বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লক্ষ্য মালিকরা টাকা যাবে যাত্রীদের

সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল গঠন
  • জ্বালানির টাকায় সড়ক মেরামত
  • বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে যাত্রীদের
  • বেড়ে যাবে পণ্য পরিবহন ব্যয়
'সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল বোর্ড বিধিমালা-২০২১' এর খসড়ায় সড়কের যানে ব্যবহৃত জ্বালানির দাম থেকে রক্ষণাবেক্ষণ চার্জ আদায়ের প্রস্তাব'

সব ধরণের মোটরযানে ব্যবহৃত পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, সিএনজি বা এলএনজিসহ যেকোন জ্বালানির মূল্য থেকে প্রতি লিটার ও ঘনমিটারে এক টাকা করে আদায় করে তা মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সংস্কারে ব্যয় করবে সরকার। ‘সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল বোর্ড বিধিমালা-২০২১’ এর খসড়ায় সড়কপথে চলাচলকারী মোটরযানে ব্যবহৃত জ্বালানীর মূল্য থেকে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ চার্জ আদায়ের এ প্রস্তাব করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও পেট্রোবাংলার বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোটরযানে ব্যবহৃত প্রতি লিটার জ্বালানি তেল এবং প্রতি ঘনমিটার সিএনজি ও এলএনজিতে এক টাকা হারে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ চার্জ আরোপ করা হলে মোটরযান মালিকদের দৈনিক বাড়তি গুনতে হবে ১৪ কোটি টাকারও বেশি, যা বছরে দাঁড়াবে প্রায় ৫২৭০ কোটি টাকা। এর প্রভাবে বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে যাত্রীদের, পণ্য পরিবহন ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে ডিজেলের দাম বাড়ার পর যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক যানবাহনে ব্যবহৃত কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাসের পরিমাণ ১৩ দশমিক ৩৬ কোটি ঘনফুট। অর্থাৎ, এ খাত থেকে দৈনিক সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ তহবিলে জমা হবে ১৩ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে যোগাযোগ খাতে ৩৯ দশমিক ৬৪ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করেছে বিপিসি। লিটারে এক টাকা হারে চার্জ আরোপ হলে জ্বালানি তেল থেকে বছরে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ চার্জ পাওয়া যাবে ৩৯৬ কোটি টাকা।

আরও পড়ুনঃ  সংবাদ প্রকাশের পরও ভোলায় পল্লী বিদ্যুৎ এর কোন কার্যক্রম নেই

বর্তমানে সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিবছর বাজেটে অর্থ বরাদ্দ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণে বরাদ্দ ছিল ২৬৮৭ কোটি টাকা, যার প্রায় পুরোটাই ব্যয় হয়েছে। সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল গঠন হলে এখান থেকেই অর্থ ব্যয় করা হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন পর্যন্ত সারাদেশে নিবন্ধিত মোটরযানের সংখ্যা ৪৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯৪৪টি। গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহনের বড় অংশই গ্যাসচালিত, অন্যদিকে ট্রাকসহ পণ্যবাহী যানবাহন ও মোটরসাইকেলগুলো তেলচালিত। সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ তহবিলে সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন নিবন্ধন ও চলাচলের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সব ধরণের ফি, ট্যাক্স, আমদানি শুল্কও এ তহবিলে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন সড়ক, সেতু ও ফেরি হতে আদায় করা টোলের শতভাগ এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আদায় করা টোলের ২৫ শতাংশ এই তহবিলে যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল ব্যবস্থাপনায় একটি বোর্ড গঠন করা হবে। বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয়ও এই তহবিল থেকে হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর প্রতি অর্থবছরের শেষ ৩ মাসের মধ্যে পরের অর্থবছরের জন্য সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের প্রস্তাবিত কর্মসূচি বোর্ডে পাঠাবে। বোর্ড অর্থবছরের প্রথম মাসে সভা করে প্রস্তাবিত কর্মসূচি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে তা অনুমোদন করবে। বোর্ডের অনুমোদিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। বাৎসরিক কর্মসূচি বাদেও জরুরি প্রয়োজনে বোর্ড সভার অনুমোদন সাপেক্ষে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে যেকোন জরুরি কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য অধিদফতরকে দায়িত্ব দিতে পারবে।

আরও পড়ুনঃ  মোহাম্মদপুরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছে ডিএনসিসি

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন