সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে একটি ছোট ঘরে কয়েকজন মানুষ একজন ব্যক্তিকে টেনে হেচঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং পরবর্তীতে হাত-পা বেঁধে চেপে ধরে মারধর করছে। এতে ঐ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পরে জানা যায় নির্যাতিত ব্যক্তি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুল করিম।
রাজধানী ঢাকার আদাবরের ‘মেন্টাল এইড’ হসপিটালে সোমবার ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুরো ঘটনাটি স্পষ্ট হয়েছেন।
হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন আনিসুল করিম। তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্মীরা তাকে মারধরে করে হত্যা করে। এ ঘটনায় পুলিশ ও নিহতের পরিবার হত্যার অভিযোগে একটি মামলা করেছে। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত দশ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নিহত আনিসুল করিম ছিলেন ৩১তম বিসিএস যোগদানকারী পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি সর্বশেষ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন।
পুলিশের উপ কমিশনার হারুন-অর-রশিদ আজ মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তারা ভিডিও ফুটেজ দেখে ওই ভিডিওতে থাকা সবাইকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। অভিযুক্ত হাসপাতালটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং মানসিক চিকিৎসার হাসপাতাল পরিচালনার জন্য যেসকল লাইসেন্সের কোনটিই নেই।
অভিযুক্ত হাসপাতালটি ইতোমধ্যেই বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালটিতে ক’জন রুগী ভর্তি রয়েছেন। ভর্তি রোগীদের ছুটি হলেই হাসপাতালটি বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
পুলিশ জানায়, ভিডিও ফুটেজে যারা আনিসুল করিমকে টেনে হেচঁড়ে একটি বদ্ধ ঘরে নিয়ে যায় তাদের একজনও চিকিৎসক ছিলেন না। তাদের মধ্যে ৪ জন ওয়ার্ড বয়, ২জন সমন্বয়কারী, আর কয়েকজন পরিচ্ছন্নকর্মী ছিল। আটক হওয়া সবাই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে, আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। মামলাটি তদন্ত করবে পুলিশ।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে আনিসুল হককে মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যান তার ভাই রেজাউল করিম, সাথে তার ভগ্নীপতি ও বোন ছিলো। ভর্তি করানোর কিছুক্ষণ পরেই তাকে অজ্ঞান অবস্থায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে তাকে হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ৭ জন লোক এক ব্যক্তিকে জোর করে একটি বদ্ধ ঘরে নেয় এবং সেখানে সবাই মিলে তাকে উপুড় করে ফেলে ধরে-বেধে শারীরিক নির্যাতন করছে। পরে নিহত পুলিশ কর্মকর্তাকে সোজা করে শুইয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তাকে নড়াচড়া করতে দেখা যায়নি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিজেকে এবং অন্যকে যাতে আঘাত করতে না পারেন তার জন্য ওই কক্ষে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়ার সময় অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। সিসিটিভির ভিডিও বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলছে, এটা স্পষ্ট হত্যাকাণ্ড।
পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকে তার নিজের জেলা গাজীপুরের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার বন্ধু মো. কাওসার কিবরিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ময়না তদন্তের পর গত রাত ১১টার দিকে তার পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে জানাজার পর সাড়ে নয়টার দিকে তাকে দাফন করা হয়।
আনন্দবাজার/এহসান