নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডের ভেতর কুনতং এ্যাপারেলস লিমিটেড (ফ্যাশন সিটি) এর সাড়ে ৬ হাজার শ্রমিক তাদের বকেয়া বেতনের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো শনিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। দুই দফায় পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আন্দোলত শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চিটাগাংরোড সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে আগুন জ্বালিয়ে যান চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। ফলে সড়কে সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে যাত্রী সাধারণ।
এদিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিসের সামনে একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা-মেট্টো-গ-৩৯-০১৪৮) গাড়ি ভাংচুর করে এবং কারের চালক নুর ইসলামকে মারধর করে আহত করে।
ফলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরাতে পুলিশ জলকামান দিয়ে পানি ছিটিয়ে ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আন্দোলত শ্রকিকরা জানায়, তাদের ৪ মাস ১০ দিনের বেতন বকেয়া পড়েছে। এছাড়া আরোও অন্যান্য পাওনা রয়েছে। কিন্তু মালিক তাদের কোন বকেয়া পরিশোধ করছে না। তাদের বাড়ি ভাড়া বকেয়া পড়েছে। বাসায় খাবার নেই। অত্যন্ত অমানবিক দিন কাটাচ্ছে হচ্ছে। ফলে নিরুপায় হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ফ্যাক্টরীর সামনে অবস্থান নিয়ে আমরা বিক্ষোভ করি। কিন্তু শন্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালে আকষ্মিকভাবে বেপজার আনসাররা শ্রমিকদের বেধড়ক লাঠি পেটা করে। এতে অনেক শ্রমিক আহত হয়। এই ঘটনার পর শ্রমিকরা আদমজী ইপিজেডের রেমি হোল্ডিংস ফ্যাক্টরীর সামনে সড়ক আবরোধ করে বিক্ষোভ করে। ওইদিন বেলা ২টায় ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল পুলিশ-৪ এর এসপি আইনুল হক এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শরিফ শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, মালিকপক্ষের সাথে তাদের কথা হয়েছে। তারা শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দিবে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আরও জানায়, গত বছরের ১০ আগস্ট হঠাৎ দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেয় মালিক। সেই বন্ধ পরবর্তীতে ক্রমশ বৃদ্ধি করতে করতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ হওয়ার পরেও শ্রমিকদের ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে বেতন পরিশোধ করে আসছিল। তার ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ বেতন দেয়নি।
কিন্তু মালিক পক্ষের কোন আশ্বাস না পেয়ে শ্রমিকরা দ্বিতীয়বারের মতো শনিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে পুনরায় আদমজী ইপিজেডের সামনে সড়ক অবরোধ করে বকেয়া পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এসময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্রমিকরা বলেন, আমাদের বকেয়া পাওনা কবে কখন দিবে আগে এটা বলেন। কোন সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে না পেরে নেতারা ফিরে যান। বেলা ১২ টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ যৌথভাবে এ্যাকশনে যায়। পুলিশের জলকামান ও টিয়ার সেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। তবে থেমে থেমে দুপুর ২টা পর্যন্ত পুলিশের সাথে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া চলে। সংঘর্ষে পারভেজ (২৩), জহির (২০), জরিনা (৩৫), মনোয়ারা (২৪), মনির (২৮), নাঈম (২৪), হাসান (২৫), মনি (২৮) সহ প্রায় ৩৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছে বলে জানায় শ্রমিকরা। তাদেরকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, বেপজা ও শিল্প পুলিশ কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেছে ১৮ জানুয়ারি ১ মাসের বেতন পরিশোধ করবে। কিন্তু শ্রমিকরা তা মানছেন না।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪-এর সিনিয়র এএসপি আইনুল হক জানান, আমরা মালিকপক্ষ থেকে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আদায় করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
আনন্দবাজার/শাহী/আহসান