করোনা মহামারির কারণে গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বড় ধাক্কা খেয়েছিলো। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার প্রক্রিয়া ভালোভাবে শুরু না হতেই রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। সে কারণে সৃষ্টি হয় নতুন করে ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার। এর ফলে পুরো পৃথিবীই এক গভীরতর সংকটে পড়েছে।
সোমবার কলকাতায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচিত্রা ভবনে ‘রবীন্দ্রনাথের লোকহিত চিন্তা ও সমকালীন সমাজ বাস্তবতা’ শিরোনামে বিশেষ বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
ড. আতিউর রহমান বলেন, ঊনবিংশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধে এবং বিংশ শতাব্দির শুরুর ভাগে যখন রবীন্দ্রনাথ লোকহিত নিয়ে ভেবেছেন এবং সেই ভাবনার জায়গা থেকে নানামুখী সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণমুখী উদ্যোগ নিয়েছেন তখনও বিশ্ব বহুমুখী পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো। দুটি শতাব্দির সম্মিলন কালে দুটি বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে পশ্চিমের পৃথিবীর উন্নত জীবনাচরণ এবং ভারতবর্ষে অভাব-অনটনের সমাজ-এ দুটোকেই খুব কাছে থেকে গভীরভাবে দেখেছেন রবীন্দ্রনাথ। তাই তাঁর সে সময়কার ভাবনা ও কর্মগুলোতে একই সঙ্গে বৈশ্বিক ও স্থানিক অভিজ্ঞতার সংশ্লেষ দেখা যায়। আজকের বৈশ্বিক সংকটের সময়ও তাঁর সেই চিন্তা-ভাবনাগুলো আগের মতোই প্রাসঙ্গিক রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, আজকের উন্নয়ন গবেষক ও নীতি-নির্ধারকরা এসডিজি বাস্তবায়নের মূলমন্ত্র হিসেবে বলছেন “কাউকে পেছনে রেখে এগুনো যাবে না।” রবীন্দ্রনাথও বলে গেছেন “পশ্চাতে রেখেছো যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।” অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ যেভাবে সমাজ ও লোকহিত নিয়ে ভেবেছেন তা ছিল তাঁর সময়ের প্রায় শতবর্ষ পরের সঙ্কট ও সম্ভাবনার মুখোমুখি হওয়ার যোগ্য। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সংস্কৃতির মতো যে বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের জীবনকে স্পর্শ করে সেগুলো নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ও উদ্যোগগুলো গভীর অন্তর্দৃষ্টিমূলক এবং সুদূরপ্রসারী ছিলো বলে মনে করেন ড. আতিউর রহমান।
তিনি আরও বলেন, খুব কাছে থেকে সাধারণ মানুষকে দেখে তাদের দুঃখ-দৈন্যগুলোকে গভীরভাবে অনুভব করে তা নিয়ে লেখালেখি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলেই সমকালীন উন্নয়ন ভাবনাতেও রবীন্দ্রনাথ একই রকম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছেন। রবীন্দ্র চেতনায় অনুপ্রাণিত বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন কৌশলও ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণধর্মী।
আনন্দবাজার/টি এস পি