শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতে কাঁপছে কুড়িগ্রাম

শীতে কাঁপছে কুড়িগ্রাম

ঠান্ডাতে হাত পাও লাইগতেছে, হামাক কাইয়ো কিছু দেয় না। চরোত বাড়ি হওয়ায় খুব কষ্ট হবার নাইগছে। গরু-ছাগল নিয়ে খুব কষ্টে আছি। ঠান্ডায় কেঁপে কেঁপে একথা বলেন, পাঁচগাছি ইউনিয়নের ছড়ার পাড় এলাকার বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া (৬৭)। উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজারহাট আবহাওয়া অফিস এখানকার  সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঠান্ডাতে হাত পাও লাইগতেছে, হামাক কাইয়ো কিছু দেয় না। চরোত বাড়ি হওয়ায় খুব কষ্ট হবার নাইগছে। গরু-ছাগল নিয়ে খুব কষ্টে আছি

এতে করে কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে মানুষজন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত শুরুর পরই জেলাজুড়ে নামছে শীতের পারদ। ঘনকুয়াশায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। শীত ও কনকনে ঠান্ডায় বিপাকে পড়েছেন খেটেখাওয়া, দিনমজুরসহ নিম্নআয়ের মানুষজন। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে অনেকেই।

পাঁচগাছি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ট্রাক শ্রমিক নওশেদ আলী (৬৮) বলেন, ঠান্ডাত হাত পাও শেংড়ে, হাত পাও ধরে, অবস হয়। গাড়ীত কাজ করি। এই ঠান্ডার মধ্যে কাজ করতে খুব অসুবিদে হয়। ঠান্ডার মধ্যে অসুবিদে হইলে আর কি করি পেট বাঁচা নাগবে।

শীতবস্ত্রের অভাবে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়ছেন জেলার সাড়ে চার শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের মানুষসহ শিশু ও বৃদ্ধরা। একই পরিস্থিতি নদ-নদী সংলগ্ন বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষজনেরও। শীতে গবাদি পশুগুলিকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। শীত উপেক্ষা করেই জীবন জীবিকার সন্ধানে ছুটে চলছেন শ্রমজীবী মানুষজন। সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তা জুটছে না অনেকের ভাগ্যে।

আরও পড়ুনঃ  কলাপাড়ায় উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা

সদর উপজেলার নওয়াবস এলাকার বাঁধে বসবাসরত ভানুমতি (৬৫) বলেন, হামাক কম্বল টম্বল কোনো নেম্বর চেয়ারমেন দেয় নাই। হেনে শীত যাবাইছে এতো, কই কম্বল টম্বল কোনো কিছুই দেয় না। আইসেও না, দেয়ও না। শুনি বলে কম্বল আইচ্ছে। কই পুরান নেম্বরও না কয়, নয়া নেম্বরও না কয়।

ভোর থেকেই ঘনকুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে পথঘাট। এদিকে শীতের কারণে কাজে যোগদিতে ঘর থেকে বের হওয়া শ্রমজীবীরা পড়েছেন বিপাকে। সকাল থেকেই কাজের সন্ধানে শহরমুখী রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিক, ঘোড়ার গাড়ি চালক, দিনমজুর ও ব্যবসায়ীদের কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করেই দুর্ভোগ নিয়েই শহরে আসতে দেখা গেছে। শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন চরাঞ্চলসহ বাঁধ সমুহে আশ্রয় নেয়া মানুষজন।

জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, সরকারিভাবে জেলার ৯টি উপজেলার জন্য বরাদ্দের ৩৫ হাজার ৭শ কম্বল ও ১ কোটি ৮ লাখ টাকার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি সংগঠনগুলো যেসব শীতবস্ত্র দিয়েছে সেগুলোরও বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।

রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, কুড়িগ্রাম জেলাজুড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা পুরো জানুয়ারিজুড়ে অব্যাহত থাকতে পারে।

আনন্দবাজার/এম.আর

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন