শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘অমর প্রেমে’ সোহেল-রওশন

‘অমর প্রেমে’ সোহেল-রওশন

প্রধানমন্ত্রী খোজ খবরে নেয়ায় আবেগে আপ্লুত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করা রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সোহেল মিয়া। ২০০৬ সালের মাঝামাঝিতে দশ টাকার নোটে লেখা নাম্বারে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের গুজিয়াম টানপাড়া গ্রামের রওশন আরার সাথে। প্রতিদিনের কথোপকথনে ঘটে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক। মেয়েটি প্রাথমিক পর্যায়েই তার প্রেমিককে জানিয়েছিল, সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তারপরও ভালোবাসার মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে পড়েন তারা।

পরে ২০০৭ সালে পরিবারের অমতে বিয়ে করেন জন্মসূত্রেই দু-পা বিকলাঙ্গ রওশন আরাকে। সেই থেকে পিঠে চড়িয়ে সংসারের কাজ, এখানে সেখানে যাওয়া, ঘুরে বেড়ানো আর স্ত্রীর সকল দায়িত্ব পালন করে চলেছেন ১৪ বছর ধরে। এ যেন ভালোবাসার এক অনন্য নিদর্শন সোহেল-রওশন দম্পতির মধ্যে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসককে সার্বিক খোঁজ খবর নিয়ে প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ে অবহিত করার নির্দেশ দিলে গত বুধবার বিকেলে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান হাজির হন সেই দম্পতির কাছে। এসময় তিনি ফুল মিষ্টি ও ছোট মেয়েকে চকলেট তুলে দেন। ইউএনওকে দেখে ঐ দম্পতি আবেগআপ্লুত হয়ে পরে। প্রধানমন্ত্রী তাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন জেনে কৃতজ্ঞতা জানান রওশন দম্পত্তি।

এসময় এই পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন জেলা প্রশাসক এনামুল হক। তিনি যে কোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। রওশন দম্পতি বলেন, আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের খোঁজ নিয়েছেন। ইউএনও স্যার বলেছেন আমাকে ঘরবাড়ি সব করে দেবেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। আমি আমার স্বামী একবারের জন্য হলেও প্রধানমন্ত্রীর পায়ে সালাম করতে চাই।

আরও পড়ুনঃ  ‘বেজা’ ২০.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সোহেল মিয়া আট ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি নেন সোহেল। দশ টাকার নোটে পাওয়া ফোন নাম্বারে কল করে পরিচয় হয় ত্রিশালের আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের গুজিয়াম টানপাড়া গ্রামের রওশন আরার সঙ্গে। প্রতিদিনই কথা হতো দুজনের মধ্যে। এক সময় সোহেল রওশনকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়।

জন্মসূত্রেই দু-পা বিকলঙ্গ রওশন তার শারীরিক প্রতিবন্ধীতার কথা সোহেলকে জানিয়ে অপারগতা প্রকাশ করে সে। কিন্তু ততক্ষণে ভালোবাসার মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে, তার প্রেমে প্রায় অন্ধ ছিল সোহেল। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে প্রেমের সম্পর্ক শুরু। শত বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে প্রেমিক যুগল ওই বছরের ডিসেম্বরে বসেন বিয়ের পিঁড়িতে। ভালবাসার টানেই সোহেল তার পরিবারের অমতে প্রতিবন্ধী রওশনকে বিয়ে করেন। পরিবারের সদস্যদের আপত্তির কারণে স্ত্রীকে নিয়ে নিজ বাড়িতে উঠতে পারেননি তিনি।

অকৃত্রিম ভালোবাসার রওশনকে সবসময় পাশে পেতে আর দেখাশোনার জন্য ঢাকা থেকে ইউনিফুডের চাকরি ছেড়ে, শ্বশুরবাড়ি এলাকায় বেছে নেন ব্যবসা। যদিও দশটা মেয়ের মতো সুস্থ স্বাভাবিক নন রওশন, তবুও কখনো ছেড়ে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতির পর সোহেল স্ত্রীকে নিয়ে পার করেছেন জীবনের ১৪টি বছর। বাস্তবতায়, ভালোবাসা যেখানে অভাব অনটন দেখে, সেখান থেকে দৌঁড়ে পালায়, সেখানে অভাবকে বরণ করে ভালোবাসার এক অনন্য নিদর্শন গড়ে তুলেছেন সোহেল-রওশন।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন