ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্যাতনের শিকার মা-মেয়ের থানায় মামলা দায়ের

কক্সবাজার চকরিয়ায় উপজেলার মালুমঘাট হায়দারনাশীতে ছোট মেয়ে বেবি আক্তারের শ্বাশুড় বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। ওইদিন তাদের বহনকারী সিএনজি গাড়িটি হারবাং লালব্রীজ এলাকায় বিকল হয়ে যায়। এসময় গাড়িটি মেরামত করতে গিয়ে গরুচুরির অপবাদের শিকার হতে হয়েছে মা পারভীন বেগম এবং তার ছেলে-মেয়েদের।

জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার (২৫ আগষ্ট) বিকাল ৫টার দিকে নির্যাতনের শিকার পারভীন বেগম (৪০) বাদি হয়ে উপজেলার হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামসহ তার চার সহযোগির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ সময় কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবি ও মানবাধিকার কমিশনের এক কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে ৩৪১/ ৩২৩/ ৩৫৫/ ৩৭৯/ ৩৮৭/ ৫০০/ ৩৪ ধারা উল্লেখ করে চকরিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এজাহারে আরও ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী দেখানো হয়েছে। মামলার এজাহারে শ্লীলতাহানী, নির্যাতন, মারধর ও লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি আমিনুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনার সাথে জড়িত গ্রেফতারকৃত তিন আসামীকে গত সোমবার আটক করা হয়। মঙ্গলবার নির্যাাতিত পারভীন বেগমের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। যে কোন সময় তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক বরাবরে জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। নানা শ্রেণিপেশার মানুষেরও স্বাক্ষাতকার নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

এই ব্যাপারে মা-মেয়ের পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট ইলিয়াছ আরিফ জানান, গরু চুরির অপবাদে দায়েরকৃত মামলা থেকে মা-মেয়েসহ তিনজন জামিন লাভ করে। গতকাল মঙ্গলবার জামিনে মুক্ত পারভীন বেগম বাদী হয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। প্রধান আসামী ইউপি চেয়ারম্যান এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করার জন্য ওসি সাহেবকে অনুরোধ করেছি। যাতে মা-মেয়ে সুষ্ঠু বিচার পায়।

চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, নির্যাতনের শিকার হওয়া পারভীন আক্তার বাদী হয়ে ৪জনের নামে মামলা করেছে। অজ্ঞানামা ২০-৩০জনকে আসামী করা হয়। ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।

নির্যাতিত পারভীন বেগম জানায়, তার দুই ছেলে ও ৫ মেয়ে রয়েছে। দুই বছর পূর্বে তার স্বামী আবুল কালাম মারা যায়। এরপর থেকে সংসারের হাল ধরেন তিনি। তাদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া পৌরসভার আদিলপুর হলেও বর্তমানে বসবাস করেন পটিয়া উপজেলার কুসুমপুর ইউনিয়নের শান্তির হাট এলাকার শহীদের ভাড়া বাসায়। ঘটনার দিন সকালে দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট হায়দারনাশী নামক স্থানে ছোট মেয়ে বেবি আক্তারের শ্বাশুড় বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলাম।

পটিয়া থেকে মাইক্রোবাসে করে এসে সাতকানিয়া কেরানীহাটে ষ্টেশনে নামিয়ে দেয়। পরে আমরা একটি সিএনজি নিয়ে চকরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। দুপুর ১টার দিকে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের উত্তর হারবাং লালব্রীজে পৌছলে সিএনজি গাড়িটি খারাপ হয়ে যায়। সেখানে চালক গাড়িটি মেরামত করার সময় দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে ৬জন যুবক চোর চোর বলে ধাওয়া করে। ওইসময় প্রাণের ভয়ে চালক সিএনজি গাড়িটি জোরে চালিয়ে যেতে থাকে। ওই ৬ যুবক আমাদের পেছনে ধাওয়া করলে একপর্যায়ে চালক সিএনজি গাড়িটি হারবাং পহরচাঁদা নামক স্থানে ঢুকিয়ে দেন চালক। ওইখানে শোর চিৎকার দিলে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলেও হারবাং পরিষদের চৌকিদার ওই ৬যুবক রশি দিয়ে বেঁধে অমানষিকভাবে মারধর ও নির্যাতন করে। পরে তারা প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে রাস্তায় ঘুরিয়ে পরিষদে নিয়ে আসেন। পরিষদে আসার পর ইউপি চেয়ারম্যান ফের আমাদেরকে পেঠায় গুরুতর আহত করে পরে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

আনন্দবাজার/এইচ এস কে/ আর ডি

সংবাদটি শেয়ার করুন