শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পর্যটনে নতুন দিগন্ত নিমতলী বিচ

পর্যটনে নতুন দিগন্ত নিমতলী বিচ
বিশাল আকৃতির এত সুন্দর সমুদ্র সৈকত দেশের আর কোথাও নেই। সুন্দরের দিক থেকে কক্সবাজারের চেয়েও কোনো অংশে কম নয়। একদিকে বিশাল মাঠ, পাশে কেউড়া বাগান, অন্যদিকে সমুদ্র সৈকত। সব কিছুর সংমিশ্রণ রয়েছে এখানে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ দ্বীপের এই অঞ্চলকে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে: মাহবুব আলী, পর্যটন প্রতিমন্ত্রী

জনবসতির পরেই বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ, মাঠের মাঝখান দিয়ে সরু সড়ক, গাড়িতে ২০মি. যাওয়ার পর মিলবে সবুজ কেউড়া বাগান, বাগানের পরেই নদীর স্থল ঘেঁষে বিশাল সমুদ্র সৈকত। তিন বছর আগেও এটি ছিল জন-মানবহীন একটি স্থান। তবে বর্তমানে এখানে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসছেন নিমতলী সী-বীচে। হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়নের বিরিবিরি গ্রামের পূর্ব পাশে বেড়িবাঁধের বাইরে এ বীচের অবস্থান।

সরেজমিনে দেখা যায়, কেউড়া বাগানের পাশ থেকে বীচ পর্যন্ত বিশাল জনসমাগম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা মোটরসাইকেল ও জিপ গাড়িতে লোকজন আসছে এখানে। দুপুরের পর থেকে বীচে অবস্থান করা লোকজনের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মত। কেউ এসেছে পরিবার নিয়ে, কেউ প্রতিষ্ঠানের সহপাঠিদের নিয়ে বনভোজনে। বীচের এক পাশে যাত্রীবাহী গাড়ির বিশাল সারি। অন্যপাশে মাটির চুলা তৈরি করে হচ্ছে পিকনিক। গ্রুপে গ্রুপে চলে খাওয়ার আয়োজন। পাশে ছামিয়ানা লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। প্যান্ডেলে বড় বড় সাউন্ডবক্স লাগিয়ে বাজানো হচ্ছে গান। সপ্তাহে প্রতিদিনই চলে এমন আয়োজন। বীচটিকে ঘিরে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিমতলী সী-বিচ উন্নয়ন কমিটির আহবায়ক মোস্তফা ফয়সাল।

আরও পড়ুনঃ  সবুজ অর্থায়নে গতি

হাতিয়া মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির বনভোজনে আসা সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান জানান, শিক্ষদের চাহিদা অনুযায়ি নিমতলীতে সী-বিচকে বনভোজনের জন্য নির্ধারণ করা হয়। এখানে বিশাল সমুদ্র, সৈকত ও পাশে কেউড়া বন রয়েছে। শিক্ষকরা নিজের মত করে ঘুরতে পেরেছে। অনেকে মোটরসাইকেলে আসলেও মহিলা শিক্ষকরা এসেছে জিপ গাড়িতে। আসা যাওয়ার তেমন সমস্যা হয়নি। 

স্থানীয়দের মতে, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিনই ছুঁটে আসছে পর্যটকরা। গত ১৫ জানুয়ারি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বীচটি পরিদর্শনে আসেন। প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন হাতিয়ার সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জাবেদ আহাম্মেদসহ  উর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা।

নিমতলী সমুদ্র সৈকত পরিদর্শন শেষে সাংবাকিদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী জানান, বিশাল আকৃতির এত সুন্দর সমুদ্র সৈকত দেশের আর কোথাও নেই। সুন্দরের দিক থেকে কক্সবাজারের চেয়েও কোনো অংশে কম নয় এটি। একদিকে বিশাল মাঠ, পাশে কেউড়া বাগান, অন্যদিকে সমুদ্র সৈকত। সব কিছুর সংমিশ্রন রয়েছে এখানে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ দ্বীপের এই অঞ্চলকে ভ্রমনপিপাসুদের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।

নদীর স্থল ঘেঁষে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া এ সমুদ্র সৈকতে দর্শনার্থীদের পদাচারণা শুরু হয় ২০১৯ সালে। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি রাস্তা তৈরি করা হেেচ্ছ। জনবসতি থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দুরে এ সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যবস্থা নিয়েছে জাহাজমারা ইউনিয়ন পরিষদ। স্থানীয় ককেজন যুবকের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে নিমতলী উন্নয়ন কমিটি। কমিটির সদস্য ফরিদ উদ্দিন জানান, কমিটির সদস্যরা প্রতিনিয়ত পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করে থাকেন। ইতিমধ্যে কমিটির তত্ত্বাবধানে চালু করা হয়েছে একটি রুচিশীল খাওয়ার হোটেল। ব্যবস্থা করা হয়েছে অস্থায়ী শৌচাগার। ভ্রমণপিপাসুদের বাড়তি আনন্দ দিতে বীচে বসানো হয়েছে রঙিন চাতাসহ বসার টেবিল। নদীর মধ্যে তৈরি করা হয়েছে বিশাল কাঠের সেতু। রাত্রি যাপনের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে তাবুর।

আরও পড়ুনঃ  মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ১৯ লাখ অ্যাকাউন্ট খুলেছে পোশাক শ্রমিকরা

জাহাজমারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মাসুম বিল্লা বলেন, নিমতলী সমুদ্র সৈকতটি এখন হাতিয়ার জন্য অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। সাধারণ পর্যটকদের আগমন বেড়েছে অনেক। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি পর্যটন প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সাবেক সংসদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী নিমতলী পরিদর্শন করেছেন। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাটামোগত উন্নয়ন করে পর্যকটদের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য সবাই আন্তরিক আছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন