শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাপাসিয়ার সমতলে পাহাড়ের চা

কাপাসিয়ার সমতলে পাহাড়ের চা

চা চাষের কথা বা বাগানের নাম শুনলেই মুখে উচ্চারিত হয় সিলেট অঞ্চলের কথা। সবুজের ঢেউ খেলানো বিশাল বিশাল চা বাগানের দৃশ্য হয়তো চোখে ভেসে উঠবে। তেমনি আরো মনে হতে পারে দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের কথাও। দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চল কিংবা উচুঁ টেক, টিলা ছাড়াও যে সমতল ভূমিতেও ‘চা চাষ’ সম্ভব তা প্রমাণ করেছেন দীর্ঘদিন চা বাগানের সঙ্গে জড়িত এক বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান।

অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমানের গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের চিনাডুলি গ্রামে। পৈত্রিক বাড়ির পাশে অব্যবহৃত তাঁর নিজের সমতল ভূমির প্রায় ৩ বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন চা বাগান। কাপাসিয়া থেকে বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন করার অসাধ্য কাজটি সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য রাতদিন কাজ করছেন চা বাগানি অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান। ইতিমধ্যে তাঁর বাগান থেকে সবুজ চা তৈরি শুরু হয়েছে এবং খুব শিগগিরই তিনি বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন।

অধ্যাপক লুৎফর রহমান জানান, গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় হলেও বেড়ে উঠা ছিলো মূলত চায়ের রাজধানী খ্যাত সিলেটে। সিলেট এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে (১৯৭৩-২০০৮) তিনি সিলেট অঞ্চলের প্রায় ১৪-১৫টি চা বাগানে দীর্ঘ ৪০ বছর ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সব চা বাগানের মাটির সঙ্গে কাপাসিয়া অঞ্চলের মাটির গুণগত মানে অনেক মিল খুঁজে পেয়েছেন তিনি। তাই বহুদিন যাবৎ কাপাসিয়ায় চা চাষের পরিকল্পনা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাঁকুরগাঁও, নীলফামারী, জামালপুর এবং ময়মনসিংহ জেলায় চা চাষের ব্যাপক সফলতায় তার আগ্রহ বহুগুণ বেড়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ  একদিনে মৃত্যু ৪৭, নতুন আক্রান্ত ২৬৬৬

তাই গত দুই বছর আগে সিলেট থেকে কিছু চা চারা এনে প্রাথমিকভাবে সমতল এঁটেল মাটিতে সেগুলো রোপন করেন এবং আশানুরূপ ফলাফল পেয়ে তিনি পর্যায়ক্রমে আরো চারা রোপন করেন। গত পাঁচ বছরে তিনি দুই একর জমিতে করেছেন ক্ষুদ্র তিনটি চা বাগান। যা চমৎকারভাবে বেড়ে উঠছে। বর্তমানে প্রায় ৩ বিঘা জমিতে তিনি চা বাগান গড়ে তুলেছেন।

তিনি আরো জানান, চা বাগানের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো- চা গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকতে পারবেনা। কিন্তু মাটিতে পানি ধরে রাখার সক্ষমতা থাকতে হবে। তাই তিনি তার বাগানে পানি সেচের এবং ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন। আর চা বাগানে সিম জাতীয় কাঠ গাছ রোপনের নিয়ম থাকলেও তিনি সাধারণ কাঠ গাছই লাগিয়েছেন। প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে উৎপাদনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একর প্রতি ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি বছরে প্রতি একর থেকে ১ লাখ টাকার ওপরে আয় করা যাবে।

তিনি আরো জানান, যদি সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারি তাহলে বাগান থেকে ৩৫-৪০ বছর পর্যন্ত চা পাতা সংগ্রহ করা যাবে। আর এখন কুঁড়িগুলো দিয়ে সবুজ চা তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে বাগান থেকে ৫-৬কেজি পাতা তোলা যায়। আর ঐ পাতা থেকে ১ থেকে দেড় কেজি সবুজ চা (গ্রিণ টি) পাওয়া যায়।

এদিকে এক কেজি সবুজ চায়ের দাম ১ হাজার টাকার ওপরে। আর এই চা চট্টগ্রাম চা অকশনে পাঠাই। সেখানেই এই চা বিক্রি করা হয়। তার চা বাগানে বর্তমানে প্রায় ৬ জন শ্রমিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। তবে এখনো এই চা বাগান থেকে মুনাফার মুখ দেখতে পাইনি। মনে আশা পোষণ করছি, আগামী বছরগুলোতে মুনাফা থাকবে।

আরও পড়ুনঃ  রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক বলেন, আমাদের গাজীপুর তথা কাপাসিয়া বাসীর জন্য সু-খবর যে কাপাসিয়ায় চা চাষ শুরু হয়েছে, যা স্থানীয় লোকজনের জন্য খুবই আনন্দের বিষয়। এ ব্যাপরে কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সকল ধরনের সহযোগীতা থাকবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন