রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উপমহাদেশে প্রমিত দিন পঞ্জিকা

উপমহাদেশে প্রমিত দিন পঞ্জিকা

অবদান মেঘনাদ সাহার—

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু রকমের অবৈজ্ঞানিক পঞ্জিকা যুগ যুগ ধরে প্রচলিত ছিল। রাষ্ট্রীয় কাজে সমস্যা হওয়ায় ভারত সরকার স্বাধীনতার পর ১৯৫২ সালে এসব পঞ্জিকা সংস্কারে উদ্যোগ নেয়। ভারতে একটিমাত্র বৈজ্ঞানিক পঞ্জিকা প্রচলনের জন্য সরকারের বৈজ্ঞানিক ও শিল্পায়ন গবেষণা কাউন্সিলের অধীনে পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের জনক মেঘনাদ সাহাকে করা হয় সভাপতি। কমিটির উদ্যোগে গোটা ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচলিত প্রায় তিরিশটি পঞ্জিকা সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন ধর্মের, সংস্কৃতির ও রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতিফলন ছিল এসব দিনপঞ্জিকাতে।

সংগ্রহ করা এসব পঞ্জিকাকে বিচার বিশ্লেষণ করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রমিত দিন-পঞ্জিকা তৈরির দুরূহ কাজ হাতে নেন মেঘনাদ সাহা। বিভিন্ন অঞ্চলের ভাবাবেগও মাথায় রাখতে হয়। শেষ অবধি অভিন্ন বৈজ্ঞানিক পঞ্জিকা তৈরির কাজ সফলভাবে সম্পাদনা করেছিলেন মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বাধীন কমিটি। পঞ্জিকাকে শকাব্দ বা শক সাল হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যা ঐতিহাসিক পঞ্জিকা সাল বা বর্ষসংখ্যা গণনা পদ্ধতি।

পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল শকাব্দ ভারতের জাতীয় বর্ষপঞ্জি হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। বছর বসন্তকালীন বিষুব বা মহাবিষুবের দিন থেকে শুরু হওয়া উচিত। যা মোটামুটি ভাবে ২১ মার্চ। অধিবর্ষ ছাড়া বাকি বছরগুলো ৩৬৫ দিনের হবে। আর অধিবর্ষ হবে ৩৬৬ দিনের। শকাব্দের সঙ্গে ৭৮ যোগ করে যদি সেটি চার দিয়ে বিভাজ্য হয় তবে তাকে অধিবর্ষ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এসব প্রস্তাবনাসহ সেই কমিটি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল তার মুখবন্ধ লিখেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু।

আরও পড়ুনঃ  পোশাক রফতানিতে ১% নগদ প্রণোদনা

মেঘনাদের হাত দিয়ে সংস্কার হওয়া ভারতীয় বর্ষপঞ্জি ভারত ছাড়াও উপমহাদেশের নানা দেশে ব্যবহার হয়। বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ অনুসরণ করে। সাহা এই পঞ্জিকে সারা পৃথিবীর বর্ষপঞ্জি হিসাবে প্রচলন করতে আগ্রহী ছিলেন। পরিকল্পনা মতো জাতিসংঘের কাছে প্রস্তাবও দেয়া হয়। ১৯৫৪ সালে জেনেভায় আয়োজিত অধিবেশনে উপস্থাপিত হয়। তবে ইহুদি সম্প্রদায়ের কিছু ব্যক্তি ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে সহমত দিতে চাননি। সে সময় সাহা ক্ষোভ প্রকাশ আইনস্টাইনকে চিঠি লিখেছিলেন-

‘ডারউইন-আইনস্টাইনের যুগে দাঁড়িয়ে যদি মহাবিশ্বের সৃষ্টি আজ থেকে পাঁচ হাজার সাতশ বছর আগে জলবিষুবের দিনে হয়েছে বলে শুনতে হয় তবে তার থেকে অযৌক্তিক আর কিছুই হতে পারে না। উক্ত তারিখটি ইহুদিদের বিশেষ কোনো ধর্মীয় ঘটনার সাক্ষ্য বহন তো করেই না, এমনকি কোনো প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনো একটি বিশেষ অঞ্চলের কোনো ইতিহাসকেও ইঙ্গিত করে না।’

সূত্র: বিশ্বখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানীরা- নিয়ন মতিয়ুল

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন