তাসনিম হাসান মজুমদার
প্রতিবছর জুনমাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বের ৫২ টি দেশে পালিত হয় Father’s day বা পিতৃ দিবস। বিংশশতাব্দীর প্রথমদিকে পিতৃ দিবস পালন শুরু হয়। প্রকৃতপক্ষে মায়েদের পাশাপাশি বাবারা ও যে, তাঁদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল- এটা বুঝানোর জন্যই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। ধারণা করা হয়ে থাকে, ১৯০৮ সালের ৫ই জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেরারমন্টের এক গীর্জায় এই দিনটি প্রথম পালিত হয়। আবার সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্র মহিলার মাথাতে ও পিতৃ দিবসের আইডিয়া আসে।
যদিও তিনি ১৯০৯ সালে ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারে জানতেন না। ডড এই আইডিয়া পান গীর্জার এক পুরোহিত এর বক্তব্য থেকে, সেই পুরোহিত মা’কে নিয়ে অনেক ভালো কথা বলেছিলেন। তাঁর মনে হয়, তাহলে বাবাদের নিয়ে ভালো কিছু করা উচিৎ। ডড আবার বাবাকে খুব ভারোবাসতেন তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর অর্থাৎ ১৯শে জুন ১৯১০ সাল থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন। ১৯১৩ সালে আমেরিকার সংসদে পিতৃ দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করার জন্য একটি বিল উত্থাপিত হয়।
১৯২৪ সালে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন পিতৃ দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করেন। বিশ্বের প্রায়ই দেশে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার পিতৃ দিবস পালিত হয়। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা এতো প্রগতির কথা বলি। বাবা দিবস আসলে ঘটা করে সেলিব্রেট করি। সোশ্যাল মিডিয়ায় লম্বা লম্বা আবেগ মিশ্রিত পোস্ট করি। টিভিতে টকশো হয়।কিন্ত, এসবের প্রতিফলন কোথায়? বাবা দিবসে বাবাদের ঠিকই বৃদ্ধাশ্রমে কাঁটাতে হচ্ছে। আমরা বাবাদের প্রতি এতো অমানবিক-অপাশবিক কেন? বাবারা আমাদের কত আদর- স্নেহ দিয়ে বড় করেছেন। জীবনে আয়-রোজগারের বড় একটা অংশ আমাদের ক্যারিয়ারের পিছনে ব্যায় করেছেন।গুরুতর অসুস্থ হলে হসপিটালাইজড করেছেন।
বাবার টাকায় বিদেশি ডিগ্রি অর্জন করে থাকি। আর, শেষ বয়সে আমরা সন্তানরা বাবাদের উপহার দেই বৃদ্ধাশ্রম। আমরা নিজের সন্তানকে যতটা আদর-সোহাগ দিয়ে গড়ে তোলার চেষ্টায় থাকি, তদ্রুপ আমাদের বাবারা ও আমাদের কয়েকগুণ বেশি স্নেন, মায়া-মহব্বত করেছেন। বাবা দিবস আসলেই নিউজফিড জুড়ে বাবাদের জয়জয়গান। হরেকরকমের ভিডিও। এসব নিতান্তই লোক দেখানো ছাড়া বৈকি। ট্রেন্ডে গা- ভাসাতে হবে, তাই করছি। আমাদের সামান্য সফলতায় বাবারা এক আকাশ খুশি হোন। হাত তুলে দো’আ করেন। ঠিক তদ্রুপ আমাদের দেয়া কষ্ট গুলো ও তাঁদের কাছে সমুদ্র সমান।তাঁদের দো’আয় আমরা যেভাবে, সফলকাম হতে পারি,তাঁদের একফোঁটা চোখের পানিতেই নিমিষেই আমাদের সব সফলতা নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে।বাবাদের প্রতি আমাদের সদয় হওয়া উচিৎ।
বাবারা শেষ বৃদ্ধাশ্রমে কাঁটাবে এটা কখনো কাম্য নয়। স্ত্রীর কথা শুনে বাবকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা অপরাধের শামিল। বাবার সারাজীবনের কষ্টের টাকায় নির্মিত ঘরে, বাবার শেষ আশ্রয় বুঝি হবে না? কোনো ধর্মই বাবাকে অবহেলা করার কথা বলেনি। সম্মান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পৃথিবীতে যতকাজ আছে,তাঁদের মাঝে উত্তম কাজ বাবার খেদমত করা। সর্বদাই বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করা। এই বাবা দিবসে আমরা প্রতিজ্ঞা করি, সারাবছর বাবাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবো। বৃদ্ধ বয়সে বাবাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবোনা। এটাই হোক বাবা দিবসের প্রধান প্রতিপাদ্য।
লেখক : তাসনিম হাসান মজুমদার
শিক্ষার্থী :ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ