শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাকরি ছেড়ে ‘কিষাণী’

চাকরি ছেড়ে ‘কিষাণী’

আমের মৌসুমের প্রিয়জনদের আম পাঠাতেই হয়। সেই সঙ্গে ভালো মানের ফল বা অন্য পণ্যের সংকট দেখা দেয় বেশ। চারিদিকে ফরমালিনের ছড়াছড়ি। ফরমালিন মানুষের কপালে ভাঁজ ফেলেছিল। সেই সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ফরমালিন মুক্ত আম চাইতেন। আফসানা আকতার বেশ কষ্ট করে নিজে বাগানে গিয়ে গিয়ে আত্মিয়-স্বজনদের ফরমালিনমুক্ত আম পাঠাতেন। অনলাইনে এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই স্বজনদের কাছ থেকেই অনুপ্রেরণা পান আফসানা। সেই চিন্তা থেকেই ২০২০ সালের দিকে অনলাইন ভিত্তিক বাজার ‘কিষাণী’। দিনে দিনে কিষাণী এখন খাদ্যের গুণগত মান ও পুষ্টির প্রতিক হয়ে উঠেছে। তাদের স্লোগানই হচ্ছে ‘কিষাণীই জানে, বিশুদ্ধতার মানে’।

আফসানার বাসা রাজশাহী নগরের মহিষবাথান এলাকায়। বাবা, মা ও ছোট ভাই আদর আল আইয়ানকে নিয়ে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। সেখান থেকেই তার ব্যবসা পরিচালনা করেন। তার বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার নন্দীগ্রামে। বাবা আনছার আলী আত্রাইয়ের একটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর নিয়েছেন। আফসানা নাটোরের রানি ভবানী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। এর পর থেকেই রাজশাহী শহরে বাস। ২০১৪ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন রাজশাহী কলেজ থেকে। করতেন চাকুরি। তবে, সেটিতে মন বসাতে পারেননি আফসানা।

২০১৬ সালে আম দিয়ে শুরু। এখন কিষাণীর তালিকায় আছে ১৬টির বেশি পণ্য। এর অন্যতম নারিকেল তেল, সরিষার তেল, কুমড়াবড়ি, মধু, খেজুর গুড়, ঘি ও মধু। এসব পণ্যের মানের বিষয়ে আফসানা বেশ সচেতন। মানের দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ায় ‘কিষাণী’ সুনাম এখন বেশ।

আরও পড়ুনঃ  দক্ষিণের চাল-ফল বাণিজ্যে সুবাতাস

কিষাণীর স্বত্বাধিকারী আফসানা আকতার বলেন, খাবারে ফরমালিন। বিষয়টি আমি মন থেকে মেনে নিতে পারি না। আমার ইচ্ছে মানুষের হাতে অর্গানিক পণ্যে তুলে দিবেন। এমন ইচ্ছে থেকেই ‘কিষাণী’ নামে ফেসবুকে পেজের যাত্রা। প্রথমে স্বজনদের নিয়ে শুরু। পণ্যের মানের কারণে তা ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মাঝে।
কিষাণীকে মানুষের কাছে বিশ^াসযোগ্য করে তুলতে বেশ কষ্ট পোহাতে আফসানাকে। নিজের মধ্যে বিশ^াস তৈরি না হওয়া পর্যন্ত তিনি গ্রাহকের জন্য তা পছন্দ করেন না।

কিষাণীর স্বত্বাধিকারী আফসানা আকতার বলেন, আমরা নিজেই আগে পণ্যের মান যাচাই করি। নিজেরাই পণ্য পরিক্ষা করি। যেমন খেজুর গুড় তৈরি করার বিষয়ে আমরা বসে থেকেই মান যাচাই করে নেই আগে। তারপর গ্রহকের জন্য পছন্দ করি। পণ্যের মানের বিষয়ে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেই না।

এ বিশুদ্ধতার সঙ্গি করেই কিষাণীর গ্রাহক সংখ্যা ৬ হাজারের বেশি। যদিও কিষাণী একটি অনলাইন প্লাটফম। তারপরেও রাজশাহী নগরের মহিষবাথান এলাকায় বাসায় তার অফিস। এখন থেকেই পণ্য গ্রাহকের কাছে পাঠানো হয় সারাদেশে। কিষাণীতে শুধু আফসানা নিজেই সফল নয়। তার এ কিষাণী ঘিরে হয়েছে ১৬ জন মানুষের কর্মসংস্থান। কিষাণী’র যেমন পরিসর বাড়ছে তেমন কর্মসংস্থানের সংখ্যাও বাড়ছে।

কিষাণী’র আফসানা বলেন, আমি নিজে উদ্যোক্তা। সেই সঙ্গে আমার বেশ ভালো লাগে যে আমি কয়েকজনের কর্মসংস্থানের উৎস। এছাড়াও আমার ছোট ভাই ‘কিষাণী’র ম্যানেজার হিসেবে যুক্ত আছে। এই নিয়ে বেশ ভালো আছি। আমি চাই মানুষ অর্গানিক খাবার যেন খায়। বিষমুক্ত খাবার খেলে মানুষ সুস্থ থাকবে। মানুষ ভালো থাক, সুস্থ ও আনন্দে থাক এটাই আমার চাওয়া।

আরও পড়ুনঃ  ভাড়া বাড়ে সেবা কমে

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন