রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হেঁটে হেঁটে চা বিক্রি ২৫ বছর

হেঁটে হেঁটে চা বিক্রি ২৫ বছর
  • ভাগ্যে জোটেনি সরকারি সুবিধা

এক হাতে চায়ের ফ্লাক্স। আরেক হাতে দুটো ব্যাগ। ব্যাগের ভেতরে গুটিকয়েক সিংগাড়া আর পানির বোতল। কখনো রাস্তার এধারে কখনও বা ওধারে। চায়ের কাপ কাস্টমারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ৫ টাকা নিয়ে ছুটছেন অন্য কোনো ক্রেতার খোঁজে। এভাবেই ২৫ বছর ধরে চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন সাপাহার উপজেলার জয়পুর পালপাড়া গ্রামের রঘুনাথ মহন্ত (ঠাকুর)। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ৫৫ বছর বয়সী রঘুনাথের ভাগ্যে আজও জোটেনি সরকারি কোনো সহায়তা! রোদ, ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করেই প্রতিদিন চলে চা বিক্রি। সেই আয়েই বয়ে নিয়ে চলেন জীবনের নৌকা।

একান্ত আলাপকালে রঘুনাথ ঠাকুর দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান, ১৯৭১ সালে তিনি জন্মগ্রহন করেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার ছাতিলানি গ্রামে। তার বাবা স্বর্গীয় মঙ্গল মহন্ত। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে রঘুনাথ মেজো। সাংসারিক কারণে লেখাপড়া করা হয়ে ওঠেনি তেমন। আগে থেকেই তার ভাইয়েরা সাপাহারে এসে মোটরসাইকেল মেরামতের কাজ করতেন। সেই সুবাদে ১৯৮৫ সালে তিনিও সাপাহারে চলে আসেন।

স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য রঘুনাথ ভোটার হন সদর ইউনিয়নের। আজ থেকে ২৬ বছর আগে বিয়ে করেন উপজেলার রোদগ্রামে। তাদের ঘরে এই ২৬ বছরে জন্ম নেয় এক ছেলে ও এক মেয়ে। অনেক কষ্টে মেয়েকে বিয়ে দেন। ছেলের বয়স ১২ বছর। লেখাপড়া করছে স্থানীয় একটি স্কুলে।

প্রাথমিক অবস্থায় প্রায় ২৫ বছর আগে সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ছোট একটি টিনশেডে চায়ের দোকান দেন। কিন্তু বিধিবাম! কিছুদিন পরেই অবৈধ স্থাপনা হিসেবে ভেঙে দেওয়া হয় দোকান। তারপর থেকেই হাতে তুলে নেন চায়ের ফ্লাক্স। হয়ে যান ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা। সাথে থাকে বাড়িতে তৈরি করা সিংগাড়া। এভাবেই প্রতিদিন রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সংসার চালানোর তাগিদে চলতে থাকে অবিশ্রান্ত পথচলা।

আরও পড়ুনঃ  আফগানিস্তানে বন্যায় ৭০ জন নিহত

প্রতিদিন ৫ থেকে ৬শ’ টাকার চা সিংগাড়া বিক্রি করেন রঘুনাথ। এতে লাভ থাকে ২ থেকে ৩শ’ টাকা। যা দিয়ে সংসার চালানো ছেলের লেখাপড়ার যোগান দিতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। এছাড়াও বাজারের দ্রব্যমূল্য প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে কিন্তু বাড়েনি তার চায়ের দাম। যার ফলে বর্তমান সময়ে চা বিক্রি করে অনেকটাই মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাকে।

আক্ষেপের সুরে রঘুনাথ বলেন, ‘প্রতিদিন পায়ে হেঁটে পুরো সদরে চা বিক্রি করি। যা লাভ হয় তা দিয়ে সংসার চালানোটাই দুষ্কর হয়ে পড়ে। কয়েকবার স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্যের কাছে ধর্ণা দিয়েছি সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমার ভাগ্যে কোনো সুযোগ সুবিধা জোটেনি। তবে একবার শুধু ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড পেয়েছিলাম। তারপর থেকে আর কোনো সুযোগ হয়নি।

মহামারিকালে কীভাবে সংসার চলেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাকালে লকডাউন থাকার ফলে মানুষজন বাইরে থাকতে পারতো না। তারপরেও কিছু কিছু দোকান খোলা থাকতো। পেটের দায়ে অনেকটা চোরের মতো সেসব দোকানে চা বিক্রি করতাম। এতে একশ বা দুশ টাকা কেনাবেচা হতো। যা দিয়ে হয়তো কোনো বেলা খেয়ে, কোনো বেলা না খেয়ে চলতে হয়েছে। ভগবানের আশীর্বাদে যতদিন দেহে শক্তি আছে ততদিন না হয় এভাবে চলবে কিন্তু যখন বয়স বেশি হয়ে যাবে তখন কী অবস্থা হবে সেটা নিয়েই সারাক্ষণ ভাবি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন