শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটবাসীর স্বপ্ন পূরণ

সিলেটবাসীর স্বপ্ন পূরণ
  • একনেকে চার লেনের অনুমোদন
  • দেড় মাসের মধ্যেই নির্মাণ শুরু
  • কমবে নগরীর যানজট-দুর্ঘটনা

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সিলেটের কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সভায় সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। প্রকল্পটি অনুমোদনের ফলে জাতীয় মহাসড়ক মানে উন্নীত হবে সড়কটি। এতে ব্যয় হবে ৭২৭ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গভর্মেন্ট অর্ডার (জি.ও), ব্যাকগ্রাইন্ড কাজ ও টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে দেড় মাসের মধ্যে সড়কটিতে চার লেনের কাজ শুরু হবে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

জানা যায়, বর্তমান দুই লেনের সড়কটি বেহাল। প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক নির্মাণ করা হয় ২০১২-১৪ অর্থবছরে। পরবর্তীতে পাথরবাহী ট্রাক চলাচল, বিমানবন্দর অভিমুখীদের সুবিধা এবং পর্যটকবাহী যান চলাচলের জন্য সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি ওঠে। এ প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। পরের বছর চার লেন সড়কের সঙ্গে দুটি সার্ভিস লেন যুক্ত করে তৈরি করা হয় সংশোধিত প্রস্তাবনা। কিন্তু ২০১৯ সালে শুধু চার লেনের প্রস্তাবনা জমা পড়ে মন্ত্রণালয়ে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের তৈরি প্রস্তাবিত চার লেনের নকশায় ত্রুটি থাকায় সে সময় শুরু হয়নি কাজ।

এদিকে, আওয়ামী লীগ সর্বশেষ মেয়াদে সরকার গঠনের পর সিলেট-১ আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে গতি আনার চেষ্টা করেন। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে সড়কটি চার লেন করার বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে একটি প্রস্তাবনা আসে। পরবর্তীতে ২৫ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে আসা সুপারিশগুলো প্রতিপালন করার পর সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটি একনেকের বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করে এবং অবশেষে গতকাল সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় ফাঁকা রাজধানী

কাজ শুরুর বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল বিকেলে দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, গভর্মেন্ট অর্ডার (জি.ও), সড়কের ব্যাকগ্রাইন্ড কাজ ও টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে দেড় মাসের মধ্যে চার লেনের কাজ শুরুর আশা করছি। আর ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

তিনি আরও জানান, ব্যাকগ্রাইন্ড কাজের মধ্যে রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ, সড়কের বাঁধে মাটির কাজ, সয়েল ট্রিটমেন্ট, রিজিড, ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট, বাস-বে নির্মাণ, ইন্টারসেকশন উন্নয়ন, পিসি গার্ডার সেতু এবং আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা মহাসড়ক। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াতে প্রধান এবং একমাত্র বিকল্প পথও এটি। একইসঙ্গে সড়কটি সিলেট শহরের যানজট এড়ানোর জন্য বাণিজ্যিক যানবাহনের ডাইভারশন হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সড়কটি সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ছয় কিলোমিটার কুমারগাঁওয়ে শুরু হয়ে বাদাঘাট দিয়ে অতিবাহিত হয়ে ওসমানী বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বাদাঘাট লিংক রোডসহ সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৭৮০ কিলোমিটার এবং বিদ্যমান প্রস্থ পাঁচ দশমিক ৫০ মিটার।

বর্তমানে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ থেকে পাথর বহনকারী ট্রাকগুলোর সিলেট শহরের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে। এতে নগরীর অন্যতম কেন্দ্রস্থল আম্বরখানা ইন্টারসেকশনে দীর্ঘ যানজটের তৈরি হয়। এতে সময়ের অপচয় ছাড়াও আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে।

কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক চার লেনে উন্নীত হলে পাথরবোঝাই ট্রাকগুলো সেই সড়ক দিয়ে জাতীয় মহাসড়ক এন-২’তে সহজেই পৌঁছাতে পারবে। এতে সিলেট নগরীর মধ্যে যানজট কমবে, বেপরোয়া ট্রাকের কারণে নগরীতে নিয়মিত ঘটা দুর্ঘটনাগুলোও কমে আসবে।

আরও পড়ুনঃ  তলিয়ে যাচ্ছে পাট, দিশেহারা কৃষক

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ওসমানী বিমানবন্দরে যাতায়াতকারীরাও উপকৃত হবেন। বর্তমানে এ বিমানবন্দরটি দুই লেন বিশিষ্ট সংযোগ সড়কের মাধ্যমে সিলেট নগরীর সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু বিমানবন্দরটি বিকল্প সংযোগ সড়ক থাকা প্রয়োজন। কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়কটি আপগ্রেডেশন হলে এ চাহিদা পূরণ হবে।

আনন্দবাজার/এম.আর

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন