মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গাছের কথা---

চিরল পাতার তেঁতুল বন

চিরল পাতার তেঁতুল বন

চিরল পাতার তেঁতুল গাছ। বাতাসের দোলে খুব সহজের নেচে উঠে। সবুজ ঝিরি পাতার নাচে কৃষকের ক্লান্ত মন যেন সতেজ হয়ে উঠে। তেঁতুল বনে জোসনার আলিঙ্গন যেন নববধূর হাসিমাখা মুখ। পাকা বা কাঁচা তেঁতুল জিভে জল আনতে বাধ্য। রূপ ছড়ানো তেঁতুল বনে ভূতের ভয়ও বেশ। সাঁঝ নামলেই গা ছমছমে ভাব। তেঁতুলের লোভে আশেপাশে ঘুরতে থাকা শিশুগুলো সূর্য ডুবলেই আর দেখা যায় না। আঁধার রাতে বাঁদুরের ডানা ঝাপটানি যেন নূপুর পায়ে পেত্নি নাচে ডালে ডালে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দরগপাড়া এলাকায় তেঁতুল বনটির এমনই রূপ। দিনরাতের ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টায় তেঁতুল বনটি। এটি যে কনো পুরানো তার নিদিষ্ট কোন বয়স পাওয়া যায় না। আশেপাশের বয়স্ক মানুষরাও তাদের দাদার মুখের শোনা গল্পের স্মৃতি হাতড়েও তেঁতুল বনের ওই রূপটি উদ্ধার করতে পেরেছেন যা তারা এখন দেখছেন। কেউ বলে ৩০০ বছরের আবার কেউ বলে ৪০০ বছরের পুরানো। তেঁতুলের ওই বনটি ঘিরে আছে একটি মাজার। মানুষের কাছে ওই মাজারটি জঙ্গলি পীরের মাজার হিসেবে পরিচিত। ওই মাজারটির বয়সও বনটির মতোই মানুষের কাছে অজানা।

কাজল রেখা (৮২)। পৈত্রিক বাড়ি তেঁতুল বনটির ধারেই। সম্প্রতি সময়ে পাশের গ্রাম খারিজাগাঁতি মোল্লাপাড়ায় ছেলের সঙ্গে বাস করেন তিনি। কাজল রেখা জানান, তিনি ছোট থেকেই গাছগুলোকে এমন দেখছেন। তার দাদীরা গল্পে গল্পে যেমন গাছের কথা বলে গেছেন এখনও তেমনই আছে। তবে কিছুটা সতেজতা কমেছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুনঃ  পর্দা উঠেছে বাণিজ্য মেলার, বেড়েছে টিকিটের মূল্য

কাজল রেখা বলেন, ছোট বেলায় দেখেছি পুরো জায়গাটা জঙ্গলে ভর্তি ছিল। কোনো বাড়িঘর ছিল না দরগাপাড়াতে। জঙ্গলে ভয়ানক জীবজন্তুর বসবাস। শোন যায় ওই জঙ্গলে নাকি বাঘ থাকতো। এইজন্য এই জায়গাকে বাঘের জঙ্গল বলা হতো। আস্তে আস্তে মানুষ বাস করতে শুরু করল। ধীরে ধীরে জঙ্গলের আয়তন কমতে শুরু করলো। এখন সব মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৮টি তেঁতুল গাছ। গাছগুলোকে ঘিরে আছে অনেক রকমের ভৌতিক গল্প।

দরগাপাড়া গ্রামের ফিরোজা বেগম (৭৩) বলেন, প্রতিটি তেঁতুল গাছের গোড়ায় পাওয়া যেতো মাটির ছোট ছোট ঘোড়া, পুতুল, হাঁড়ি, খেলনা। এখনো পাওয়া যায় তবে মাটির ঘোড়াটা বেশি পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলো ভাঙা ভাঙা। এইজন্য অনেক দিন আগে সেগুলোকে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে।

ফিরোজার মেয়ে তাজি(৩২) বলেন, গ্রামের মানুষের মধ্যে বনটিকে ঘিরে নানান ভীতি কাজ করে। গাছগুলোর ডালপালা বা গাছ কোনোটাই কাটার সাহস দেখায় না কেউ। যদি কেউ কাটে তাহলে না কি তার ক্ষতি হয়ে যায়। যে যাই বলুক। তেঁতুল বনের মন মাতানো রূপ কিন্তু সত্যিই অসাধারণ। হোক সেটা দিনে বা জোসনা রাতে। আর এ রূপের দেখা পাওয়া যায় ভয়কে জয় করার পর।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন