শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চারকোলমিলে পরিবেশ দূষণ

চারকোলমিলে পরিবেশ দূষণ

রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ও খানখানাপুর ইউনিয়নে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে অবৈধভাবে পাটখড়ির ছাঁই থেকে কার্বন তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। কারখানার ছাঁই ও কালো ধোঁয়ায় মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর। শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষ। একই কারণে কমছে ফসলি জমির উৎপাদনও।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের দর্পনারায়ণপুর গ্রামে দৌলতদিয়া-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে এবং খানখানাপুর ইউনিয়নের চর খানখানাপুর গ্রামে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে পৃথক দু’টি চারকোল কারখানা। এসব কারখানায় পাটখড়ির ছাঁই থেকে ৈ তৈরি করা কার্বন চীনে রফতানি করা হয়। যা চীনে মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ, কার্বন পেপার, ফটোকপির কালি, আতশবাজি, ফেসওয়াশ ও প্রসাধন তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

আবাসিক এলাকায় শিল্প ও কল-কারখানা স্থাপনে বিধি নিষেধ থাকলেও চারকোল কারখানার মালিকেরা কারখানা পরিচালনা করে যাচ্ছেন।

জানা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনে আনা হয় পাটখড়ি। এরপর সেগুলো বিশেষ চুল্লিতে লোড করে আগুন জ্বালানো হয়। ১২ ঘণ্টা জ্বালানোর পর চুল্লির মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে কোনোভাবে অক্সিজেন প্রবেশ করতে না পারে। এভাবে চারদিন রাখার পর সেখান থেকে বের করে ক্র্যাশিং করে কার্বন প্যাক করা হয়। চুল্লি জ্বালানোর সময় কারখানা থেকে প্রচুর ধোঁয়া বের হয়। এ ধোঁয়াতেই মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষিত হয়।

আরও পড়ুনঃ  প্রবাসে অপপ্রচারকারীদের উপযুক্ত জবাব দিতে হবে

গ্রামের ইমরান হোসেন জানান, ধোঁয়ার সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে। এসব পদার্থ বাতাসের সঙ্গে মিশে গাছপালায় লাগে। এতে এলাকার গাছপালায় কোনো ফল হয় না। আমের মৌসুমেও গাছে মুকুলের দেখা পাওয়া যায় না। রাতে ঘরে শুয়ে থাকলে সকালে কাশির সঙ্গে ছাঁই বের হয়।

আরেক বাসিন্দা আলম শেখ জানান, এ কারখানার কারণে আশপাশের এলাকার ফসলি জমিরও উৎপাদন কমে গেছে। কৃষকরা জমিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেও ফলন বাড়তে পারছেন না। তাই দ্রুত এ কারখানাটি এখান থেকে অপসারণ করার দাবি জানাই।

দর্পনারায়ণপুর গ্রামের চারকোল কারখানার মালিক আতিকুর রহমানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কারখানা পরিবেশবান্ধব। আমাদের পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রও রয়েছে। তবে সেটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। দ্রুত আমরা মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করব।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুর রহমান জানান, বেশি পরিমাণ কার্বন নির্গত হলে বাতাসের সঙ্গে কার্বন অনুগুলো মিশে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমাসহ ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদি রোগ এবং বিভিন্ন প্রকার চর্ম রোগের শঙ্কা থাকে।

পরিবেশ অধিদফতরের ফরিদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডি) এ এইচ এম রাসেদ জানান, রাজবাড়ীর কোনো চারকোল কারখানারই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব চারকোল কারখানার বিরুদ্ধে দ্রুতই অভিযান চালানো হবে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মার্জিয়া সুলতানা জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। যে কারণে চারকোল কারখানার বিষয়টি তার জানা নেই।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন