মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বদলে যাচ্ছে রংপুর

বদলে যাচ্ছে রংপুর
  • জটিলতা কাটছে ৬ লেনের কাজে
  • নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা
  • চলছে ফ্লাইওভার-ওভারপাস নির্মাণ

বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দিনবদলের এ সময়ে উন্নয়নের মোড়কে সমৃদ্ধ হচ্ছে উত্তরের জনপদও। বিশেষ করে ভাওয়াইয়ার দেশখ্যাত রংপুরকে বিভাগ ঘোষণা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি করপোরেশন, মেট্রোপলিটনসহ অনেক অবকাঠামো এখন দৃশ্যমান। উন্নয়নের এ মহাসড়কে আরেকটি অর্জন হতে যাচ্ছে সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলমান প্রকল্প ‘রংপুর-ঢাকা ছয় লেন মহাসড়ক’।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় বহুল প্রত্যাশিত রংপুর-ঢাকা ছয় লেন মহাসড়কের নির্মাণকাজ। এর কয়েক মাস যেতে না যেতেই মহামারি করোনাসহ বন্যা, অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতারও ধকল গেছে ব্যয়বহুল এ প্রকল্পের কাজে। এত কিছুর পরও থেমে নেই কাঙ্খিত এ মহাসড়কের নির্মাণকাজ। দিন যতই যাচ্ছে, ততই নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থেকে রংপুরের নগরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ ৫১ কিলোমিটার এ মহাসড়কের ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নানা সমস্যা ও সংকট কাটিয়ে ছয় লেনের এই মহাসড়কের পুরো দৃশ্যমান হয়েছে পীরগঞ্জ এলাকায় প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকা। এর মধ্যে শুধু এক কিলোমিটারে পুরো প্রকল্পের একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় কাটছে নির্মাণ শ্রমিকসহ প্রকৌশলীদের। অত্যাধুনিক আন্ডারপাস নির্মাণসহ মহাসড়কে নতুন চমক রয়েছে বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী প্রয়াত ড. ওয়াজেদ মিয়া তোরণ।

অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন এ তোরণটি পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুরে নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে রংপুর জেলায় প্রবেশ করতেই নজর কাড়বে সাদা মনের মানুষখ্যাত এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াত স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার প্রতিকৃতি।

আরও পড়ুনঃ  দোকান-পাট-শপিংমল খোলা থাকবে ৪টা পর্যন্ত

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থেকে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর হয়ে রংপুর নগরীর প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড় পর্যন্ত হবে ৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়ক। ইতোমধ্যে এ মহাসড়কের ওপর সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। পীরগঞ্জের বড়দরগা থেকে রংপুর মডার্ন মোড় পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৫ কিমি. মধ্যে ১৪ কিলোমিটার সড়কের দুই ধারে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে যে জটিলতা দেখা দিয়েছিল, তারও সমাধান হয়েছে। জরিপকাজও শেষ হয়েছে। এখানকার ২৩ কিমি. সড়কের মধ্যে ১৮ কিমি. নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। পলাশবাড়ী থেকে বড়দরগা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়কের ৭ নং প্যাকেজের আওতায় ছয় লেনের নির্মাণকাজ প্রায় ৫০ ভায় ৪৫ ভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে। কাজের গতি প্রতিদিন বেড়েই চলছে। চলতি ২০২২ সালের মধ্যে ছয় লেনের রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

সড়ক নির্মাণ প্রকল্প প্যাকেজ ৭ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আফিদ হোসেন জানান, ৫২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থেকে রংপুরের পীরগঞ্জের বড়দরগা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে পীরগঞ্জের খেদমতপুর এলাকায় তিন কিলোমিটার ও পীরগঞ্জ এলাকায় তিন কিলোমিটার সড়কে ছয় লেন দৃশ্যমান হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ২৪০ একর জমির হুকুমদখল নেওয়া হয়েছে। জমির মালিকদের রংপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। ৭ নম্বর প্যাকেজের আওতায় মহাসড়কের দুই পাশে ৩০টি কালভার্টের মধ্যে সবগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  দেশে করোনায় আরও ২৬ মৃত্যু

মহাসড়কের গাইবান্ধার পলাশবাড়ী অংশে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। যার পরিধি হবে ১৭৬ মিটার। এছাড়া পীরগঞ্জের ধাপেরহাটে, লালদিঘিতে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। ছয় লেনের এ সড়কের মধ্যে চার লেনে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল করবে। বাকি দুই লেনে চলাচল করবে স্বল্পগতির হালকা যানবাহন।

সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের প্যাকেজ-৮ এর পীরগঞ্জের বড়দরগা থেকে রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কের জন্য ৪৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রকৌশলী আফিদ হোসেন আরও জানান, এই নির্মাণকাজের আওতায় ১৭টি কালভার্ট, চারটি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে বড় দুটি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে, যা এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এদিকে ছয় লেনের এ মহাসড়কের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার দাবি জানিয়েছেন রংপুরের সচেতন মহল। একই সঙ্গে উন্নয়নের স্বার্থে ভূমি জটিলতা নিরসনে প্রশাসনকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ী বাজার এলাকার সবুজ আহম্মেদ বলেন, আমরা সবাই উন্নয়ন চাই, তবে কোন কাজে সহযোগিতা করতে চাই না। দেরিতে হলেও রংপুরে ছয় লেন মহাসড়ক হচ্ছে। এর জন্য আমরা আনন্দিত।

নির্মাণকাজ যাতে দ্রুত শেষ হয়, সেদিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে। একই এলাকার এরফান হক বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে উন্নয়ন কার্যক্রম অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে। এই প্রকল্পে যেভাবে কাজ হচ্ছে, তাতে ২০২৩ সালেও নির্মাণ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদারকি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের সবার একটু ছাড় দিবে হবে।

আরও পড়ুনঃ  ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে  করোনাভাইরাস

আনন্দবাজার/এজে

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন