শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তারুণ্যের দেশপ্রেম

তারুণ্যের দেশপ্রেম
রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছি। বিজয়ের পঞ্চাশ বছরের কাল পরিক্রমায় আমরা হাটঁছি এক নতুন বাংলাদেশের পথে। এক আত্মানিরর্ভশীল মর্যাদাশীল জাতিরূপে সুদৃঢ় নেতৃত্বের হাত ধরে। পথ কুসুমাকীর্ণ নয় তবু যেতে হবে বহুদূর। একটি সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে দেশ গড়ার যুদ্ধের সঙ্গে সাথে মগজে মননে ও কর্মে পাকিস্তানিকরণ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার লড়াইটাও লড়তে হবে। এ লড়াই প্রতিক্ষণ, প্রতিদিন, প্রতিজনের। আর এই লড়াইয়ের তুর্কি তরুণরাই; যারা যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারের দাবিতে গর্জে ওঠে।

৫০ বছরে বাংলাদেশ। বিজয়ের এই ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন চমক লাগার মতোই। এক সময় যে বিশ্ব মনে করতো তলাবিহীন ঝুড়ি আজ সেই বিশ্বের কাছে সাফল্যের এক বৈশ্বিক সমীক্ষা বাংলাদেশ। কিন্তু কোথায় যেন আমরা এখনও জাতিগতভাবে নিজেদের পরিচয়, ইতিহাস, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও জীবনাচারণ সম্পর্কে উদাসীন। ইতিহাস নিয়ে সঠিক তথ্য না জানা এবং না জানতে চাওয়ার প্রবণতাও আছে। ৫০ এ দাঁড়িয়ে আমরা আজও সেই বির্তকের ফাঁদে পা দিই বাঙালি নাকি বাংলাদেশি?

বাংলাদেশ মিরপুর স্টেডিয়ামে কতিপয় যুবক পাকি জার্সি পরিধান করে আর পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের আনন্দের উল্লাসের সঙ্গে সামিল হওয়ার মাধ্যমে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। তাদের আনন্দে বিগলিত হয়ে তাদের নিশান উড়িয়ে তাদের বিজয় সারথী হয়েছে। কি লজ্জা। কেন আমরা লজ্জা পাবো, কেন এই বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নেই সেটাই স্পষ্ট হব আজ। খেলায় যেকোনো দলকে সর্মথন করার অবশ্যই স্বাধীনতা আমাদের আছে। কারণ আমাদের রাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং সেই অধিকার ও মর্যাদা বজায় রাখতে রাষ্ট্র বদ্ধপরিকর। সেই স্বাধীন ভূখণ্ডের একজন নাগরিক হয়ে আমাদেরও রাষ্ট্রের প্রতি কিছু দায়িত্ব রয়েছে। প্রথমত আমাকে বিশ্বাস করতে হবে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং তার সুদীর্ঘ মুক্তি সংগ্রামে।

এখন অনেকেই বলবেন খেলার সাথে রাজনীতির কি সম্পক? অথবা খেলাধুলায় এসব দেশ বিদ্বেষ টানা ঠিক নয়। কিন্তু দেশপ্রেম? যখন মুশফিক তামিম, সাকিব আর মাশরাফীরা বিজয় ছিনিয়ে আনে বা বাংলাদেশ যেকোনো ক্ষেত্রে জিতে যায় তখন কেন মনে হয় আমি জিতে গেলাম বা আমরা জিতে গেলাম। কারণ দেশ একটি সামষ্টিক বিষয় একটি সামষ্টিক অনুভূতি। যেখানে আমি থেকে আমরা-তে রূপান্তর। গোপাল হালদার সম্পাদিত ‘সোনার বাংলা’ গ্রন্থে দেশ সম্পর্কিত একটি চমৎকার কথা আছে, “মানুষ মমতা দিয়ে গড়ে তার দেশকে আর দেশ আবার গড়ে সেই মানুষকে। মানুষ আর মাটির এই দেওয়া নেওয়া টানা পোড়েনেই রচিত হয় জাতির পতন- অভ্যূদয়- বন্ধুর- ইতিহাস তার সাফল্যের দীপ্তি আর ব্যর্থতার কালিমা।”

তাই, দেশের মানুষের কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে তার দেশ আর দেশ নির্মাণে চাই সেই মমত্ববোধ অধিকারবোধ। তাই ‘ওমা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি’। দেশ মানে শুধু ভূখণ্ড নয় কাঁটাতারের বেষ্টনী নয়। দেশ, যা একটি মানুষের জন্ম পরিচয়, যার আলো, বায়ু আমাদের বেড়ে ওঠার রসদ। যা মিশে আছে মিলে আছে আমাদের প্রাণে, মনে এবং আত্মাপরিচয়ে। যার মূল্যবোধ, শিক্ষা, নীতি, নৈতিকতা, সংস্কৃতি, আমাদের প্রতিটি কোষে মগজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। দেশ এক অভিন্ন জাতিসত্ত্বা এক জাতীয়তাবোধ। বাংলাদেশ যে চারটি মূল স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তার একটি বাঙালি জাতীয়তাবাদ। আর এ জাতীয়তাবোধ থেকেই বাংলাদেশ নামক জাতি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন।

আরও পড়ুনঃ  ব্যাংকিং খাতে আশার আলো

দুমুখোরা বলেন, ভিয়েতনামের মতো দীর্ঘস্থায়ী একটি যুদ্ধ হলে নাকি বাঙালি বুঝতো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ কাকে বলে। মুক্তিযুদ্ধকে গন্ডগোল তকমা দেওয়া বিশিষ্ট নাগরিকদের মুখে এই কথা উচ্চারিত হবে এটাই স্বাভাবিক। আর এখানেই হয়তো আমাদের সাহসের ও চিন্তার দৈন্যতা, অজ্ঞানতা এবং জানতে চাওয়ার সীমাবদ্ধতা, দেখার অগভীরতা ক্ষেত্র বিশেষে অনিচ্ছাও এবং কূপমুণ্ডকতাও বটে। বাংলাদেশের ইতিহাস শুধু ৭১-এ আবদ্ধ করে রাখলে হবে না। কারণ এই সংগ্রামের ইতিহাসের রয়েছে সুদীর্ঘ যাত্রা। যার পরতে পরতে রয়েছে উপেক্ষা, বঞ্চনা, শোষণ, ষড়যন্ত্র, লুষ্ঠন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার হত্যা, চেতনায় আঘাত ও রক্ত মচ্ছব।

১৯৪৭ সালে ধর্মের দোহাই দিয়ে এক ও অভিন্ন জাতীয়তাবাদের হাওয়াই মিঠাই ধরিয়ে দিয়ে ৪৭-এর দেশভাগ বাঙালির জন্য ছিলো সবচেয়ে বড় প্রবঞ্চনা। তারপরেই মুখোশ খসে পড়ে পাকিস্তানিদের। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক তথা জাতিগতভাবে শোষিত হতে থাকে বাঙালি। পকিস্তানি সামরিক জান্তাদের সীমাহীন অত্যাচার আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে ওঠে বাঙালি। এই বাংলা হাজার বছর ধরে শাসিত হয়েছে ভিনদেশিদের দ্বারা, বাংলার নিজস্ব কৃষ্টি, ভাষা, সংস্কৃতি, চেতনা, জীবনাচার, আত্মপরিচয় এ যে সামষ্টিক জাতিগত পরিচয় ও বোধের জায়গাটি, স্বতন্ত্র আত্মসম্মানবোধের মূল শিকড়টি আমূলে উপড়ে ফেলতে চেয়েছিলো পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা।

শুরুটা ১৯৪৭ সালেই। ৪৭-এর ডিসেম্বরে করাচিতে অনুষ্ঠিত এক শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করা হবে এই ঘোষণা প্রদান করার মধ্য দিয়ে বাঙালি চেতনার মূলে প্রথম আঘাতের মাধ্যমে সূচিত হয় শোষণের যাত্রা। তারপর একের পর এক খর্ব হতে থাকে বাঙালির অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার। দেশভাগের পর তথা কথিত স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে একজনও উচ্চ পর্যায়ের বাঙালি কর্মকর্তা ছিলেন না। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক কাঠামো এবং আমলাগোষ্ঠীতেও পূর্ব বাংলার (যদিও ১৯৫৫ সালে এর নাম পরির্বতন করে করা হয় পূর্ব পাকিস্তান। তবে এই আলোচনায় পূর্ববাংলা নামটি উচ্চারণ করব) প্রতিনিধিত্ব ছিল নামকাওয়াস্তে। ৪৭ এর পর পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে বাঙালির সংখ্যা ছিল মাত্র ৪ জন। কেন্দ্রীয় সরকারের ৪২,০০০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে পূর্ব বাংলার ছিল মাত্র ২,৯০০ জন।

সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর এই বৈষম্য আরো বাড়তে থাকে। বৈষম্য বাড়তে থাকে ফরেন সার্ভিস, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি ক্ষেত্রসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে। প্রথম থেকেই এই পশ্চিম পাকিস্তানি সুবিধাবাদী শ্রেণীগোষ্ঠী খুব সচেতনভাবে তৎপর ছিল তাদের স্বীয় নিয়ন্ত্রণাধীন একটি কেন্দ্রীয় শাসন কাঠামো গড়ে তুলতে। তাই প্রয়োজনের যৌক্তকতা বিচার না করে বেশি বরাদ্দের বাজেট প্রণয়নসহ বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য। শিক্ষাখাতেও ছিল ব্যাপক বৈষম্য। সেই সময়ে শিক্ষাখাতে পূর্ব বাংলার জন্য মাথাপিছু বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৫.৬৩ টাকা আর পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য ছিল ৮.৬৩ টাকা অর্থাৎ ব্যবধান পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি। পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বৃত্ত আয় দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ঘাটতি পূরণ করা হতো কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য ছিলো না কোনো পরিকল্পনা। অথচ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পূর্ব বাংলার পাট ছিল গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

আরও পড়ুনঃ  আবেগ নয়, বিবেক দিয়ে বিচার করুন

বাংলাকে তারা মনে করতো কাঁচামাল যোগানের আড়ত। সংস্কৃতির আগ্রাসনে তাদের অপচেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। বাংলা বর্ণমালা পরিবর্তন, বাংলা ভাষা সংস্কার করে একটি জাতীয় ভাষা প্রসারের অপচেষ্টা এবং রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধকরণসহ নানাবিধ সাংস্কৃতিক শোষণ ও নিপীড়ণের শিকার হতে হয়েছিল বাঙালিদের। আর এভাবেই শাসন কাঠামোয়, সেনাবাহিনী, প্রতিরক্ষা, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, সংস্কৃতি, পুঁজি, বাণিজ্য সমস্ত বিষয়ে পূর্ব বাঙালিরা অবহেলা, বঞ্ছনা অত্যাচারসহ শোষিত হতে থাকে।

কেন্দ্রে অবাঙালিদের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণি নিশ্চিত করার মাধ্যমে সর্ব বিষয়ে পূর্ব বাংলার ওপর ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করে ছিল। রাজনৈতিক ভাবেও বাঙালিদের অধিকার খর্ব করা হয়েছিল। রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি নির্ধারণে, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে, রাষ্ট্র ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে বাঙালিদের কখনোই পৌছুঁতে দেয়া হয়নি, তাদের উপেক্ষা ও অবহেলা করা হয়েছে। বার বার তাদের অধিকারকে অন্যায়ভাবে হরণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের অন্যায় আর অবিচারের মুখে পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করার লক্ষ্যে রচিত হয়েছে মহাসংগ্রামের পথ। তারই ধারাবাহিকতায় এসেছে ’৫২ ভাষা-সংস্কৃতি আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, ‘৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৬ এর ছয়দফা, ‘৬৯ এর গণ অভ্যুথান, ৭০ এর নির্বাচন এবং ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ।

তাই সামনে যখন পাকিস্তান তখন আমাদের কিছু বিষয়ে খুব স্পষ্ট থাকতে হবে। ভাবাবেগ আবেগ উল্লাস কোথায় কতটুকু দেখাবো বিশেষ করে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সঙ্গে সেটি অবশ্যই নিক্তি ধরে মেপে মেপে আমাদের ঠিক করতে হবে। যারা একটি জাতির সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে করে যাওয়া অন্যায়, অপরাধ, নিপীড়ন, শোষণ তথা নৃশংসতম গণহত্যার কথা জাতিগতভাবে বিস্মৃত হয়, অস্বীকার করে, যাদের মনে তাদের কৃতকর্মের জন্য এতটুকু অপরাধ বোধ তৈরি হয় না তাদের দেশের নিশান বুকে পিঠে জড়িয়ে উল্লাসে মত্ত হওয়ার মতো বর্বরতা আমাদের সাজে না। আমরা, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে, দেশমাতৃকাকে রক্ষা করতে একমুহূর্ত পিছপা না হওয়া, নিজেদের সম্ভ্রম লুষ্ঠিত হওয়া, দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলার জন্য আত্মত্যাগী বীরসেনানীদের উত্তরাধিকার তাই আমাদের সেই অত্যাচারীদের পতাকা জড়ানোর আগে বারংবার ভাবতে হবে থামতে হবে।

আমাদের লাল সবুজের পতাকা সুদীর্ঘ এক মুক্তিসংগ্রামের প্রতীক, যার পথ স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা। যাকে পাওয়ার জন্য অগণিত মৃত্যুর মিছিল দেখতে হয়েছে, বাস্তুহারা হতে হয়েছে কোটি মানুষকে, যাদের ষড়যন্ত্রে আমাদের হারাতে হয়েছে যাঁর জন্ম না হলে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার সাধ পেতোনা, বাংলাদেশ নামের এই ভূখণ্ড পেতনা। বিশ্বে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারতো না আমাদের সেই প্রিয় নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য, যে রাষ্ট্রের জন্য তিরিশ লক্ষ মানুষ শহিদ হয়েছেন, দুই লক্ষ, গবেষণায় বলে তারও বেশি (প্রায় ছয় লাখ ) মা বোন নির্যাতিত হয়েছেন সে রাষ্ট্রের চরিত্র, মূলনীতি তার ভোল পাল্টে দেওয়ার অর্থ হলো এই লাখ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ ও জাতির সুদীর্ঘ সংগ্রামের চরম অবমাননা করা। সে এক অপরাধতো বটেই, রাষ্ট্রদ্রোহিতারও সামিল।

আরও পড়ুনঃ  করোনাকালে দুর্গাপূজা ও সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ভাবনা

খুব স্পষ্টভাবেই কিছু মানুষ এই স্বাধীনতা চায়নি, এই বাংলাদেশ চায়নি। সেই অপশক্তিকে আমাদের চিনতে হবে। তাদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে ঘৃণা ভরে। রুখে দিতে হবে তাদের ষড়যন্ত্র। মনে রাখতে হবে, তারা ১৯৭৫ সালে আমাদের জাতির পিতাকে হত্যা করে এক কালো অধ্যায় সূচনার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছে। সংবিধান সংশোধনের নামে দেশকে আবার পাকিস্তানের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। ক্ষমতার মসনদের লোভে নিজেদের ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে রাজনীতিতে আমদানি করেছে ধর্মীয় উন্মাদনা। দেশকে বানাতে চেয়েছে আরেক মৃত্যু উপত্যকা। যাদের কূটকৌশলে বার বার আমাদের দেশ চলেছে ‘উদ্ভট উটের পিঠে‘। সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধটা এখনও জারি আছে। যে পতাকাকে রক্ষা করতে এখনো আমাদের লড়াই প্রতিনিয়ত সেই বাস্তবতায় প্রিয় লাল সবুজের পতাকাকে অপমান করার ধৃষ্টতা আমাদের নেই। এ এক অমার্জনীয় অপরাধ। এমন মস্তিষ্কের বিকার আর চিত্তের দেউলিয়াপনা হওয়ার অধিকার আমাদের নেই। পাকিস্তানকে ভালোবাসি সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এমন উচ্চারণ করার স্পর্ধা ও অধিকার আমাদের নেই। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের পরিচয় আমাদের অহংকার। নিজেদের পরিচয়ের সঙ্গে আপোষ বাংলার তরুণ সমাজ কোনোদিন মেনে নিতে পারে না।

রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছি। বিজয়ের পঞ্চাশ বছরের কাল পরিক্রমায় আমরা হাটঁছি এক নতুন বাংলাদেশের পথে। এক আত্মানিরর্ভশীল মর্যাদাশীল জাতিরূপে সুদৃঢ় নেতৃত্বের হাত ধরে। পথ কুসুমাকীর্ণ নয় তবু যেতে হবে বহুদূর। একটি সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে দেশ গড়ার যুদ্ধের সঙ্গে সাথে মগজে মননে ও কর্মে পাকিস্তানিকরণ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার লড়াইটাও লড়তে হবে। এ লড়াই প্রতিক্ষণ, প্রতিদিন, প্রতিজনের। আর এই লড়াইয়ের তুর্কি তরুণরাই; যারা যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারের দাবিতে গর্জে ওঠে। যাদের চেতনার দাবানল শাহবাগ থেকে ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটি প্রান্তে। যারা পোস্টার হাতে সেই খেলার ময়দানে দাঁড়িয়ে হত্যাকারীদের গণহত্যা স্বীকারের দাবি জানায়। যারা আজও দেশের জন্য মস্তিষ্ককে সদা জাগ্রত রাখে। যাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। যাদের রক্তে মাতন জাগে জয় বাংলার হিন্দোলে, তাই বিন্দু মাত্র পথ তাদের হারালে চলবে না, চলবেই না।

লেখক : শিক্ষক, ইউনিভারর্সিটি অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন