ঈদ-উল-আযহা আর কয়েক দিন পরেই। অন্যান্য বছর এই সময়টাতে ব্যস্ততা থাকে সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লীতে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এবার ভিন্ন চিত্র। জেলার প্রায় সব তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে আছে। বেকার হয়ে পড়েছেন এ শিল্পের সাথে জড়িত লাখো শ্রমিক। বিপাকে পড়েছেন মালিকরাও। গত পহেলা বৈশাখ থেকে গেল ঈদ-উল-ফিতর পর্যন্তই এই খাতের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। সরকারি প্রণোদনা ও চলতি ঋণের সুদ মওকুফের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলার শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, সদর, কামারখন্দ, বেলকুচি, রায়গঞ্জ, চৌহালী, কাজিপুরে তাঁত কারখানার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজারের অধিক। এই শিল্পের সাথে জড়িত আছে ৮ থেকে ৯ লাখ শ্রমিক, মালিক ও কর্মচারী। এখানকার উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গী, গামছা দেশের বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি হয়। বিশেষ করে উল্লাপাড়া, বেলকুচি, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, পাঁচলিয়া বাজারে সাপ্তাহে দুই দিন বিশাল কাপড়ের হাট বসে। এসব হাটে লাখ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্য মতে, দেশের অন্যতম তাঁত অধ্যুষিত এলাকা সিরাজগঞ্জ জেলা। প্রতি বছর এ জেলায় হস্ত চালিত তাঁত থেকে প্রায় ২৩ কোটি মিটার বস্ত্র উৎপাদন হয়ে থাকে।
সদর উপজেলার তাঁত ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল হোসেন বলেন, তাঁতের ব্যবসা নাই। ঈদুল আযহায় ব্যবসাীরা আশা করে থাকে ভালো ব্যবসা হবে। কিন্তু করোনাভাইরাস তাঁতীদের সেই স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। শুধু ব্যবসায়ীরা না এর সাথে শ্রমিক কর্মচারীরাও পড়েছেন বিপাকে । ব্যাংক ঋণ কিভাবে শোধ করবো তা নিয়ে চিন্তাই আছি।
কামারখন্দ উপজেলার দোগাছী গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে ঈদুল আযহা পর্যন্ত তাঁতের ব্যবসা হয় জমজমাট। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে বাংলা নববর্ষ ও ঈদে কোনো ব্যবসা করতে পারিনি।
বেলকুচি উপজেলার তাঁত শ্রমিক সুজন মিয়া বলেন, করোনার কারণে নিঃশব্দ হয়ে পড়েছে তাঁত পল্লী। আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি। প্রতিমাসে আমরা ৮-৯ হাজার টাকা ইনকাম করতাম সেই পথটি বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা বেকার হয়ে পড়ে আছি।
সিরাজগঞ্জ তাঁত মালিক সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম ও পাওয়ার লুম অনার্স এ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক হাজী বদি-উজ্জামান বলেন, বৈশাখ থেকে শুরু করে দুইটি ঈদ পর্যন্ত তাঁত শিল্পে ক্ষতি হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। সেই ক্ষতি মাথায় নিয়েই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছু কারখানা খোলা হয়েছে। তবে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
তিনি বলেন, এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফসহ প্রণোদনা দাবি করেছেন তিনি।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ জানান, তাঁত শিল্পের বর্তমান অবস্থার বিষয়টি উল্লেখ করে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
আনন্দবাজার/শাহী