রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া দাফন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ডা. আলী আশরাফকে। বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের অবহেলা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া দাফন করার প্রতিবাদে বাঁশখালী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আতিকুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে ক্ষোভ জানিয়েছেন জনতা।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল রোববার (২৬ জুলাই) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১২ নং ওয়ার্ডের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ (৮৫)। মৃত্যুর পর পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ সোমবার (২৭ জুলাই) শেখেরখীল ইউনিয়নের লালজীবন নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করার কথা জানানো হয়। একই সাথে সময় ও স্থান উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশকে জানানো হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় সকাল থেকে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করার কাজ চলে। লাশ জানাজার জন্য নিয়ে যাওয়ার আগে থেকে মরহুমের মেঝ ছেলে দক্ষিণ জেলা কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে জানাজার স্থানে আসতে বলেন। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা সময় ক্ষেপণ করেন বলে অভিযোগ।
এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে থানা পুলিশ জানাজার স্থানে উপস্থিত হলেও প্রশাসনের কেউ উপস্থিত না হওয়ার কারণে জানাজা সম্পন্ন করে লাশ দাফন করা হয়।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, বিষয়টি জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তারকে জানানো হয়। কিন্তু যথাসময়ে থানা ও জেলা পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত না থাকায় এবং সালামি পতাকার অভাবে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ছাড়া জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন করতে বাধ্য হন পরিবার।
এদিকে, জানাযা ও দাফনের প্রায় ৫০ মিনিট পর বাঁশখালীর সহকারি কমিশনার (ভূমি) আতিকুর রহমান ঘটনাস্থলে গেলে জানাযায় উপস্থিত জনতা তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইমরানুল হক এমরানের হস্তক্ষেপে মুক্ত হন এসিল্যান্ড আতিকুল ইসলাম। পরে পুলিশের সহায়তায় তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দুপুর ১টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। এরপর ডা. আলী আশরাফ কবরে পুস্পস্তবক দিয়ে সম্মান জানান এবং মরুহুমের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফের ছেলে জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ‘রাষ্ট্র ও জাতির জন্য আমাদের পরিবারের পরম ত্যাগকে উপজেলা প্রশাসন অবজ্ঞা করেছে ও অসম্মান করেছে। আমার বাবার প্রতি এই অশ্রদ্ধা সহ্য করতে পারছি না।’
উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী ও চট্টগ্রাম জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ করায় ১৯৭৭ সালের ১১ আগষ্ট তৎকালীন সরকার মৌলভী সৈয়দকে গ্রেপ্তার করে নৃশংসভাবে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
আনন্দবাজার/শাহী/মতিন