কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভার জাইকা প্রকল্পের অধিনে প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত সড়ক বছর না ঘুরতেই ভেঙ্গে পড়েছে। হেলে পড়েছে সড়ক রক্ষায় নির্মিত দু’টি গাইড ওয়াল। ঠিকাদার সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি আমলে না নিয়ে চুড়ান্ত বিল প্রদানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে পৌর বাসিদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
উলিপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, নারিকেলবাড়ি তিস্তারপাড় সটিবাড়ি থেকে খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ১৩শ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ ফিট প্রস্থের সড়ক জাইকা প্রকল্পের অধিনে ৯৬ লাখ টাকা ব্যায়ে ২০১৯ সালে নির্মান করা হয়। এ সময় সড়কটি ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য দুই স্থানে গাইড ওয়াল নির্মান করা হয়েছে। সড়কটির নির্মান কাজ করেন স্থানীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস অন্বেষা ট্রেডার্সের স্বতাধিকারী প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা শাহীনুর আলমগীর ওরফে আলম।
প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসীরা জানায়, সড়কটি নির্মানের সময় নিম্ন মানের নির্মান সামগ্রি ব্যবহার করা হয়। এ সময় স্থানীয়রা কয়েক দফায় বাঁধা দিলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাজ সম্পন্ন করেন ওই ঠিকাদার। অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ্যে ঘটলেও পৌর কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য কারনে ছিল নিশ্চুপ।
ফলে বছর না ঘুরতেই ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টি শুরু হলে নির্মিত সড়কের দুই স্থানে প্রায় ১শ মিটার ভেঙ্গে পড়ে। সেই সাথে ৮ বছর পূর্বে নির্মিত কাঁচা সড়ক রক্ষায় ১শ ফিটের গাইড ওয়ালের সাথে ২০ফিট নতুন করে গাইড ওয়াল সংযোজন করে নির্মান করা হয়। এছাড়া পৃথক এক স্থানে ৮০ফিট গাইড ওয়ালও নির্মান করা হয়। বর্তমানে সড়কটির ওই দুই স্থানে ধ্বসে যাওয়াসহ গাইড ওয়াল হেলে পড়েছে। এ কারনে ১০ফিট প্রস্থের সড়কের কোথাও ৬ফিট কোথাও ৭ফিট করে রাস্তা এখন দৃশ্যমান। ফলে প্রতিনিয়তই সেখানে দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যানবাহন ব্যাবহার কারীরা।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সড়কটি নির্মানের সময় ৮বছর পূর্বে নির্মিত গাইড ওয়ালটি ঘসে-মেঝে নতুন নির্মিত বলে কাগজে কলমে চালিয়ে দেয় পৌরসভার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারী। বর্তমানে সড়ক ভেঙ্গে পড়াসহ গাইড ওয়াল হেলে পড়লেও ওই কাজের চুড়ান্ত বিল প্রদানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
উলিপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মাহাবুবুল আলম বলেন, ওই সড়কের কিছু অংশ ভেঙ্গে পড়ার ব্যাপারে তিনি অবগত আছেন। বিল প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, চুড়ান্ত বিল প্রদানের প্রস্তুতি চলছে। তিনি আরও বলেন, বিল প্রদানের পূর্বেই যদি ক্ষতিগ্রস্থ অংশ ঠিকাদার নির্মান করে না দেন তাহলে প্রয়োজনে সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ অংশের বিল কর্তন করে চুড়ান্ত বিল প্রদান করা হবে। গাইড ওয়ালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদার গাইড ওয়ালের পাশ থেকে মাটি তুলে সড়কের পাশে ফেলায় গাইড ওয়াল হেলে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাইকা প্রকল্পের রংপুর বিভাগীয় রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (আর.ই) বিজয় কুমার দাসের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাকে জানতে হবে এবং দেখতে হবে। এরপর এ ব্যাপারে সঠিক মন্তব্য করতে পারবো।
উলিপুর পৌরসভার মেয়র তারিক আবুল আলা অভিযোগের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কিছু না বললেও এ প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, এখানে ঠিকাদারের খুব একটা দোষ নেই। যতদুর শুনেছি স্থানীয় লোকজন রাস্তার পাশ থেকে মাটি কাটায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, দলের প্রভাব খাটিয়ে কেউ কোন অন্যায় কাজ করলে তা সমর্থন যোগ্য নয়। জাইকা প্রকল্পের কাজ তো আরও সেনসেটিভ। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবচেয়ে নিম্ন মানের কাজ হয়েছে উলিপুর পৌরসভার এ প্রকল্পে। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ কোন অন্যায় কাজ করলে তা ঠিকাদারী হউক বা অন্য কিছু হউক তার দায় দায়িত্ব দল নিবে না। অভিযোগ প্রমানিত হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করলে দল বাঁধা দিবে না।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে/ এইচ আর এস