শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাড়ি ভাড়া জমা দিতে হবে ব্যাংকে

যেকোনো পরিমাণ বাড়ি ভাড়ার টাকা আদায় করলে তা ব্যাংক কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করার বাধ্যবাধকতা আসতে পারে আগামী অর্থবছর থেকে। ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনের বাধ্যবাধকতা আসতে পারে ১৫ হাজার টাকার বেশি যেকোনো পরিমাণ স্যালারি পরিশোধেও। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একবারে ৫০ হাজার টাকার বেশি ব্যয় করলেও ব্যাংকিংয়ের বাধ্যবাধকতা আসতে পারে আগামী অর্থবছর থেকে।

বর্তমানে ২৫ হাজার টাকার বেশি বাড়ি ভাড়া হলে তা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আদায়ের নির্দেশনা রয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পদে চাকরি করলেও সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ১৬ হাজার টাকা হলে টিআইএন নেয়া ও রিটার্নে উল্লেখের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এনবিআর সূত্র বলছে, অর্থনীতির আনুষ্ঠানিক খাত বড় করতে আগামী বাজেট থেকে বেতন, বাড়ি ভাড়ার পাশাপাশি ঠিকাদারির বিলকেও ব্যাংকিং চ্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। আগামী অর্থবছর থেকে ঠিকাদারি ও সরবরাহের যে কোনো পরিমাণ বিল ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বাহিরে হলে বিদ্যমান করহারের অতিরিক্ত ৫০ করারোপের প্রস্তাব করা হতে পারে।

অর্থনীতিকে আনুষ্ঠানিক খাতের অন্তর্ভুক্ত করতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের পর সব লেনদেনকে ব্যাংকিং চ্যানেলে করার এ বাধ্যবাধকতা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।

আয়কর বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাব পাস হলে এসব লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে হলে তা অনুমোদনযোগ্য ব্যয় হিসাবে গ্রহণ করা হবে না। তখন এসব আয় ও ব্যয় অবৈধ হিসাবে ট্যাক্স ও জরিমানা আদায়ের সুযোগ হবে।

“আইন অমান্য করলে প্রদেয় আয়করের ৫০ শতাংশ অথবা ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা (যেটি বেশি) জরিমানার বিধান রাখা হতে পারে,” বলছেন ওই কর্মকর্তা। আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিকে বড় করতে এমন উদ্যোগ নেয়া হলে তা কমপ্লায়েন্সের জন্য ভালো বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

আরও পড়ুনঃ  ঝুঁকিপূর্ণ আয়রন সেতু, সংস্কার জরুরি

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনুসর বলেন, “এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। দেশের অধিকাংশ বাড়িওয়ালা কর দেন না। স্টাফদের বেতনের সঠিক হিসাবও কেউ কেউ প্রকাশ করেন না। এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে সুশাসনের বাস্তবায়ন হবে। তবে তার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে”।

তিনি বলেন, “এর আগে বহুবার এমন ভালো ভালো উদ্যোগ এনবিআর নিয়েছে। বাড়ি বাড়ি জরিপ করেছে। কিন্তু বছর শেষে ফলাফল শূন্য থাকছে। এবার আইন করলে তা বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।”

এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে ২৫ হাজার টাকার বেশি বাড়ি ভাড়া হলে তা ব্যাংকের মাধ্যমে নেয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু বাড়িওয়াদের অধিকাংশই এখনো ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে ভাড়া উত্তোলন করেন। এখন পর্যন্ত কতজন বাড়িওয়ালা ব্যাংকের মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া নেয় তার সঠিক হিসাব এনবিআরের কাছে নেই।

এর আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে এনবিআরের ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে কর ফাঁকিবাজ বাড়িওয়ালাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। এক বছরেরও বেশি সময় জরিপ চালিয়ে এক লাখ ৬৬ হাজার বাড়িওয়ালার সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আয়কর দেয় না। এসব বাড়ির মালিককে নোটিশ দেয়া হলেও খুব অল্প সংখ্যক বাড়িওয়ালা এখন পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করছেন।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন