ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। এছাড়া এদিন ব্যাংক, ফান্ড ও পেপার খাতের শেয়ার দরে উত্থান পতন মিশ্রাবস্থা ছিল। খাতগুলোর শেয়ার দরে উত্থান পতনের একই চিত্র ছিল পুঁজিবাজার সিএসইতে।

গত দুই কার্যদিবস (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) বড় পতনের পরদিন দুই কার্যদিবস (রবিবার ও সোমবার) উত্থান হয়েছে পুঁজিবাজার। এদিন (সোমবার) ডিএসই ও সিএসইর সব ধরনের সূচক উত্থান হয়েছে। আগের কার্যদিবস থেকে এদিন দুই স্টকে লেনদেন বেড়েছে। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হয় ৯২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কার্যদিবস রবিবার লেনদেন হয়েছিল ৫৬৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২০৩টি বা ৫৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, কমেছে ১০২টি বা ২৬ দশমিক ৭০ এবং পরিবর্তন হয়নি ৭৭টির। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩০ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৬৩ দশমিক ৯৯ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ১০ দশমিক ৬১ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৭ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ২০৪ দশমিক ১৮ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ৩৪৭ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন বেক্সিমকো ৪৪ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফরচুন সুজ ৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, সোনালি পেপার ৩৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং ২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা, স্কয়ার টেক্সটাইল ২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, জেএমআই হসপিটাল ২০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, কেডিএস ২০ কোটি ৭ লাখ টাকা, সাইনপুকুর সিরামিকস ১৮ কোটি ৫৩ রাখ টাকা, এস্কয়ার নিট কম্পোজিট ১৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা টাকা এবং মতিন স্পিনিং ১৭ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।

সিএসইতে গতকাল সোমবার লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস রবিবার লেনদেন হয়েছিল ১২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৮৬টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৭৫টি বা ৬১ দশমিক ১৯ শতাংশ, কমেছে ৪টি বা ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং পরিবর্তন হয়নি ৭২টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৩৬ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ১১২ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে।

এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ৬ দশমিক ৫২ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৪২ দশমিক ৭০ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৮১ দশমিক ২৬ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ১০ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩২৭ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ২৫৪ দশমিক ৯১ পয়েন্টে, ১০ হাজার ৮৫১ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ১৪৩ দশমিক ২৩ পয়েন্টে।

এদিন সিএসইতে বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন বেক্সিমকো ফার্মা ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো ৬৯ লাখ টাকা, সাইফ পাওয়ার ৬৭ লাখ টাকা, জেএমআই হসপিটাল ৬০ লাখ টাকা, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স ৪৩ লাখ টাকা, রবি ৩৯ লাখ টাকা, জিপি ৩৯ লাখ টাকা, হা-ওয়েল টেক্সটাইল ৩৩ লাখ টাকা এবং ফু-ওয়াং ফুড ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টারা বলছেন, বিভিন্ন সমস্যায় ঈদের (ঈদুল আযহা) পর থেকেই পুঁজিবাজার নিম্নমুখী। ঈদের পরে টানা ৯ কার্যদিবস ধরে পুঁজিবাজার পতন। সেই পতন হঠাৎ করেই দুই কার্যদিবস সামান্য উত্থানে ফিরেছিল। সেই উত্থান ধরে রাখতে পারলো না। ফের নেমে আসলো পুঁজিবাজারে পতন। দীর্ঘ পতন পর হঠাৎ উত্থানে আসায় কিছু শান্তি পেয়েছিল বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বিদায়ী সপ্তাহে শেষ দুই কার্যদিবসে (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) বড় ধরনের পতনে তাদের সেই শান্তিতে বড় ধরনের ছেদ পড়েছিল। এ ধরনের পতন বিষয়টি চরমভাবে ভাবিয়ে তুলেছে বিএসইসিকে। ফলে গত বৃহস্পতিবারে পতন থেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বাঁচাতে শেয়ার দর পতনের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ঠিক তা পরেরদিন গত রবিবার বড় উত্থান হয়েছিল পুঁজিবাজারে। সেই উত্থান ধারা গতকাল সোমবারেও অব্যাহত ছিল। ফ্লোর প্রাইস নির্ধারন পরের দুইদিনের এ ধরনের উত্থানকে স্বাগত জানালেন সংশ্লিষ্টারা।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন