প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রত্যেকটি গ্রামকে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন করে গড়ে তোলা হবে। যাতে মানুষ গ্রামে বসবাস করলেও সবধরণের নাগরিক সুবিধা পেতে পারে। তাদেরকে অন্য কোথাও ছুটোছুটি করতে হবে না। এখানেই হবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। সেজন্য ‘আমার গ্রাম আমার শহর কর্মসূচি’ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার।
তিনি এসব উন্নয়ন কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে সকলকে সহযোগিতার ও অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল রবিবার সকালে রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তর কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুর বিভাগীয় কমপ্লেক্স মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি আধুনিক ও প্রযুক্তি জ্ঞানভিত্তিক জাতি হিসেবে দেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে রুপান্তর করাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের দেয়া নির্বাচনী ইশতেহারের উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ি সকল উন্নয়ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ এবং আমাদেরকে আরো এগিয়ে যেতে হবে, এ লক্ষ্যে আমরা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি।
তিনি বলেন, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। ২০১০ থেকে ২০২০ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি অর্জন করেছি। আজকে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। সেজন্য ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি সেটাও বাস্তবায়ন হবে ইনশাল্লাহ এবং বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আর কেউ ভবিষ্যতে থামাতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, ক্ষয় ক্ষমতা বেড়েছে। মানুষ অনেক স্বচ্ছল হবার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু আমরা চাই আমাদের আরো অনেক দূর যেতে হবে জাতির পিতা এদেশকে নিয়ে এ দেশের মানুষকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন- ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়বেন, আমাদের লক্ষ্য আমরা সেটাই গড়তে চাই।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল ওয়াহাব ভূঞা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
নবনির্মিত রংপুর বিভাগীয় কমপ্লেক্সের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার রংপুর এবং আশপাশের জেলার সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নত করছে এবং যমুনার ওপর পৃথক রেল সেতু নির্মাণ করছে। আমরা দ্রুত রেলের ব্যবস্থা করছি, চারলেনের ঢাকা রংপুর মহাসড়ক ৬ লেনের করা হয়েছে। প্রত্যেকটি বিভাগীয় সড়ককে আমরা চারলেনের করে দিচ্ছি আর হাইওয়ে ৬ লেনের করে দিচ্ছি। রংপুরসহ সকল বিভাগে ফুপ টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তা ছাড়া সরকারি সবগুলো দপ্তর যেন এক জায়গা থেকে মানুষকে সেবা দিতে পারে সেজন্য আজকে রংপুরে অত্যাধুনিক বিভাগীয় কমপ্লেক্স করে দেয়া হল। শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই রংপুরবাসী এই সুবিধাগুলো পেয়েছেন, সেটা ভুললে চলবে না।
এবার শীত একটু বেশি পড়েছে তাঁর সরকারের পাশাপাশি বৃত্তশালীরাও যেন শীতবস্ত্র বিতরণ করে দরিদ্র মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে, সে আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় কুড়িগ্রাম থেকে শুরু করে গাইবান্ধা, নীলফামারি সব জায়গায় একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত দুর্ভিক্ষের সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা যাই, সেখানে লঙ্গরখানা খুলে খাদ্য সাহায্য করি। যতবার বন্যা হয়েছে, দুর্ভিক্ষ হয়েছে ততবারই আমরা সেখানে গিয়েছি। গঙ্গাচড়া থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী, প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোন জায়গা বাদ দেইনি। সেখানে সে সময় যাতায়াত ব্যবস্থা বলে কিছু ছিলনা, রাস্তা-ঘাট ছিলনা, নদীর পার দিয়ে কাদামাটি ভেঙ্গে হেঁটে যেতে হয়েছে।
আনন্দবাজার/এম.আর