শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুষ্ঠু পরিকল্পনা মাফিক কাজের ফলেই দেশ হয়েছে উন্নয়নশীল

সুষ্ঠু পরিকল্পনা মাফিক কাজের ফলেই দেশ হয়েছে উন্নয়নশীল

সুষ্ঠু পরিকল্পনা মাফিক কাজের কারণেই বাংলাদেশ স্বপ্লোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, আমরা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করেছিলাম ১৯৯২ সালে। সেই আলোকেই পরবর্তীতে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে ’৯৬ এ ক্ষমতায় আসি। তখন থেকেই পরিকল্পনা মাফিক কাজ শুরু করি যার ফল বর্তমানে জনগণ পাচ্ছে। দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।

গতকাল রবিবার রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ আয়োজিত স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এফসিএ, এমপির সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, সম্মানিত অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি প্রমুখ।

‘স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ, জোরসে চলো বাংলাদেশ’ স্লোগানে অনুষ্ঠানটি সকাল ১০টায় শুরু হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’ স্লোগানে গত নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম। সে আলোকে বলবো তরুণরাই দেশের মূল শক্তি। তাদেরকে গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল-এমডিজি ও সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল-এসডিজিকে সামনে রেখে আমরা কাজ করেছি। তার কারণেই দেশের এ অর্জন। সরকারের ১৩ বছরের ধারাবাহিক শাসনের কারণে এটি দ্রুত অর্জিত হয়েছে। এ কারণে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনসমূহ, দেশের আপামর জনসাধারণকে ধন্যবাদ জানাই। সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণের ফলেই দেশ এই উচ্চতায় যেতে সক্ষম হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ডায়রিয়ার দায় ওয়াসার নয়

তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলার মানুষ মুক্তি পাবে। সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই সপরিবারে তাকে হত্যা করে বাংলাদেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধিও পেছনের দিকে নিয়ে যায় সেনা শাসকরা। তারা নিজেরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করলেও জনগণের ভাগ্যে জুটে নির্যাতন আর নির্মমতা। আমরা তা থেকে জনকল্যাণের কাজ শুরু করি। এখন বাংলাদেশ বিশে^র সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে চলছে।

বিমানবাহিনীর দূরন্ততরুণ হেলালুজ্জামান পান্না ১৯৭১ সালের ক্যান্টনমেন্ট থেকে ছুটে এসেছিলেন রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে। পরবর্তীতে যুদ্ধে অংশ নিয়ে ১১ নাম্বার সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। পেয়েছেন বীরপ্রতীকের খেতাব। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজ যা অর্জন করতে ৫০ বছর লাগলো তা আরো ১০ দশ বছর আগেই সম্ভব হতো। এটিকে তিনি গর্বের বিষয় বলে উল্লেখ করেন।

মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আলী এসেছেন দিনাজপুর থেকে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। তিনি ৭ নং সেক্টরের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ত্রিশূলে নভেম্বর মাসে মিত্রবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানী ক্যাম্পে হামলার সময় আহত হন।

সাদেক আলী বলেন, দেশ যেভাবে দূর দূর করে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমরা গর্বিত। এ দেশকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ এগিয়ে নিতে পারবে না। তিনি তার বাবার মতো মানুষকে ভালোবেসে কাজ করছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ডিসি অফিস থেকে শুরু করে সরকারি নানা অফিসে মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন করা হয়। শেখ হাসিনা আমাদের মূল্যায়ন করলেও অফিসে আমাদের কথা ও কাজকে দাম দেয় না। তখন খুব কষ্ট হয়। তার কথায় সুর মেলানে পাশে বসে থাকা একাধিক মুক্তিযোদ্ধা।

আরও পড়ুনঃ  ঝিনাইদহে এক খেজুরগাছের ২২ মাথা!

সাদেক আলী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আরো কয়েকবছর দেশ পরিচালনা করতে পারলে আমরা আরো অনেক আগেই স্বল্পোন্নত হতে উন্নয়নশীল এমনকি উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হতে পারতাম।
ড. শিরীন শারমিন, এমপি বলেন, তিনটি মানদণ্ড পূরণ করে বাংলাদেশ স্বপ্লোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করেছে। এটিকে জাতিসংঘ মিরাক্কেল বলে অভিহিত করেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সংবিধান প্রণনয়, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নকরণ ও ১১৬টি দেশের স্বীকৃতি অর্জন ছিল বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে উল্লেখযোগ্য কাজ। পিতার সেই আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশে^র ৪১ স্থানে অর্থনৈতিক দেশ। ২০২১ সালের রুপকল্পের আলোকে এগিয়েছে দেশ। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়নসহ সবক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের পেছনে রয়েছে সরকারের ধারাবাহিকতা। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা এখন বিশ^নেতা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সব প্রতিবন্ধকতাতে দূর করে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ঐতিহাসিক বছরে স্বপ্লোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বিশাল অর্জন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ অর্জন। স্বাধীনতার পর ৩৮ বছর লেগেছিল ১০০ বিলিয়ন রিজার্ভ করা। মাত্র এক দশকে অর্জিত হয়েছে ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামী অর্থবছরে তা ৫০০ বিলিয়নে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স ছিল মাত্র ৬ দশমিক ১ শতাংশ বিলিয়ন। বর্তমানে তা ৪৭ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। ২০৩০ সালে ৩১তম ও ’৩৬ সালে ২৪তম অর্থনৈতিক দেশ ও ৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তথা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে উঠবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে।

আরও পড়ুনঃ  তেল বিক্রিতে লোকসানে বিপিসি

ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশ শুরুতে ৮৮ শতাংশ বৈদেশিক অনুদানে চলতো সেখানে বর্তমানে তা মাত্র ৪ শতাংশ। এমনকি বিশে^র অন্যান্য দেশকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের খাদ্যসংকট ছিলো। দেশে ৩৩ শতাংশ খাদ্যসহায়তার প্রয়োজন হতো। বর্তমানে তা স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশকে ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর জাতিসংঘ স্বপ্লোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের সবগুলো সূচকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

অনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন