বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে দুঃশাসন শব্দটি ঘাপটি মেরে আছে! তাই এ বিষয়ে কিছু লেখার আগে, Daron Acemoglu & James A. Robinson এর বিখ্যাত বই Why Nations Fail ( পৃষ্ঠা নং ৬৮) এর কয়েকটি লাইন দিয়ে শুরু করতে চাই । তা হল, “ Poor countries are poor because those who have power make choices that create poverty. They get it wrong not by mistake or ignorance but on purpose.” (অর্থাৎ গরীব দেশ গুলো গরীব কারণ হলো যারা ক্ষমতার চালকে আছেন, তারাই এই দারিদ্রতার সৃষ্টি করেন। এটা তাদের ভুল বা অজ্ঞতা নয় বরং উদ্দেশ্য ভুল করে”)
সদ্য পরিবর্তিত বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট সরকারের অবসান ঘটেছে বটে, কিন্তু রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংকট গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে । কেননা যেই সাধারণ ইচ্ছা কে কেন্দ্র করে একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের প্রসব হয়েছে তা ধরে রেখে জনগণের আস্থা অর্জনের সংকটও সরকারের বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ও আমলাদের অসহযোগিতার ফলে এই সব সংকটকে আরো গভীর করে তুলেছে । ইতোমধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীরা বিভিন্ন অদৃশ্য শক্তির ছত্রছায়ায় বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে । যাতে করে জনগণের মনে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে সরকারের প্রতি বিদ্বেষ ও আস্থার সংকট তৈরি করা যায় । ফ্যাসিস্টদের লক্ষ্য হল ১/১১ মত রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা । এমতাবস্থায় তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ফ্যাসিস্ট শক্তি , সরকারের ভিতরের অভ্যন্তরীণ আমলা ও রাজনৈতিক শক্তি এবং বিদেশী শক্তি কাজ করে যাচ্ছে । কারণ হল ত্রিমোহনী এই শক্তি দ্বারাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় বাকশাল কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছিল । তাই পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারের পতন নিশ্চিত হলেও এই অশুভ শক্তির ক্ষমতা কাঠামোর অভ্যন্তরীণ বীজ সংক্রমিত রূপ ধারণ করেছে । তাছাড়া রাজনৈতিক ব্যবস্থা যখন ফ্যাসিস্ট হয়ে যায় তখন একটি ধনীক শ্রেণীর ও সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ ফ্যাসিস্ট পতন হলেও ক্ষমতা কাঠামো ঐসব লাভমান ধনীক শ্রেণীর হাতে নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে । তাই বলা যায়, ফ্যাসিস্ট পরবর্তী শাসন ব্যবস্থা একটু কঠোরভাবেই পরিচালনা করা উচিত ।
তাছাড়া ৫ আগস্ট ক্ষমতা পরিবর্তনের পর ৫ ফেব্রুয়ারি আরেকটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি ভেঙে ফেলার মাধ্যমে । পাশাপাশি ফ্যাসিস্টদের দোসর হিসেবে যারা কাজ করেছেন তাদের ভাগ্যেও একই পরিনতি ঘটেছে। বিশেষ করে সবার দৃষ্টি ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ বাড়িটিকে ঘিরে! কাজটি কতটুকু যৌক্তিক কিংবা কাঙ্ক্ষিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত হয়েছে তা নিকট ইতিহাসই বিচার করবে । তবে এটা সত্য যে, ছাত্রজনতার বিপ্লবের মাধ্যমে যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল তার জন্য শেখ হাসিনার কোনো অনুশোচনা বা অনুতপ্ত কিংবা ক্ষমা প্রার্থনা করেনি । এমনকি তিনি ভেবেছিলেন গত ৬ মাসে অভ্যুত্থানের স্পন্দনের সাথে জনগণের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে । তাই তিনি কোনো ধরনের ক্ষমা প্রার্থনা না করে রাজনৈতিক অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন । আর পরিনতিই হল ৫ ফেব্রুয়ারির বুলডোজার আন্দোলন । সুতরাং এটা পরিষ্কার, রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু ভুল ত্রুটি কিংবা ভিন্নমত থাকলেও ফ্যাসিবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ছাত্রজনতার আন্দোলন ঐক্যবদ্ধতার ঐক্য অটুট রয়েছে।
এবার আসা যাক আমাদের রাজনৈতিক সংকট গুলো কোথায় আটকে যাচ্ছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকায় সরকারের কার্যপ্রনালীর সাথে কতটুকু জনগণের সম্পৃক্ততা কিংবা জনসমর্থন রয়েছে তার বিশ্লেষণ প্রয়োজন ।
সরকারের সীমাবদ্ধতা সমূহঃ
প্রথমত > রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরকারের সম্পর্ক শুরুর দিকে যতটা নমনীয় ও সমর্থনযোগ্য ছিল তা বর্তমানে অনেকটাই কমেছে । যদিও বিএনপি বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ভিন্নমত পোষণ করলেও সরকারের স্হিতিশীলতার প্রশ্নে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে ।
দ্বিতীয়ত> যে কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্হা পতনের সাথে সাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হয় শক্ত হাতে । কারণ মানুষ একটা শাসন ব্যবস্হায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে হঠাৎ করে অত্যধিক স্বাধীনতা ভোগ করার সুযোগে পরাজিত শক্তির অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপের সুযোগ নেয় । সুতরাং আইনের শাসনের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের মাত্রাতিরিক্ত সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে।
তৃতীয়ত > বিপ্লব পরবর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই সমন্বয়কদেরকে সরকারের রাজনৈতিক দল হিসেবে ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে । যার কারণে সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে । তাছাড়া সমন্বয়কদের বিরাট অংশ জামায়াত ইসলামী দলের সাথে আঁতাত সম্পর্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে । এ থেকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে তারা নিজেদের স্বার্থে রাজনৈতিক বোঝাপড়া করে সরকার গঠনের সুযোগ খুঁজছে । প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মতো আচরণ করছে । কারণ গণঅভ্যুত্থানের সফলতা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অংশীদারিত্বে তাদের দ্বিমত কিংবা ভিন্নমত প্রকাশ পাচ্ছে । আর সেক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা অনেকটা অদূরদর্শীপূর্ণ।
চতুর্থত> উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা আছেন, তাদের ফিডব্যাক পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সরকারের উদ্দেশ্যকে সফল করতে তাদের ভূমিকা জনবান্ধব কিংবা জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়নি । বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ভূমিকা খুবই হতাশাজনক । কিছু কিছু উপদেষ্টার ভূমিকা রহস্যজনক বা হতাশাজনক বলে প্রতিয়মান হয়েছে । তবে তার মধ্যে অর্থ ও পরিকল্পনা এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ভূমিকা খুবই প্রশংসনীয় বলা যায়।
পঞ্চমত> সমন্বয়কদের কর্মপরিকল্পনার একটা সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত । বিশেষ করে তাদের অতি উৎসাহী কর্মসূচি গুলো দ্রুত প্রত্যাহার করা উচিত । উদাহরণ স্বরূপ বুলডোজার কর্মসূচী তারমধ্যে অন্যতম । এসব অজনপ্রিয় রাজনৈতিক কর্মসূচির ফলে সরকারের জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন ও পক্ষ বিপক্ষ মতামত প্রকাশ পাচ্ছে । ফলশ্রুতিতে দেশের মধ্যে একটি রাজনৈতিক সংকট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে এবং তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বাংলাদেশের জন্য সংকটের ভিতর সংকট সৃষ্টি হতে থাকবে । সুতরাং যেকোনো মূল্যে ড. ইউনূসের সরকারকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারের প্রত্যাশা ও স্বৈরাচারী শক্তির উত্থান প্রতিহত করতে হবে ।
এবার আসা যাক রাজনৈতিক দলগুলির পর্যবেক্ষণীয় বিশ্লেষণঃ
রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা করতে হলে প্রথমেই সদ্য বিতাড়িত আওয়ামী লীগকে নিয়ে আলোচনা করতে হবে । আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে অন্য আলোচনায় বলা যেতে পারে কিন্তু সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতনের পরেও তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে । এমনকি দিনে দিনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ঔদ্ধত্য বৃদ্ধি পাচ্ছে । আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা সমুহঃ
প্রথমত> আওয়ামী লীগ জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানকে একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করে আসছে । যা তাদের রাজনৈতিক অদক্ষতা, অসারশূন্যতা ও অদূরদর্শিতার বহিঃপ্রকাশ । যার কারণে তাদের নেতারা শুরু থেকে বলতে থাকেন একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে তাদের নেত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। সুতরাং তা থেকে এটা পরিষ্কার অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের এ কৌশলগত অবস্থান খুবই দুর্বল ও দৃষ্টিকোঠর ।
দ্বিতীয়তঃ এ অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার প্রায় দুই হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছেন, ছয়শত মানুষ চোখ হারিয়েছেন এবং কয়েক হাজার বা তারচেয়েও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন । যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী, শিশু এবং সাধারণ মানুষ । তাছাড়া এসব হত্যাকাণ্ডের ধরন ছিল খুবই হৃদয়বিদারক ও নির্মম পদক্ষেপ । তথাকথিত গণতান্ত্রিক কিংবা যেকোনো রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থায় এরকম নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের নিকটতম রাজনৈতিক শাসনের ইতিহাসে বিরল ঘটনা । তাই এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগের কোনো রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা প্রকাশ পায়নি ও এজন্য জনগণের কাছে কোনো ক্ষমা চাওয়া হয়নি । তাই আওয়ামী লীগকে এখন পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক ক্ষমতা আহরণের ক্ষেত্রে একটি চরমপন্থী দল হিসেবে চিহ্নিত করা যায় ।
তৃতীয়ত > সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণে দেখা যায় আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত ও অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করছে এবং এজন্য তারা রাজনৈতিক অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে এবং করে যাচ্ছে । এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করছে বিগত সরকারের মদদপুষ্ট আমলা, আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী শ্রেণি (যারা বলে আগেই ভাল ছিলাম), কঠোর লীগ পন্থী শ্রেণি এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং রাজনৈতিক স্হিতিশীলতার বিরুদ্ধে কাজ করছে । সর্বপোরী শেখ হাসিনার মানসিক ভারসাম্যহীন রাজনৈতিক অবস্থান সবচেয়ে বেশি দায়ী ।
চতুর্থতঃ আওয়ামী লীগের আরেকটি সাম্প্রদায়িক শক্তি হলো ইসকন। ফ্যাসিবাদ পতনের পর পর এশক্তি স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠেছিল বিশেষ করে ইসকন নেতা চিন্ময় ইস্যুকে কেন্দ্র করে। কিন্তু সরকার ও জনগণের ধৈর্য্য ও দূরদর্শিতার কারণে ভারতের অতি হস্তক্ষেপ থেকে বাংলাদেশ সাময়িক রক্ষা পেয়েছে । এশক্তির বড় উগ্রতা হলো চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা ও তার আগে ওসি প্রদীপ কর্তৃক মেজর সিনহা হত্যাকান্ড ।
তাছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের আন্দোলনের নামে অন্তর্ঘাত মূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
পঞ্চমত> ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম বড় স্লোগান ছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশ! প্রযুক্তির এ যুগে তার অপব্যবহারের মাধ্যমে দেশের মানুষকে অসত্য তথ্য প্রচারের মাধ্যমে প্রতারিত করা হয়েছিল । দেশকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে মূলত দুর্নীতি ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে দেশকে সর্বোচ্চ ঋণের ফাঁদে ঠেলে দিয়েছে ।
এবার আসা যাক বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর রাজনৈতিক কৌশল ও সরকারের সাথে তাদের সম্পর্ক বিষয়ে মূল বিষয়গুলোর পর্যালোচনা।
প্রথমত > বিএনপিসহ তাদের সহযোগী দলগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শতসমালোচনার মধ্যেও তারা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন । কারণ তাদের কাছে এটা পরিষ্কার এই সরকার ব্যর্থ হলে ফ্যাসিবাদ আবার ও নাড়াছাড়া দিয়ে উঠবে ।
দ্বিতীয়ত > বিএনপির একটি রাজনৈতিক কৌশলগত অবস্থান ছিল তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার বিরোধিতা । বক্তব্যের দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে কিন্তু জুলাই -আগস্ট গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগের পদক্ষেপের সাথে একটি রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধের কর্মকাণ্ডের সত্যবিশ্লেষণের দাবি না রেখে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি বিপরীত অবস্থান সমন্বয়কদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি । যদিও বিএনপির অবস্থান এ বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে ।
তৃতীয়ত > ২৪শের গণ আন্দোলন পরবর্তী বিভিন্ন জায়গায় শতশত মামলা দায়ের হয়েছে যার যৌক্তিক কারণও রয়েছে । কিন্তু এসব মামলার সত্যবিশ্লেষণ করলে দেখা যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে জড়ানো হয়েছে যা কাম্য নয় । তাছাড়া আওয়ামীলীগের চাঁদাবাজের শূন্যস্হান পূরণে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভূমিকা অত্যন্ত অজনপ্রিয়তা প্রকাশ পেয়েছে । যদিও বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায়ে এই কার্যক্রমের কঠিন হুঁশিয়ারি রয়েছে কিন্তু তা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা যায় নি ।অর্থাৎ বিএনপির তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ।
চতুর্থত> এতবড় একটি রাজনৈতিক গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ ঘটেছে যার প্রভাব বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে চরম শৃঙ্খলার অভাব থেকেই! বিশেষ করে অর্থনৈতিক ডাকাতি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে । এমতাবস্থায় বিএনপির অতিদ্রুত নির্বাচনের চাপ সৃষ্টি করা জনগণের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে না। কারণ জনগণ আওয়ামী লীগের বিপরীতে বর্তমান সরকারকে সমর্থন ও সময় দিতে প্রস্তুত, এটা বিএনপি কে বুঝতে হবে । তাছাড়া একটি রাজনৈতিক সরকারের পর আরেকটি রাজনৈতিক সরকার গণঅভ্যুত্থানের পর পরই কোথাও চলে আসে না। তার জন্য প্রয়োজন সংস্কার ও সময়! বরং এটা পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে ।
অন্যদিকে জামায়াত ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সুযোগ খুঁজছে এবং সরকার ও সমন্বয়কদের সাথে কৌশলগত সমঝোতা রক্ষা করে আসছে। সরকারের উপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি বিশেষ করে নির্বাচনের জন্য তারা একটু সরকারকে সময় দিতে চায় যা তাদের চিন্তার সাথে সাধারণ জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন রয়েছে ।তাতে বিএনপির সাথে তাদের রাজনৈতিক মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে । কারণ তারা এই নির্বাচনের ধীর কৌশলে সরকার ও সমন্বয়কদের সাথে আঁতাত রক্ষা করে চলছে । আর এই জন্যই বিএনপির দ্রুত নির্বাচন একটি রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে ।তবে তাদের এই ইচ্ছার ইতিবাচক প্রভাব জনগণের মধ্যে থাকলেও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জামায়াত ইসলামী সরকার গঠন করার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে নেই বললেই চলে ।
অপরদিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টির ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে । কারণ তারা দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন । তাদের অনেক সুযোগ ছিল বিভিন্ন বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদ থেকে পদত্যাগ করে মাইলফলক ভূমিকা পালন করার । কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেননি বরং সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন ।তাছাড়া জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের দুই দলেরই গডফাদার হলো ভারত!
এমতাবস্থায় সমন্বয়কদের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান অনেকটা রাজনৈতিক সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছে। তারা মনে করেন ফ্যাসিবাদ উৎখাতের মূল কারিগর তারা । তাই তারা জামায়াত ছাড়া সকল বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনার কৌশল অবলম্বন করে । তখন থেকেই বুঝা যাচ্ছিল তারা একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায় । তাছাড়া বিভিন্ন জায়গায় অনেক তরুণ ছাত্রনেতা সমন্বয়ক সেজে কিংবা সমন্বয়ক শক্তির কিছু অংশ গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বিভিন্ন মামলায় সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করছে । সুতরাং তাদেরকে মনে রাখতে হবে রাজনৈতিক ভাষায় তারা এখন পর্যন্ত একটি বড় চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কিংবা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সাথে তুলনা করা যায় । তারা যেহেতু জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের কান্ডারী, সুতরাং তাদের রাজনৈতিক আত্নপ্রকাশকে স্বাগত জানাই। কিন্তু তাদেরকে মনে রাখতে হবে গণঅভ্যুত্থান কার্যকরের ক্ষেত্রে তাদের শক্তিই শেষ শক্তি ছিল না বরং তা ছিল সমন্বিত শক্তির কার্যকর প্রতিরোধ । তাই রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের ভূমিকা ও আত্নপ্রকাশের উপস্হাপনা পেশাজীবী ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ভ্রাতৃত্ববোধ পরিবেশ সৃষ্টি করে এগোতে হবে । কারণ পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির অভাব স্পষ্ট হতে পারে।
উপরিউক্ত বিভিন্ন পর্যালোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুঃশাসন অতিক্রম করতে গেলে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সক্ষমতা থাকতে হবে । অর্থাৎ এক্ষেত্রে একটি সাধারণ ইচ্ছার প্রতিফলন থাকতে হবে যা সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কাছে গ্রহণযোগ করা প্রয়োজন এবং এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপ অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে। প্রধান সমস্যা ও পদক্ষেপ আলোচনা করা হলোঃ
১. আওয়ামী লীগ প্রশ্নেঃ সদ্য বিতাড়িত ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ কিংবা রাজনৈতিক কার্যক্রম সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করা প্রয়োজন । যা সকল রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সাধারণ জনগণের কাছেও গ্রহণযোগ্য হয় । এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ইতিবাচক সাড়া থাকতে হবে । তাছাড়াও একটি রাজনৈতিক দল কেন নিষিদ্ধ হয় কিংবা এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের বৈশিষ্ট্য কতটুকু লঙ্ঘন হচ্ছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ সত্য-বিশ্লেষণ করতে হবে । তারপর একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত । কারণ গত ১৫ বছরের মধ্যে ঘুম, খুন, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, জুলাই-আগষ্ট ছাত্র- জনতার গণহত্যা, হেফাজত গণহত্যা, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যা, রাষ্ট্রীয় অর্থ পাচার, সিন্ডিকেট দুর্নীতি, মতপ্রকাশের অধিকার হরণ, মিথ্যা নির্বাচনে নির্বাচিত, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি অপরাধের জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়বদ্ধতা রয়েছে । সর্বোপরি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা কতটুকু ছিল তারও সত্য-বিশ্লেষণ করে দ্রুত প্রকাশ করতে হবে । এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের গুচ্ছ গ্রহণযোগ্য অনুসন্ধান জরুরি । সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন কর্তৃক জুলাই-আগষ্ট গণহত্যার উপর প্রকাশিত প্রতিবেদন একটি আন্তর্জাতিক মানের দলিল হিসাবে বিবেচিত হবে । এসব অপরাধের সত্য-বিশ্লেষণ (Facts Finding) দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে । এগুলো প্রমাণিত হলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সহজ ও সহায়ক হবে । এক্ষেত্রে গণভোট আরেকটি রাজনৈতিক পছন্দ হতে পারে ।
আরেকটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ হল, আওয়ামী লীগকে জুলাই-আগষ্ট গণহত্যা সহ গত ১৫ বছরের কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে । তাছাড়া গত সংসদ নির্বাচনে যারা আওয়ামীলীগের প্রার্থী ছিলো তাদেরকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করতে হবে । যাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ফ্যাসিস্ট অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে ।অর্থাৎ আওয়ামী লীগের অপরাধ প্রজন্ম রাজনীতি থেকে বিতাড়িত এবং নতুন প্রজন্মকে বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কার এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এজাতীয় অপরাজনীতি থেকে দূরে থাকার অঙ্গীকার করতে হবে । এই পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পারফর্ম করার সুযোগ পাওয়া যাবে এবং আওয়ামী লীগের অপরাধী শ্রেণির বিলুপ্ত করা যাবে । তাছাড়া তাদের অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।
আওয়ামী লীগ যদি এতে সাড়া না দেয়, তাহলে সকল রাজনৈতিক দলের উচিত হবে অপরাজনীতির জন্য এ দলকে নিষিদ্ধের প্রশ্নে কঠোর ও ঐক্যবদ্ধ থাকা । সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ।
২. জাতীয় শক্তি ও ঐক্য সুদৃঢ়করণঃ জাতীয় ঐক্য ও শক্তিকে শক্তিশালী করতে হবে এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। কারণ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার জাতীয় শক্তিকে বিভক্ত করে ফেলেছে । যার কারণে ভারত সুবিধাজনক হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক হুমকি সৃষ্টি করেছে ।সুতরাং এ জাতীয় শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার বিকল্প নেই ।
এক্ষেত্রে একটি উদ্যোগ, জাতীয় ঐক্য ও অন্তর্ঘাতমূলক কাজ দূর করতে পারে । উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, সারাদেশে ইতিমধ্যে অসংখ্য মামলায় হাজার হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে । এরমধ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাছাই করে শুধুমাত্র যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে ছাড়া বাকিদের অবিলম্বে অব্যাহতি দিতে হবে । মনে রাখতে হবে এসবের মধ্যে অনেকে আছেন যারা শুধুমাত্র আপার ফাঁদে পড়ে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করত কিন্তু জুলাই- আগষ্ট হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করেনি। আবার অনেক সাধারণ মানুষ ও শত্রুতা বসত এসব মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন । সুতরাং বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থে এসব মামলায় সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা থেকে বিরত থাকতে হবে । এতে জনগণের ভোগান্তি কমবে, অপরাধীরা শাস্তি পাবে , সামাজিক এবং জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় হবে ।মনে রাখতে হবে আওয়ামীলীগ অতিমাত্রায় কঠোর হওয়ার কারণে ফ্যাসিবাদী রুপ ধারণ করেছিল।
৩. সরকারের স্থিতিশীলতা: এখন পর্যন্ত সরকারের স্হিতিশীলতার ক্ষেত্রে সবাই ঐক্যবদ্ধ আছেন । এটাই ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশীদের জাতীয় শক্তি! বাকশালীরা এবং তাদের গডফাদার ভারতীয় র তাদের প্রধান লক্ষ্য সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে তা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা । দেশে এবং বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ও ব্যর্থতা প্রমাণ করা। সুতরাং বিএনপি, জামায়াত ইসলামী, সমন্বয়ক সম্মিলিত ঐক্যেসহ বাকী সব ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে এব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
৪. দ্রব্য মূল্য ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাঃ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ এর সময় দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনগণের জন্য নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছিল এবং অর্থনৈতিক সংকট বাংলাদেশকে দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। তাছাড়া ফ্যাসিবাদ পতনের পর তাদের গডফাদার ভারত বাংলাদেশকে অপ্রথাগত সামরিক আক্রমণ করেছিল। অর্থাৎ বাংলাদেশের ওপর বিভিন্ন বাঁধের পানি কোনো রকম তথ্য ছাড়াই ছেড়ে দিয়েছিল। সুতরাং এটা একটা দেশের জন্য অসামরিক আক্রমণ। তাতে করে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক আকার ধারন করেছিল, রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল এবং দ্রব্য মূল্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। যদিও বর্তমানে ধীরে ধীরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সহনীয় ও স্থিতিশীল হচ্ছে। এক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
অন্যদিকে, দেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে অস্থিরতা বিরাজ করলেও বর্তমানে কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এবিষয় পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে সরকার বদ্ধপরিকর এবং দেশের অভ্যন্তরে যারা শত থেকে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পাচার ও দেউলিয়ার সুযোগ নিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থান গ্রহণ করা অব্যাহত রাখতে হবে।
৫. আইনের শাসনঃ বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির জন্য বিগত ফ্যাসিবাদ দায়ী।কারণ তারা প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে পেশাদারী হিসেবে ব্যবহার না করে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছিল। সুতরাং এক্ষেত্রে যে চিরুনি অভিযান চলছে তাতে সবাইকে সচেতন ও সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে। যারা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বশীল রয়েছেন, তাদেরকে দয়া করে পেশাগত দায়িত্বের পরিচয় দিয়ে সরকার ও জনগণের মাঝে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহযোগিতা করুন। যারা অতিমাত্রায় ফ্যাসিবাদ আকড়ে ধরেছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সহযোগিতা করুন। এ ব্যাপারে সরকারের প্রচেষ্টার অব্যাহত সমর্থন জরুরি ।
৬. নির্বাচনী পরিবেশ ও ঐক্যঃ যেকোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। সুতরাং এই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ বিএনপির কর্মীবাহিনী বিশাল এবং তাদের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ও এ বিষয়ে রাজনৈতিক সচেতনতা ও ঐক্য থাকা দরকার । বিশেষ করে বাকশালীরা দিনের ভোট রাতে কিংবা ভোট ডাকাতির নির্বাচনী পরিবেশ থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই সব্যসাচীর ভূমিকা পালন করতে হবে।
তবে এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ যদি জাতির কাছে ক্ষমা না চায় কিংবা নিষিদ্ধ হয়, তাহলে হয়ত তাদেরকে নির্বাচনের বাইরে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে তারা নির্বাচনের সময়কালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ খুঁজবে। এবিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সতর্ক সজাগ থাকতে হবে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের ভারতীয় এজেন্ট কর্তৃক অপ্রথাগত আক্রমণ থেকে নির্বাচনী পরিবেশ রক্ষার জন্য সরকার ঘোষিত ডিসেম্বরই হবে উত্তম সময়।
উপরিউক্ত পর্যালোচনা করে বলা যায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও স্থিতিশীলতা জন্য আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এজন্য প্রয়োজন সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ও সদিচ্ছা । এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে ও শুদ্ধরুপে ফিরে আসতে হবে । তাদেরকে ভারতীয় রাহুগ্রাস থেকে বের হয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হবে । সেজন্য প্রয়োজন নতুন তরুণ নেতৃত্ব । পরিশেষে George Orwell বিখ্যাত বই Fascism and Democracy (পৃষ্ঠা নং ২) এর একটি উক্তি দিয়ে শেষ করব, তা হলো,” Democracies methods are only possible where there is a fairly large basis of agreement between all political parties. There is no strong reason for thinking that any really fundamental change can ever be achieved peacefully.”( অর্থাৎ গণতান্ত্রিক পদ্ধতির বাস্তবায়ন তখনই সম্ভব, যখন সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো বড় ভিত্তির উপর ঐক্যমত হয়ে চুক্তি সম্পাদন করে। তবে সেখানে এটা ভাবার ও কোনো কারণ নেই, যেখানে কোনো বড় পরিবর্তন শান্তিপূর্ণভাবেই হয় “।
সুতরাং আমাদের বড় পরিবর্তন ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবার প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য । আর এটাই আমাদের হোক আমাদের সবার স্বপ্ন “ নতুন বাংলাদেশ”।
মো. শাহজাহান মিয়া
এম.এস.এস., রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, এম .বি.এ., আলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য,
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, চিটাগং ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি (সিইউডিএস)।
ই-মেইলঃ shahjahanau.bd@gmail.com