মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টেকনাফে বেড়ে গেছে ইয়াবা পাচার

ওসি প্রদীপকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিনহা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন কাজে ব্যস্ত থাকায় এই সময়টাকে সুযোগ হিসেবে বেছে নিয়েছে মাদক কারবারিরা। টেকনাফে ওসি প্রদীপ কাণ্ড, সাঁড়াশি অভিযান, আত্মসমর্পণ ও বন্দুকযুদ্ধ কিছুই থামাতে পারছে না ইয়াবা পাচার। সবকিছু ছাপিয়ে প্রতিদিনই কোটি কোটি টাকার ইয়াবা পাচার হচ্ছে।

সরাসরি মিয়ানমার থেকে সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার চালান টেকনাফে এসে চট্টগ্রাম হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে।

মাঝে মধ্যে কিছু চুনোপুঁটি বন্দুকযুদ্ধে নিহত ও গ্রেপ্তার হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছে ‘ডন’রা। মাদক কারবারিরা চট্টগ্রামকে ইয়াবা পাচারের নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। মাদক কারবারিরা মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে চট্টগ্রামে আনার পর সুযোগ বুঝে সারা দেশে নিত্যনতুন কৌশলে পাচার করছে ইয়াবা।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারাদেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে সরকার। এতে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় ক্রসফায়ারের পরিসংখ্যান। গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু কক্সবাজার জেলায় পুলিশ, বিজিবি ও র‍্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৮৭ জন।

এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে ১৭৪, বিজিবির সঙ্গে ৬২ ও র‍্যাবের সঙ্গে ৫১ জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। আর টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ১৬১ জন। টেকনাফে কাউন্সিলর একরাম বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় এরপরই থমকে যায় অভিযান।

জানা গেছে, প্রতিদিনই মিয়ানমার থেকে দেশে ঢুকছে বড় বড় চালান। চেনা পথগুলো বদলে নতুন পথ দিয়েই সেগুলো আনছে চোরাচালানিরা। অনেকে বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান লোক দেখানো।

আরও পড়ুনঃ  বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ৬৯জনের মাঝে ৫০ হাজার টাকার অনুদান প্রদান

ইয়াবা পাচারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার হচ্ছে রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের কারবারিরা তাদের বাকিতেও কোটি কোটি টাকার ইয়াবা দিচ্ছে। রোহিঙ্গারা সেগুলো বিক্রি করেই পরিশোধ করছে টাকা। আর পাচারে প্রতিদিনই ব্যবহার হচ্ছে নিত্যনতুন কৌশল। গত কয়েক মাস ধরে বড় বড় ইয়াবার চালান মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে। এসব রুটে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে অনেক চালান জব্দও করেছে। গত দুই মাসে অন্তত ১৫ লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করা হলেও পাচার হয়েছে এর কয়েকগুণ বেশি।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, স্থলপথে কড়াকড়ি আরোপ করায় ইয়াবা কারবারিরা এখন সরাসরি সমুদ্র পথকে বেছে নিয়েছে। মিয়ানমার থেকে চালান আসে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে। এ ছাড়া মহেশখালী-কুতুবদিয়া গভীর সমুদ্র চ্যানেল ব্যবহার করে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও খুলনায়ও পাচার হচ্ছে ইয়াবার চালান।

সূত্র জানায়, কক্সবাজার থেকে আনার পর চট্টগ্রামে গুদামে রাখা হয়। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে কৌশলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হয় ইয়াবা। বিশেষ করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রতি রাতে খালাস করা হয় লাখ লাখ ইয়াবা। আর পতেঙ্গায় ইয়াবা আসে সমুদ্রপথে।

সমুদ্রপথে ইয়াবা পরিবহন ও পাচারের সঙ্গে স্থানীয় ট্রলারমালিকদের একটি অংশ জড়িত বলেও জানা যায়।

এব্যাপারে চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, ইয়াবাসহ সকল প্রকার মাদক ব্যবসা বন্ধে আমাদের অবস্থান খুবই কঠোর। প্রতিদিনই আমাদের অভিযান চলে। কাউকে ছাড় দেয়া হয় না। বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ মাদক উদ্ধার হয়েছে। গ্রেপ্তারও হচ্ছে মাদককারবারিরা।

আরও পড়ুনঃ  সুমনের নামে ভাইরাল হওয়া ব্যক্তি এএসআই আক্কাস

আনন্দবাজার/এইচ এস কে/ এম এম

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন