শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উত্তরে তীব্র শীতে বাড়ছে মৃত্যু

উত্তরে তীব্র শীতে বাড়ছে মৃত্যু
  • শীতজনিত রোগে মারা গেছে ১১ জন
  • আগুনে দগ্ধ হয়ে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৬

শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরের জেলাগুলোতে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ১০দিনে শীত নিবারনে আগুনে দগ্ধ হয়ে উত্তরের ৮ জেলায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৬ জন। পাশাপাশি এ ১০ দিনে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১১ জন শিশু ও বৃদ্ধ মারা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্যবিভাগের পরিচালক ডা. জাকিরুল ইসলাম লেলিন আনন্দবাজারকে তথ্যগুলো নিশ্চিত করেন।

অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত ব্যক্তিরা হলেন, রংপুরের মিঠাপুকুরের সামছুন্নাহার (৪৫) দিনাজপুরের চিরিবন্দরের রহিমা বেওয়া (৬২) ও কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ গ্রামের জয়রণ বেওয়া (৫৯)।

উত্তরে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এতে বিপাকে পড়েছেন অসহায়, দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষেরা। কনকনে শীতে খড়কুটো জ্বালিয়ে কেউ কেউ চেষ্টা করছেন শীত নিবারণের। আর এতেই অসাবধানতাবশত ঘটছে আগুনে দগ্ধ হওয়ার ঘটনা। আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে গত ১০ দিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬ জন।

রংপুরসহ এ অঞ্চলের ৮ জেলা থেকে আসা অগ্নিদগ্ধ বিভিন্ন বয়সী শিশু ও নারীদের হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসাধীন ২৬ জনের মধ্যে সবশেষ দুইদিনে ভর্তি হয়েছেন আটজন দগ্ধরোগী। এর মধ্যে এক বৃদ্ধাসহ দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দগ্ধরোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, উত্তরের জেলাগুলোতে গত একসপ্তাহ ধরে শীতের তীব্রতা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। শীত নিবারণে গ্রামাঞ্চলে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহানোর প্রবণতা বেড়েছে। আগুন পোহাতে গিয়েই সতর্কতার অভাবে অনেকে দগ্ধ হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেশিরভাগ দগ্ধরোগী নারী ও শিশু। বার্নইউনিটে এসব রোগী এখন পোড়াক্ষতের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।

আরও পড়ুনঃ  পর্যটকদের জন্য খুলেছে কক্সবাজার

বার্ন ইউনিটে কথা হয় ওমর আলী নামে এক যুবকের সঙ্গে। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা থেকে মাকে নিয়ে এসেছেন তিনি। অগ্নিদগ্ধ মায়ের উন্নত চিকিৎসা নিয়ে চিন্তিত ওমর বলেন, বাড়িতে আগুন পোহানোর সময় আমার মা হাজরা খাতুনের পরনের কাপড়ে আগুন ধরে যায়। এতে তার শরীরের ৬০ ভাগেরও বেশি দগ্ধ হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে এখনো ঢাকায় নিতে পারিনি।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার লালদিঘী ফতেপুর গ্রামের মমতাজ উদ্দিন বলেন, তার ১০ বছরের শিশু সালামের পাসহ শরীরে বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়েছে। খড়খুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গেলে তার চাদরে আগুন ধরে যায়। বার্ন ইউনিটের এক বেড থেকে আরেক বেড ঘুরে এসে এক বৃদ্ধাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন রুপালী বেগম। কাছে গিয়ে জানা গেল ওই বৃদ্ধা তার শাশুড়ি। তারা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে রংপুরে এসেছেন। রূপালী বেগম বলেন, ফজরের নামাজ পড়ার পর বাড়ির বাইরে আগুন পোহাতে গিয়ে আমার শাশুড়ির শাড়ির পেছনে আগুন লাগে। আগুনে তার শরীর ঝলসে গেছে। প্রথমে তাকে ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনই রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই ইউনিটে রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত বছর শীত মৌসুমে ২৫ জনের বেশি নারী দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

রমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এ হামিদ পলাশ বলেন, শীতের সময় রংপুর অঞ্চলে আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানতার কারণে নারী ও শিশুরা বেশি দগ্ধ হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ২৬ জন নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে দুজন বৃদ্ধার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা তাদের ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় তারা যেতে রাজি হননি। সে কারণে এখানেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  বর্ণাঢ্য আয়োজনে মহিলা দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

আনন্দবাজার/এম.আর

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন