বাবার সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানোর মাধ্যমে নানা উৎসাহ উদ্দীপনায় উদযাপন করা হয় বাবা দিবস। বাবা হলেন সন্তানের এক অমূল্য ঠিকানা। বাবা চির অম্লান, চিরন্তন। বাবা এক অনন্য নির্ভরতার নাম। বাবা হচ্ছে নির্ভরতার এক সীমাহীন আকাশ। বাবা হলেন বটবৃক্ষের এক নির্মোহ শান্ত ছায়া। বাবা নিজেই নিজের তুলনা। রাশভারী চেহারার আড়ালে যে কোমল হৃদয় তাই বাবা। শাসনের আড়ালে লুকিয়ে থাকে বাবার এক বুক ভালোবাসা সন্তানের জন্য । সন্তানের সুখের জন্য বাবা নিজের সমস্ত কিছু অকাতরে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকেন সর্বদা। সন্তানের মঙ্গলের জন্য যিনি নির্দ্বিধায় সব করতে পারেন তিনি বাবা।
‘পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিতাহি পরমংতপঃ
প্রিতরী প্রিতিমা পন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা-
সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ এই মন্ত্রের মাধ্যমে বাবাকে স্বর্গ গানে সেবা করে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন- পিতা মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও দরজাটা নষ্ট করে ফেলতে পার। নতুবা রক্ষা করতে পারো। সুরা নিসার ৩৬ নম্বর আয়াতে, বনী ইসরাইলের ২৪ নম্বর আয়াতে পিতা মাতার খেদমত করার নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ পাক।
মা দিবস কয়েক শো বছর ধরে পালন করা হলেও বাবা দিবস সে তুলনায় নতুন বলা চলে। বাবা দিবস কবে কোথায় চালু হয়েছিল তা নিয়ে আমাদের অনেকেরই আগ্রহ আছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে বাবা দিবস পালন করলেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশাল অংশ বাবা দিবস পালন করে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার। বাবা দিবস এর উৎপত্তি নিয়ে বেশ কিছু গল্প বা কাহিনি প্রচলিত আছে। এ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা গুলির মধ্যে সেনোরা লুইস স্মার্ট এর কাহিনিটা বেশি গ্রহণযোগ্য। ওয়াশিংটনের সেনোরা লুইস স্মার্ট এর মাধ্যমেই বাবা দিবসের প্রচলন শুরু হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাল মিলিয়ে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালন করা হয়।
উইলিয়াম স্মার্ট ছিলেন একজন সৈনিক। তার ষষ্ঠ সন্তান সেনোরা লুইস স্মার্ট এর জন্মের সময় তা মা অর্থাৎ উইলিয়াম স্মার্ট এর স্ত্রী মারা যায়। অনেক কষ্টে ছয় সন্তান কে মানুষ করেন উইলিয়াম স্মার্ট। বাবার এই ত্যাগ আর কষ্টের কথা ভুলে যাননি সেনোরা লুইস স্মার্ট। ১৯০৯ সালে সেনোরা গীর্জায় একটা অনুষ্ঠানে মা দিবসের কথা জানতে পারেন। তার বাবার কষ্টের কথা ভেবে তিনি বাবাদের জন্য একটি দিবসের কথা চিন্তা করেন। সেনোরা প্রম এলাকার ধর্ম যাজকদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করেন। ধর্ম যাজকগণ তার সাথে একমত পোষণ করেন। ওয়াশিংটনে ১৯০৯ সালের পাঁচ জুন ধর্ম যাজকদের কাছে ১৯ জুন বাবা দিবস পালনের আবেদন জানান সেনোরা। সময় কম থাকায় ১৯০৯ সালে শুধুমাত্র ওয়াশিংটনে ১৯ জুন বাবা দিবস পালন করা হয়। সম্ভবত ১৯১০ সালের ১৯ জুন প্রথম বাবা দিবস পালন করা হয় অনানুষ্ঠানিক ভাবে।
১৯১৩ সালো যুক্তরাষ্ট্রের সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষনার বিল তোলা হয়। ১৯১৬ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বিলটি অনুমোদন করেন। সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন রাষ্ট্রীয়ভাবে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবাদিবস বলে ঘোষণা দেন। এর ছয় বছর পরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এ বিষয়টি কে আইনে পরিণত করেন। সেই থেকে বাবা দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে।
মেক্সিকো তে বাবা দিবস বা ডিয়া ডেল পেড্রো উদযাপিত হয় জুন মাসের তৃতীয় রবিবার। এদিন মেক্সিকো সিটিতে ক্যানেরা ডিয়া ডেল পেড্রো নামক দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। বাবা দের সাথে সন্তানেরা এই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। নেপালে বাবা দিবসে সন্তানরা বাবা মা কে মিষ্টি খাওয়ায়। এবং বাবা মা এর কাছ থেকে আশীর্বাদ নেয় । যাদের বাবা মা থাকে না তারা বাবা মার সমাধিতে গিয়ে বাবামাকে শ্রদ্ধা জানায়, স্মরণ করে। ফ্রান্সে বাবা দিবস একটি ঐতিহ্যগত ক্যাথলিক উৎসব। ফ্রান্সে বাবা জীবিত থাকলে তাকে লাল গোলাপ এবং মৃত হলে সাদা গোলাপ দেওয়া হয় সমাধিতে।
মূলত বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা প্রকাশের জন্যই দিনটিকে উৎসর্গ করা হয়। বাবার স্নেহ ভালবাসা অনুভব অনুভূতি ত্যাগ তিতীক্ষার দাম দিতে হবে প্রতিটি সন্তানকে। তবেই বাবা দিবস পালনের সার্থকতা। শত দৈন্যতা, বাধা বিপত্তি সব উপেক্ষা করে বাবা চায় তার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। সকল বাবার প্রতি বাবা দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা। সকল সন্তান যেন বাবার পড়ন্ত বেলায় যত্ন নেয় শ্রদ্ধা ভালোবাসায় বাবা দিবসে এই প্রত্যাশা।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ
আনন্দবাজার/শহক