ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরে জাতীয় পরিচয়পত্র নকল করা ও প্রতারনার বিচার দাবী

গাজীপুরের কাপাসিয়া পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতির পরিচালক এ এস এম মুমিত ওরফে জাকির হোসেনের জাতীয় পরিচয়পত্র নকল করে জালিয়াতি, প্রতারনা, চুরি ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবীর অভিযোগে গ্রেফতারের পর জেলহাজতে থাকা সাখাওয়াত হোসেন নামে একব্যক্তির বিচার দাবীতে সংবাদ সন্মেলন করেছেন। গতকাল রোববার গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তার আউটপাড়ায় মেসার্স জাকির সি এন জি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস কার্যালয়ে লিখিত বক্তব্যে বিচার দাবী করেন। ২১ জুলাই জেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নালিশি মামলা আমলে নিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বাসন থানাকে ব্যবস্থা নেয়া নির্দেশ দেন। পুলিশ আসামী গ্রেফতারের পর একদিনের রিমান্ড শেষে ২৩ জুলাই জেল হাজতে পাঠায়।

অভিযোগে জানা যায়, গাজীপুর পল্লী বিদুৎ সমিতি-২, কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের চেওরাইট গ্রামের বাসিন্দা এ এস এম মুমিত ওরফে জাকির হোসেনকে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশন প্রধান গত পাঁচ মাস আগে এককভাবে বৈধ প্রার্থী ও নির্বাচিত বলে ঘোষণা করেন। চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রায় পাঁচ মাস গত হলেও তাকে দায়িত্বভার দেয়া হচ্ছে না। পরিচালক হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সাখাওয়াত হোসেন তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে বিভিন্ন উপায়ে ক্ষয়-ক্ষতি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় উক্ত বিবাদী তার জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ডের নাম্বার পুরাতন পরিচয়পত্রে স্থাপন করে জালজালিয়াতির মাধ্যমে তৈরী করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রিন্ট মিডিয়ার নিকট সরবরাহ করে। তাকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বিবাদী সাখাওয়াত হোসেন টোক ইউনিয়নের বাসিন্দা না হয়েও এ এস এম মুমিত ওরফে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটানোর কারন মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে। গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে হলে চাঁদা না দিলে নানাভাবে হয়রানীর হুমকী প্রদান করে। পরবর্তীতে জাকির হোসেন তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পুনরায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য উপাত্ত দিয়ে আবেদনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিভিন্ন স্থানে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।

এ এস এম মুমিত ওরফে জাকির হোসেন আরো জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নির্বাচনে হলফনামায় সে কাপাসিয়ার টোক ইউনিয়ন পরিষদের ভোটার দাবী করে কোন কাগজপত্র দাখিল করেন নাই। নির্বাচনী তফসিলের শর্ত ভঙ্গ বা জালজালিয়াতি করে কোন নাগরিকত্ব সনদপত্র জমা দিয়ে পরিচালক পদে মনোনীত হননি বলে দাবী করেন। টোক ইউনিয়নের বীর উজলী চেওরাইট নামক স্থানে তার ক্রয়কৃত সম্পত্তি রয়েছে। সেখানে প্রস্তাবিত মেসার্স মুমিত ফিলিং ষ্টেশন নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি নির্মানাধীন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানীয় ৩ নং টোক ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স, বাস্তÍভিটার উপর ট্যাক্স, নাগরিকত্ব সনদ, বৈধ বিদ্যুৎ মিটার, বিদ্যুৎ বিল প্রদানের সর্বশেষ কপি, ট্যাক্স প্রদানের রশিদ, শিক্ষাগত সনদসহ নির্বাচনী তফসিলের সকল শর্ত পূরন করে প্রার্থী হন। নির্বাচন কমিশন তাকে এককভাবে বৈধ প্রার্থী এবং নির্বাচিত ঘোষনা করেন। অথচ তারপর থেকেই প্রতারক সাখাওয়াত হোসেন তার সাফল্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিভিন্ন জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মিথ্যা অপ-প্রচারে লিপ্ত হয়। সে বিভিন্ন সময় ভিন্ন নাম ব্যবহার করে জায়গা-জমি বিক্রয় ও দলিল সম্পাদন করে মানুষের সাথে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে মোটা অংকের টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। এব্যাপারে তার কাছে যথেষ্ট প্রমান আছে বলে এ এস এম মুমিত ওরফে জাকির হোসেনের দাবী।

এর আগে কাপাসিয়া সদরের সাখাওয়াত হোসেন এবং উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাহীন বাদী হয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে অনলাইনে একটি অভিযোগ পাঠালে বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকা ও নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ হয়। সাখাওয়াতের দায়ের করা বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের ভিত্তিতে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশন প্রধান মোঃ সাব্বিউল ফেরদৌস গত ১৬ জুলাই এক পত্র প্রেরন করেন। এতে সে উল্লেখ করেন, প্রার্থী কর্তৃক জালিয়াতি ও অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় সূত্রীয় স্মারকের প্রকাশিত পত্রের শর্তানুযায়ী এলাকা পরিচালকের পদ বাতিল করা হলো। এব্যাপারে ২০ জুলাই মঙ্গলবার ওই পরিচালক এ এস এম মুমিত ওরফে জাকির হোসেন নির্বাচন কমিশন বরাবর তার বিরুদ্ধে জাল সনদের অভিযোগকারী মোঃ সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন।

পরদিন ২১ জুলাই এ এস এম মুমিত ওরফে জাকির হোসেন গাজীপুর আদালতে সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে একটি সি আর মামলা (নং-৫৭৩) দায়ের করেন। ২২ জুলাই আদালতের আদেশক্রমে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বাসন থানায় প্যানাল কোডের ৪১৯/৪৬৫/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪২০/৩৮৫/৩৮০/৫০৬ ধারায় মামলা রুজু করেন।

সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ:
গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতায় ভাওয়ালগড়, মির্জাপুর, পিরোজালী ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২১, ২২ ও ২৩ নং ওয়ার্ডের বর্তমান পরিচালক ও সমিতির সভাপতি মোঃ নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে দালালী ও সুবিধা না পেয়ে লাইন স্থাপনে বাধা সহ নানা অভিযোগ উঠেছে। গাজীপুর সদরের জানাকুর গ্রামের আব্দুর রহমানের পুত্র মোঃ নুরুল ইসলাম নরওয়ের পাসপোর্টধারী। সে দীর্ঘদিন যাবত ক্যান্টনমেন্ট এলাকার নয়নপুরে দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ নরওয়ে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’টি পরিচালনা করছেন। পল্লীবিদ্যুৎ অফিসটি একই এলাকায় হওয়ায় স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদেও পরিচালক নির্বাচিত হন। পরিচালক হওয়ার পর থেকে সার্বক্ষণিকভাবে অফিসে বিচরণ করেন এবং সাধারণ গ্রাহকের যে কোন কাজ করতে হলে তার স্মরণাপন্ন হতে হয়। অফিসের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে সে দালালী করে বিপুল পরিমান টাকা-পয়সার মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে জানাকুর এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে মহল্লার উপর দিয়ে ১১ হাজার ভল্টের লাইনটি রাস্তার পাশে স্থানান্তরে বাধা দেয়ার অফিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারী হাজী মোঃ বাবুল মিয়া, অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান, সার্জেন্ট মোঃ শহিদ, মোসাঃ তাসলিমা গত একবছর যাবত তাদের ঝুকিপূর্ণ লাইনটি সরানোর কাজে প্রতিনিয়ত বাধার সম্মূখীন হচ্ছেন। গত বছরের মে মাসে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদনের প্রেক্ষিতে নতুন করে নকশা তৈরী করা হয়। লাইন স্থানান্তরে ঠিকাদার পদক্ষেপ নিলে সভাপতি নুরুল ইসলামের লোকজনের দ্বারা বার বার বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে তাদের দাবী।

সংবাদ সন্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর পল্লী বিদুৎ সমিতি-২, কাপাসিয়া উপজেলার টোক- সিংহশ্রী এলাকার গ্রাহক সমিতির সাবেক পরিচালক ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মোহর আলী প্রধান।

আনন্দবাজার/সবুজ

সংবাদটি শেয়ার করুন