মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫০ বছরেও মেলেনি বীরাঙ্গণা স্বীকৃতি

৫০ বছরেও মেলেনি বীরাঙ্গণা স্বীকৃতি

শ্রমিকের কাজেই জীবন ব্যয়

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য নারীদের বীরাঙ্গণা উপাধি দেন। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সেই স্বীকৃতি পাননি অনেক বীরাঙ্গণা নারী! মুক্তিযুদ্ধের পর সম্মানহারা নারীদেরকে বীরাঙ্গণা নামে অবিহিত করা হয়। তেমনি একজন নাটোরের লালপুরের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের হায়াত মালিথার কন্যা ইটভাটা শ্রমিক বীরঙ্গাণা নারী রোকেয়া বেগম রাকিয়া (৬৭)। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারিভাবে তার ভাগ্যে জুটেনি কোনো সুযোগ-সুবিধা।

সরেজমিন রামকৃষ্ণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটায় রোকেয়া বেগম পুরুষদের সঙ্গে মাটি টানার কাজ করছেন। বয়সের কারণে কাজ করতে কষ্ট হলেও পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে কাজ করছেন। এ বিষয়ে এমএইএ ইটভাটার মালিক মো. হাসেম আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রোকেয়া ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। রোকেয়ার পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২০ জুলাই পাকিস্তান সেনাবাহিনী নাটোরের লালপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রাম রামকৃষ্ণপুরে অতর্কিতভাবে ঢুকে পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। এছাড়া তারা বাড়িঘর লুটপাট ও আগুনে পুড়িয়ে দেয়। অস্ত্রের মুখে মা-বোনদের নির্যাতনে মেতে ওঠে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রোকেয়ার বয়স ছিল ১৭ বছর। বছরের পর বছর ধরে রোকেয়া বাবা-মা, ভাই-বোনের সামনেই সম্ভ্রম হারানোর মানসিক কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছেন।’ রোকেয়ার ভাই আজহার আলী বলেন, ‘বাবা-মা অনেক অনুনয়-বিনয় করলেও কোনো লাভ হয়নি। তাঁদের সামনেই বোনকে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে মা ও বাবা দুজনই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ ঘটনার কয়েক দিন পর পরিবারের সবাই বন্যার পানিতে সাঁতরে বাথান বাড়ি ও রগমারী হয়ে ভারতের জলঙ্গিতে চলে যায়। সেখানে কলিমপুর শরণার্থীশিবিরে ৫ মাস থাকার পর দেশে ফিরে আসি। এরপর স্বাধীনতার দেড় বছরের মাথায় নিমতলীর ছইর মোল্লার ছেলে ছোয়াহার সঙ্গে রাকিয়ার বিয়ে হয়। কিন্তু যুদ্ধকালীন ঘটনা জানার পর স্বামী তাঁকে তালাক দেন। এরপর বুধপাড়া গ্রামের আজিজ শেখের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তবে স্বামী মারা গেলে গোপালপুর (মাধবপুর) গ্রামে দিনমজুর সন্তানের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে ইটভাটায় কাজ করে জীবন যাপন করছেন বীরাঙ্গণা রোকেয়া বেওয়া।’

আরও পড়ুনঃ  করোনা মোকাবেলায় প্রশাসনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বৈঠক

আজহার আলী আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৫ মে লালপুর-গোপালপুর সড়কের শিমুলতলা নামক স্থানে রোকেয়ার বড় ভাই টমটমচালক (ঘোড়ার গাড়ি) হাবিবুর রহমানসহ গাড়িতে থাকা ৬জন যাত্রীকে পাকিস্তানি বাহিনী গুলি করে হত্যা করে।’ রোকেয়া বেগম রাকিয়া বলেন, ‘বীরাঙ্গণার স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছি কয়েকবার। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। স্বীকৃতি পেলে সব কষ্ট ভুলে থাকব।’

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আবদুল মোত্তালিব বলেন, ‘বীরাঙ্গণা রোকেয়া বেগম রাকিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মুল বানীন দ্যুতি বলেন, ‘বীরাঙ্গণার স্বীকৃতির জন্য রোকেয়া বেগম রাকিয়ার আবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’

আনন্দবাজার/এম.আর

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন