শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সেবা পাচ্ছেন না যাত্রীরা

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী

গণপরিবহনে যাত্রী সেবার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও গাফিলতি দায়ী। এ কারণেই প্রতিনিয়ত এ খাত থেকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তাদের কখনোই জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয় না। এর পেছনে বড় কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। সরকার যদি তদারকিতে শতভাগ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে এবং যাতায়াতের প্রাপ্য সুবিধাগুলো পুরোপুরি দিতে পারে তাহলে এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারবে।

গণপরিবহনে যাত্রী সেবার মান নিয়ে আনন্দবাজারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন কথাই বললেন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছে আনন্দবাজারের প্রতিবেদক নাঈম কামাল।

রাজধানীতে চলাচলরত লক্ষাধিক গণপরিবহনের মধ্যে অর্ধেকেরই ফিটনেস নেই উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক আরো বলেন, দশ বছরের জন্য অনুমোদন দেয়া হলেও সেগুলো চলছে সর্বোচ্চ ৪০ বছর পর্যন্ত। চলাচলের অনুপোযোগী এসব বাস আবার ভাড়া আদায় করছে নতুন বাসের সমান। রাজনৈতি সদিচ্ছার অভাব এবং সমস্যা সমাধানে আগ্রহ নেই কর্তৃপক্ষের। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোরর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কার্যকর ভূমিকা না থাকার কারণে ভাড়া দিয়েও কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন যাত্রীরা।

দেশ ডিজিটাল হলেও ফিটনেস যাচাই পদ্ধতি এখনো এনালগ রয়ে গেছে এমন দাবি করে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ডিজিটাল সিস্টেমে ফিটনেস যাচাই করলে যারা কখনোই ফিটনেস পাবে না তারাও পাচ্ছে ফিটনেস। এখানে আধুনিকায়নের ছিটেফোঁটাও নেই। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নির্দিষ্ট করে দেয়ার পরও অধিক আসন যুক্ত করা, ভাঙাচোরা জানালা, ছাদ বেয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করা, লক্কর-ঝক্কর গণপরিবহনেই প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে সাধারণ মানুষ। এছাড়া তাদের ভিন্ন কোনো পথও খোলা নেই। কীভাবে এসব পরিবহন চলাচলের উপযোগী হয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন রেখে মোজাম্মেল হক বলেন, কর্তৃপক্ষকে কাগজ ছেড়ে ডিজিটালে আসতে হবে। তাহলেই সড়কে ফিরবে শৃঙ্খলা, যাত্রীরা পবেন তাদের প্রাপ্য সেবা।

আরও পড়ুনঃ  আশ্রয়ন প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে

চালকদের লাইসেন্সেও সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক বলেন, পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে দেয়া হচ্ছে ড্রাইভিং লাইসেন্স। এছাড়াও বাসগুলো সড়কে চলছে দৈনিক ইজারা চুক্তিতে। কোম্পানির চাঁদা, সড়কের চাঁদা ও সরকারি চাঁদা দিতে হয় শ্রমিকদের। বাস মালিকদের এমন নৈরাজ্যে প্রতিদিনই লঙ্ঘিত হচ্ছে মুনাফা অর্জনের শর্ত। খিটখিটে হচ্ছে চালক-হেল্পারদের মেজাজ। প্রতিনিয়তই বাকবিতণ্ডা হচ্ছে যাত্রীদের সঙ্গে। খিটখিটে মেজাজের কারণে সড়কে বাসে বাসে প্রতিযোগিতা চলে নিয়মিত। এতে করে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। এসব নিয়ে কিছু বলতে গেলে যাত্রীদের লাঞ্ছিত ও অপমাণিত হতে হয়। ফলে সম্মানের ভয়ে চুপসে যান অনেকে। দৈনিক ইজারা চুক্তি বাতিল করে বেতনভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগের দাবি জানিয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, এতে করে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।

গণপরিবহনের তুলনায় অতিরিক্ত যাত্রীর বিষয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, পরিবহন সঙ্কটে মানুষ বাধ্য হয়ে গাদাগাদি করে যাতায়াত করছে। যাতায়াতের বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও নেই। বর্তমানে রাজধানীতে সাড়ে ৮ লাখ মোটরসাইকেল আছে। পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য সিএনজি। এসব মোটরসাইকেল এবং সিএনজি অনেকটাই যাত্রী চাপ কমিয়েছে। সরকারের উচিৎ বিকল্প ব্যবস্থা করে দেয়া। আলাদা সাইকেল-মোটরসাইকেল লেন করে দেয়া। মানুষের জন্য হাঁটার পরিবেশ তৈরি করা। তাহলে মানুষ নিশ্চিন্তে ঝুঁকিহীনভাবে যাতায়াত করতে পারবে। সড়কে যানজট কমবে। যাত্রীরা পাবে প্রাপ্য সেবা।

যাত্রীদের পরামর্শ দিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, সেবার মানের বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তাদের প্রাপ্য অধিকার বুঝে নিতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া দেয়া যাবে না। কোনো পরিবহন অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সবখানে অভিযোগ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের ন্যায্যতা বুঝে নিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত: প্রতিমন্ত্রী

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন