টিন ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের নান্দনিক ঘর যুগযুগ ধরে বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের জনপথের ঐতিহ্যবহন করে আসছে। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে দু’তলা, দেড় তলা, এক তলার চৌচালা কারুকাজ সম্পন্ন টিনের ঘরের খ্যাতি। প্রতিটি বসত বাড়িতেই দেখা মিলে নজরকারা টিনের ঘরের। টিনের ঘরের চাহিদা বেশি থাকায় অনেকেই রেডিমেট ঘর বিকিকিনির ব্যবসা করছেন। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বালাশুর, ভাগ্যকুল, কামারগাঁও এলাকায় সারিসারিভাবে রেডিমেট ঘর তুলে রাখা হয়েছে। বিক্রমপুরের এসব রেডিমেট ঘর যাচ্ছে ফরিদপুর, দোহার, নবাবগঞ্জ, নারিসাসহ বিভিন্ন এলাকায়।
সরেজমিন দেখা যায়, শ্রীনগর-দোহার আন্ত:সড়কের বালাশুর বটতলা ও কামারগাঁওয়ে ঘরের মেলা। খোলা ময়দানে টিন ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইন ও আকারের ঘর ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়ছে। ঘর তৈরির কাজে বেশ কিছু শ্রমিক ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঘরে ব্যবহার করা হচ্ছে উন্নতমানের ঢেউটিন, প্লেনশিট ও বিভিন্ন ধরণের লোহা কাঠ। ব্যবসায়ি আজিজুল মোল্লা বলেন, করোনার কারণে ঘরের ব্যবসায় কিছুটা মন্দা যাচ্ছে। মহাজনদের চাহিদা অনুযায়ী তিনি ঘর তৈরীর অর্ডার নেন। ২১, ২৩ ও ২৫ বন্ধরের বিভিন্ন ডিজাইন ঘর তৈরি করছেন। একেকটি ঘর তৈরিতে এক মাস সময় লাগে। এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক ঘর তৈরির কাজ করছেন। ব্যবসায়ী বাবু সারেং বলেন, গত ২৫ বছর যাবত ঘর তৈরির কাজ করছি। ২০২১ সালে মহাজনের কাছে ৬টি ঘর বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।
জানা যায়, এসব ঘরের দাম হাঁকানো হয় উচ্চতা, টিন-কাঠের মান এবং ডিজাইন ও সাইজের ওপর ভিত্তি করে। এক তলা একটি ঘরের দাম সর্বনিম্ন ২ লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা, দেড় তলা ৩ লাখ থেকে ৪ লাখা টাকা, দু’তলা ঘর বিক্রি করা হয় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ঘরের অর্ডার নেওয়া হয়ে থাকে।
এসব ঘরে নাইজেরিয়ান, সুপার, বাচালু, ওকান ও মিমবাসু নামক লোহা কাঠের ব্যবহার করা হচ্ছে। ঘরের পাটাতনে দেওয়া হচ্ছে কালী কড়ই, মেহগনিসহ অন্যান্য জাতের কাঠ। বেড়া ও চালের জন্য উন্নতমানের প্লেনশিট এবং ঢেউটিনের ব্যবহার হচ্ছে। একটি ঘরের স্থায়ীত্ব ধরা হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত। নান্দনিক এসব রেডিমেড টিনের ঘর এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের চাহিদা পূরণ করছে। শ্রীনগর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী লৌহজং উপজেলার মালিরঅঙ্ক, ঘৌড়দৌড়, কনকসারসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে রেডিমেট ঘরশিল্প।
আনন্দবাজার/এম.আর