শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় ১১ বছর

ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় ১১ বছর

ফেলানী হত্যা—-
বহুল আলোচিত ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফে’র গুলিতে নিহত ফেলানী হত্যার ১১ বছর পূর্তি হয় ৭ জানুয়ারি (শুক্রবার)। এ দিনই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষি বাহীনি বিএসএফ। দীর্ঘদিন ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে ফেলানী হত্যার বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ২০১১ সালের এ দিনে তার মৃতদেহ কাঁটাতারে ঝুলে ছিল প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা। প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল গণমাধ্যমসহ বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ভারতকে। ফেলানী হত্যার টানা ১১ বছর অতিবাহিত হলেও ফেলানীর পরিবার এখনো বুক বেঁধে আছে ন্যায় বিচারের আশায়।

আন্তর্জাতিক চাপেরমুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগষ্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফ’র কোর্টে স্বাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা এবং মামা হানিফ। একই বছর ৬ সেপ্টেম্বর আসামী অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফ’র বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাখান করে পুন:বিচারের দাবী জানায় ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পূর্ন:বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে স্বাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত আসামী অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়। আবারও রায়ে সন্তুষ্ট হতে না পেরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষামঞ্চ ‘মাসুম’ ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রীম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানী শুরু হয়। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনা শুরুর আগে শুনানীর দিন ধার্য হলেও শুনানী হয়নি এখনো। এদিকে মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ফেলানীর পরিবার।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে আগ্রহ সার্বিয়ার

স্থানীয় দুলাল মিয়া ও ছকিনা বেগমসহ অনেকেই জানান, ফেলানী হত্যাকারী বিএসএফ সদস্যের সঠিক বিচার হলে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে কোনো বাংলাদেশি আর প্রাণ হারাবে না। তাই আমরা ফেলানী হত্যার দ্রুত বিচারের দাবী জানাচ্ছি।

ফেলানীর বাবা নুরু ইসলাম নুরু জানান, আমার মেয়ে হত্যার ন্যায় বিচারের আশায় দীর্ঘ ১১ বছর ধরে অপেক্ষা করেও ভারতীয় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ বিচার হয়নি। আমি মেয়ে ফেলানীর হত্যার বিচার দেখে মরতে চাই। ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ফেলানীকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করার সময় আমি ভারতেই ছিলাম। পরে দুই দেশের সরকারে মাধ্যমে বাড়ীতে আসতে পারি। একটা সন্তান হারা যে কত কষ্টে। আজ ১১ টা বছর পার হয়ে গেল ন্যায় বিচার পাইনি। তাই দুই দেশের সরকারের কাছে আকুল আবেদন মেয়ে ফেলানী হত্যার বিচার দ্রুত সম্পূর্ণ করার অনুরোধ করছি।

কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকন জানান, ফেলানী হত্যার রিট ভারতের সুপ্রিম কোর্টে শুনানীর জন্য কার্যতালিকার তিন নম্বর পর্যন্ত উঠেছিলো। কিন্তু পরে তা বাদ দেওয়া হয়। এরপর করোনা পরিস্থিতিতে থমকে যায় বিচার কাজ। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।

প্রসঙ্গত, কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে মেয়েকে নিয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ফেলানী ও তার বাবা নুরুল ইসলাম নুরু। সেখানে কয়েক বছর থাকার পর কিশোরী মেয়েকে নিজ দেশে বিয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন তিনি। সেদিন ছিল ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি শুক্রবার। ভোর ৬ টার দিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন বাবা ও মেয়ে। বাবা নুরুল হক কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে পার হতে পারলেও মেয়ে ফেলানী কাঁটাতারে উঠতেই বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ গুলি চালালে কাঁটাতারেই ঢলে পড়ে ফেলানীর নিথর দেহ। সেখানে সাড়ে ৪ ঘণ্টা ঝুলে থাকার পর তার লাশ নিয়ে যায় বিএসএফ। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ৩০ ঘন্টা পর বিজিবি’র কাছে লাশ হস্তান্তর করে বিএসএফ।

সংবাদটি শেয়ার করুন