দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল মঙ্গলবার লেনদেন কমে ৩শ কোটি টাকার ঘরে অবস্থান করেছে। অপরদিক চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) এদিন লেনদেন কমে ১১ কোটির ঘরে চলে এসেছে। এদিন উভয় স্টকের সব ধরনের সূচক পতন হয়। এদিন দুই স্টকের ৮৮ ভাগ কোম্পানি শেয়ার ও ইউনিট দর পতন হয়। এদিন সব খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। বিভিন্ন মহলের শত চেষ্টায় পুঁজিবাজার উত্থানে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে অনেকেই বলছেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে পুঁজিবাজারে। গত তিনদিন ধরে টানা দরপতন অব্যাহত রয়েছে।
পতন পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে মতিঝিলের ১৫টি সিকিউরিটিজ হাউজের কর্মকর্তারা বলেন, এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। লোডশেডিং ঘোষণার দিন গত সোমবার ডিএসইতে বড় পতন শুরু হয়। সেই পতন গতকাল মঙ্গলবারও অব্যাহত ছিল। ঈদের পর থেকে পুঁজিবাজার মন্দা থাকলেও গত দুই কার্যদিবস ধরে তা বড় ধরনের পতন হয়। এই দুইদিন প্রায় ৯০ ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। লেনদেনও কমেছে। গতকাল মঙ্গলবারের লেনদেন সাড়ে ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন হিসেবে বিবেচ্য হয়। এ ধরনের লেনদেন পুঁজিবাজারের জন্য মন্দা বার্তা বলে মনে করছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, রেগুলেটরদের নানান উন্নয়নে পর কয়েকদিন পুঁজিবাজার ভাল দেখালে পরের কয়েক দিন মন্দায় থাকে। উত্থান-পতনের এ বৃত্তে পুঁজি হারানোর রেকর্ড বেশি। রেগুলেটরদের কোন উন্নয়নেই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পাচ্ছে না পুঁজিবাজার। ঘুরে ফিরে পতন দীর্ঘ হওয়ায় অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি। অবশ্য মাঝে মাঝে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কর্তৃপক্ষদের বিভিন্ন আশ্বাসে হঠাৎ করেই পুঁজিবাজার ভালো হয়। সেই আশ্বাসে কয়েক কার্যদিবস ঘুরেও দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। কিন্তু দিন বদলে ঘুরেফিরে পুঁজিবাজার পতনে গড়াগড়ি। ঈদের পর থেকেই পুঁজিবাজার মন্দা চলছে। এর মধ্যে যোগ হয় গত দুই কার্যদিবসের (সোমবার ও মঙ্গলবার) বড় ধরনের পতন। এই পতন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ প্রতি হতাশা আরো বাড়ালো বিনিয়োগকারীরা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল মঙ্গলবার দুই স্টকের ৮৮ ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর পতন হয়। এর মধ্যে ডিএসইর ৯০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং সিএসইর ৮৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দরে পতন হয়। অপরদিকে ডিএসইর ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং সিএসইর ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর উত্থান হয়। আগের কার্যদিবস সোমবার দুই স্টকের ৯০ ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর পতন হয়েছিল। এর মধ্যে ডিএসইর ৯৩ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং সিএসইর ৮৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দরে পতন হয়েছিল। অপরদিকে ডিএসইর ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সিএসইর ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর উত্থান হয়েছিল।
গতকাল মঙ্গলবার ডিএসইতে এদিন সব খাতের কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। এর মধ্যে সিরামিক, পাট, পেপার, সেবা আবাসন এবং টেলিকম খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। এছাড়া বস্ত্র ৯৫ শতাংশ, খাদ্য আনুষঙ্গিক ৯৫ শতাংশ, বিমা ৯৩ শতাংশ, আইটি ৯১ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং ৯০ শতাংশ, বিবিধ ৮৭ শতাংশ, জ্বালানি শক্তি ৮৭ শতাংশ, সিমেন্ট ৮৫ শতাংশ, ওষুধ রসায়ন ৮৪ শতাংশ, চামড়া ৮৩ শতাংশ, ফান্ড ৭৫ শতাংশ, ভ্রমন অবসর ৭৫ শতাংশ, নন ব্যাংকিং আর্থিক ৭৪ শতাংশ এবং ব্যাংক খাতের ৫৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। শেয়ার দর পতনের একই চিত্র ছিল পুঁজিবাজার সিএসইতে।
আগের কার্যদিবস গত সোমবার ডিএসইতে এদিন সব খাতের কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছিল। এর মধ্যে বিমা, জ্বালানি শক্তি, আইটি, সিমেন্ট, পাট, পেপার, সেবা আবাসন এবং টেলিকম খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার শেয়ার দর পতন হয়েছে। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং ৯৭ শতাংশ, বস্ত্র ৯৫ শতাংশ, খাদ্য আনুষঙ্গিক ৯৫ শতাংশ, বিবিধ ৯৩ শতাংশ, ওষুধ রসায়ন ৯০ শতাংশ, চামড়া ৮৩ শতাংশ, সিরামিক ৮০ শতাংশ, নন ব্যাংকিং আর্থিক ৭৮ শতাংশ, ব্যাংক ৭৮ শতাংশ, ফান্ড ৭৫ শতাংশ এবং ভ্রমন অবসর খাতের ৭৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছিল। শেয়ার দর পতনের একই চিত্র ছিল পুঁজিবাজার সিএসইতে।
ডিএসইতে গতকাল মঙ্গলবার লেনদেন হয় ৩১৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২১টির, কমেছে ৩৪৪টির এবং পরিবর্তন হয়নি ১৭টির। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৫৩ দশমিক ১৭ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ২২ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ১১ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ২১৩ দশমিক ২৩ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ৩৪৮ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্টে।
আগের কার্যদিবস গত সোমবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৫১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১২টির, কমেছে ৩৫৮টির এবং পরিবর্তন হয়নি ১২টির। সোমবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৭ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট কমে হয়েছিল ৬ হাজার ২১৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্টে। এছাড়া ওইদিন ডিএসই-৩০ সূচক ৩১ দশমিক ৭২ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ১৬ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমেছিল।
অপর পুঁজিবাজার সিএসইতে গতকাল মঙ্গলবার লেনদেন হয় ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৮৬টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৯টির, কমেছে ২৪৬টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২১টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২১৪ দশমিক ১২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬৬ দশমিক ৮১ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ১৫ দশমিক ১৬ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১০৫ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ১২৯ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ১৪ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩২৩ দশমিক ৯১ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ২৯৯ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্টে, ১০ হাজার ৮২৪ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ১৪০ দশমিক ৬১ পয়েন্টে।
আগের কার্যদিবস গত সোমবার সিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৯৭টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৭টির, কমেছে ২৬০টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২০টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৪২ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছিল ১৮ হাজার ২৮০ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। এছাড়া ওইদিন সিএসই-৫০ সূচক ১৮ দশমিক ৪০ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১৭৪ দশমিক ১৪ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ১৪৬ দশমিক ১১ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ১৪ দশমিক ৭২ পয়েন্ট কমেছিল।
আনন্দবাজার/টি এস পি