বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্থনীতির চাকা সচলে বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন জরুরি

কাওসার শাহীন

করোনা যে অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে আসবে তা বেশ বুঝতে পারছি। কোন দেশ কিভাবে সামলাবে তা নিয়ে এরই মাঝে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গেছে।

তেলের দাম যেভাবে পড়ে গেছে তাতে মধ্য প্রাচ্যের তেলভিত্তিক দেশগুলো অর্থনীতি কিভাবে বাঁচাবে তাতে হিমসিম খাচ্ছে। এই যেমন সৌদি আরবের তেল ও হজ থেকে আয় বন্ধ। শুধু এক বছরে হজ থেকে সৌদি আরবের আয় হয় ৮০০ বিলিয়ন ডলার।

হজ মৌসুমে যে সৌদি সরকার আয় করে শুধু তাই নয়। এটিকে বলা হয় সারাবিশ্বের সবচেয়ে বড় রিলিজিয়াস ট্যুরিজম। এ সময় আমেরিকার বিমান কোম্পানিগুলো, হোটেল কোম্পানিগুলো, চায়নার তৈরি জায়নামাজ ফ্যাক্টরিগুলো, সৌদি আরবে সাপ্লাই দেয়া খাদ্য সরবরাহকারী দেশগুলো বেশ বিপাকে পড়েছে।

এর প্রভাব ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পড়ছে। সৌদি আরব সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার আমদানিকারক দেশ। এখন তাদের অর্থনৈতিক দীনতায় আমাদের শ্রমিকদের দেশে পাঠিয়ে দেয়ার চাপ বাড়ছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থা বোয়িং করোনা মোকাবেলা কিভাবে করবে তা ঠিক করতে পারছেনা। এরই মধ্যেই কোম্পানির মালিকানা ব্যাংকের জিম্মায় দিয়ে বিনিয়োগকারীদের নিকট বন্ড বিক্রির চেষ্টা চলছে।

পর্যটনের উপর নির্ভর শীল মালদ্বীপ তার ব্যবসা হারিয়েছে। প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি শ্রমিকের ভাগ্য পেন্ডুলামের মতো দুলছে।
সিঙ্গাপুর নির্ভর করে তার সেবা খাতের উপর। সেখানে বাংলাদেশের শ্রমিকের মাঝে তৈরি হচ্ছে নানা আতঙ্ক। ব্রুনাই, ওমানসহ নানা দেশ যেখানে বাংলার শ্রমিকরা কাজ করে সেখানে চলছে করোনা প্রভাব।

এর প্রভাব ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পড়ছে। বিদেশি রেমিট্যান্স আসা কমে গেছে বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায়।

আরও পড়ুনঃ  অনলাইন ক্লাসে বাড়ছে পর্ণোগ্রাফি এবং গেমিং এর ঝুঁকি

ফলে বাংলাদেশকে তার অর্থনীতি ঠিক রাখার জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করে তাদের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নামকরা অর্থনীতিবিদ রয়েছেন। তাদেরকে এখনই কাজে লাগানো দরকার। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পরামর্শ নিয়ে সরকার কাজ করলে আমরা অর্থনৈতিক মন্দা সামলে নিতে পারবো।

অর্থনৈতিক মন্দা রুখতে উচ্চবিলাসী কাজ বাদ নিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে নানা খরচের খাত তৈরি করা যেতে পারে। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের বেতন অর্ধেক কমানো যেতে পারে। আমাদের সামনে বেসিক ব্যাংকের বেতন কমানোর নজির আছে।

করোনা কেটে গেলে পরবর্তীতে তা সমন্বয় করা যেতে পারে।এই কমানো বেতনের টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় জেলাগুলোতে খাদ্য গুদাম, কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করা যেতে পারে। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে খরচের খাত তৈরি হবে। আর খাদ্য গুদামে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে শস্য কেনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

তেলের দাম বাড়ার কারণে সপ্তাহে দুই দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এখন তেলের দাম কম। ফলে সরকারি ছুটি একদিন কমানো যেতে পারে। একদিন ছুটি কমালেই আমরা বৈদেশিক বাণিজ্যে ৫২ দিন বেশি অংশগ্রহণ করতে পারবো।

আমাদের দেশের মাত্র ৪০ লাখ লোক ট্যাক্স নিবন্ধন নিয়েছে যার মাত্র ১০ লাখ নিয়মিত কর দেয়।
সরকারের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম প্রধান খাত আয়কর বিভাগ। বিভাগটি মাত্র ৬৪ পয়সা খরচের বিনিময়ে সরকারকে ১০০ টাকা আদায় করে দিয়ে থাকে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় কর অফিস সম্প্রসারণ করা গেলে তাতে আমাদের রাজস্ব আদায় বাড়বে ফলে অর্থনৈতিক চাপ কমবে।

আরও পড়ুনঃ  নিরাপদ পানির জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার

এজন্য করোনার এই সাধারণ ছুটির সময়ে দ্রুত কর বিভাগ সম্প্রসারণের কাজ করা যেতে পারে। ফলে করোনা পরবর্তী সময়ে সম্প্রসারিত আয়কর বিভাগ আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে পারবে এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়।

লেখক :
কাওসার শাহীন
সাবেক শিক্ষক
যোগাযোগ ও গণমাধ্যম শিক্ষা বিভাগ
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ-ইউডা

সংবাদটি শেয়ার করুন