সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে কালামুখ প্যারাপাখি বা সুন্দরী হাঁস। এই পাখিটিকি নিয়ে সব সময় আলোচনা করা হয়। সবারই ধারণা, সুন্দরবনে একমাত্র বিপন্ন প্রাণী বাঘ। কিন্তু বাঘের মতোই আরও কয়েকটি বিরল প্রাণী সুন্দরবনে আছে। তাদেরই একটি হলো কালামুখ প্যারাপাখি। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় মাসকেড ফিনফুট।
কিন্তু বর্তমানে এই পাখি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে এই পাখিটির উপরে গবেষণা চালানো হয়। দীর্ঘ ২৩ দিনের গবেষণায় উঠে আসে কালামুখ প্যারাপাখির বাসা ও পাখিগুলোর গতিবিধির সম্পর্কে নানা তথ্য।
গবেষকদের ধারণা মতে, সারা পৃথিবীতে এই জাতের পাখি টিকে আছে মাত্র ৫০০টি। তবে এই সংখ্যার অনেক বড় একটি অংশ দেখা যায় সুন্দরবনে। একটা সময় পাখিটির নিরাপদ আশ্রয়স্থল সুন্দরবন হলেও প্রতিবছরই ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে এর সংখ্যা।
তবে গবেষণাকালে মোট ২৫টি পাখির বাসার সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু এর মধ্যে অনেকগুলো পাখির বাসা পরিত্যক্ত অবস্থায় পায় গবেষকরা। সেই সাথে দুটি বাসায় দুই জোড়া পাখির প্রজননপ্রক্রিয়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে তারা। তবে স্থানটা ছিল চিটা-কটকা এলাকার একটা সরু খালের ভেতর।
গবেষণায় জানা যায়, ডিম দেওয়ার ১০ দিন পর পুরুষ পাখিটি স্ত্রী পাখিটিকে রেখে চলে যায়। সে আর কখনো ফিরে আসেনি। এটিই প্রজাতির পাখিটির স্বভাব। পরে মেয়ে পাখিটি একাই ডিম তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায়।
সারা পৃথিবীতে কালামুখ প্যারাপাখির আবাসস্থল সংকটই তার বিলুপ্ত হওয়ার প্রধান কারণ। সুন্দরবনের মূল সমস্যা হলো, জেলেদের অপরিকল্পিত মাছ ধরা। চারপাতা জাল দিয়ে জেলেরা মাছ ধরার সময় এই পাখিদের বাসা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এছাড়াও গহিন সুন্দরবনে জোয়ার-ভাটা পাখিটির জীবনে বড় প্রভাব আছে। কারণ পাখিটি ভাটার সময় খালের পাড়ে খাবার খোঁজে। ছোট মাছ, চিংড়ি, কীটপতঙ্গ আর কাঁকড়া এদের প্রধান খাবার। ফলে সুন্দরবনের জলে লবণাক্ততার প্রভাব পড়লে বেঁচে থাকায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে বলে গবেষকদের ধারণা।
তবে দেখতে হাঁসের মতো হলেও কালামুখ প্যারাপাখি কিন্তু হাঁস জাতের নয়। হলদেটে লম্বা ঠোঁট আর সবুজাভ পা দেখে অনেকে একে সুন্দরী হাঁস বলে দাবি করেন। বাংলাদেশে চারপাতা জালমুক্ত অঞ্চল গড়ে তুলতে পারলেই পাখিটি বড় আবাসস্থল হবে আমাদের সুন্দরবন।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে