শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

টেনশন বাড়াচ্ছে ওমিক্রন-

  • ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে শঙ্কা
  • ৯ দিনে ৫০ ভাগের বেশি সংক্রমণ
  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান

রাজশাহী মহানগরীর সেখপাড়া এলাকার শাহিন (৪৬)। ছোট্ট একটা মুদির দোকান দিয়ে তার সংসার চলতো। টানা লকডাউনের কারণে জমানো পুঁজি খেয়ে শেষ। লকডাউন ছুটলেও শাহিন আর দোকান দিতে পারেনি। এর মধ্যেই তার অর্থ শেষ হয়ে গেছে। সম্প্রতি আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে আবার মুদি দোকান শুরু করেছেন। চলছিলও বেশি। কিন্তু এর মধ্যেই কপালে চিন্তার ভাঁজ দীর্ঘ হয়ে উঠছে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপট চলছে। দেশেও করোনার অন্য ভেরিয়েন্টসহ ওমিক্রন সংক্রামণের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। গত ৯ দিনে করোনা ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

তবে ওমিক্রনের শঙ্কায় কপালে চিন্তার ভাঁজ শুধু শাহিনের একারই নয়। করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে যারা তাদের ব্যবসা নতুনভাবে শুরু করার চেষ্টা করছিলেন তাদের সবাই জন্যই ওমিক্রন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ (বুধবার পাওয়া তথ্য অনুযায়ি) দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মারা গেলেন ২৮ হাজার ৯০ জন। গত ৪ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ৮৯২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮০৭ জন। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

গত ৯ দিনের ব্যবধানে দেশে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। বিদায়ী বছরের ২৭ ডিসেম্বর নতুন করে সংক্রমিত হয় ৩৭৩ জন। তবে ৯ দিনে পরে ৮৯২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সামনের পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্য অধিদফতরও নড়েচড়ে বসেছে। দেশে প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমণ আবারও বাড়তে থাকায় নতুন করে আর নির্বাচনের তফসিল না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির এ আহ্বান জানান। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা, সাধারণ মানুষের প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।

আরও পড়ুনঃ  নাব্যতা ফিরবে বেতনায়

এদিকে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চার দিনের ব্যবধানে ৪ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে করোনায় একজন এবং উপসর্গ নিয়ে তিনজন মারা গেছেন। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার রাজশাহীতে করোনা পরীক্ষায় ৯৪ জনের মধ্যে পজিটিভ আসে ৭ জনের। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ৬৩ জনের মধ্যে ১১ জনের করোনা পজিটিভ আসে। এর আগে সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর রামেক হাসপাতালে একজন করোনা সংক্রমণে মারা যান। এরপর ১ জানুয়ারি সকাল ৯টার পর থেকে ৪ জানুয়ারি সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা মৃত্যুহীন ছিল করোনা ইউনিট। এমন পরিস্থিতিতে করোনা যে আবার ঘরের দরজায় চোখ রাঙাচ্ছে তা বুঝায় যায়। যার কারণে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে চিন্তা বাসা বাঁধতে শুরু করেছে।

রাজশাহী মহানগরীতে ফুটপাতে কাপড় ব্যবসায়ী আফতাব বলেন, লকডাউনের পরে অনেক কষ্ট করে ব্যবসা আবার শুরু করেছি। আবার যেভাবে করোনা বাড়ছে তাতে বেশ চিন্তায় পড়েছি। আবার লকডাউন আসলে পথে বসতে হবে।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, পাশের দেশ ভারতে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। আমাদের দেশে এ হার এখনোও কম। তবে এরই মধ্যে কয়েকজনের দেহে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানার উপরে জোর দিতে হবে। বিগত সময়ে করোনার কারণে ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণির মানুণ চরম ক্ষতির মুখে পড়েছিল। সবচেয়ে ভালো হয় আমাদের অর্থনীতির চাকা চালু রেখে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা। এতে জীবন ও জীবিকা উভয়ই ঠিক থাকবে।

আরও পড়ুনঃ  সুপেয় পানি সুবিধার বাইরে ৫২ শতাংশ মানুষ

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন