শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাঙামাটিতে অক্সিজেন সংকট

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে প্রতিদিনই মরছে মানুষ। কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সংকট থাকায় শুরু হয়েছে হাহাকার। তীব্র শ্বাসকষ্টের সময় হাইফ্লো অক্সিজেন দরকার হলেও রাঙামাটির জেনারেল হাসপাতালে সীমাবদ্ধতার কারণে তা মিলছে না। শ্বাসকষ্ট রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হলে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছে। এতে রোগীদের হাইফ্লো অক্সিজেনের জন্য রেফার করা হচ্ছে বিভাগীয় হাসপাতালে। কিন্তু যাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ সেক্ষেত্রে তারা রোগী নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও জানিয়েছেন, যে অক্সিজেন পদ্ধতি রয়েছে, তাতে তীব্র শ্বাসকষ্ট রোগীদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম ছাড়া এই সমস্যা থেকে পুরোপুরি উত্তরণও সম্ভব নয়।

গত ১২ জুলাই রিজার্ভ বাজার এলাকার বাসিন্দা শেফালী সেনের হার্টের সমস্যার কারণে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হার্ট ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকায় তাঁকে চম্পকনগরের আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানায়, তীব্র শ্বাসকষ্ট থাকার কারণে রোগীকে আইসোলেশন সেন্টারে রাখা হয়। পরবর্তীতে রোগীর চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন দিতে না পারায় রোগীকে চট্টগ্রামে রেফার করা হয়, কিন্তু রোগীকে চট্টগ্রামে না নিয়ে বাসায় নিয়ে যায় রোগীর স্বজনরা। এর একদিন পরই মারা যায় শেফালী সেন।

শেফালী সেনের পুত্র বাবলা সেন বলেন, মায়ের হার্টের সমস্যা নিয়ে রাঙামাটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে শ্বাসকষ্ট থাকায় চিকিৎসকরা চম্পকনগর আইসোলেশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেন। সেখানে অক্সিজেনের তেমন সুব্যবস্থা না থাকায় আমার মাকে চট্টগ্রামে রেফার করা হয়। কিন্তু আমরা তাৎক্ষণিক চট্টগ্রামে নিয়ে যেতে অপারগতা প্রকাশ করি। পরে আমাদের থেকে বন্ড সাইন নেয়ার পরও অক্সিজেনসহ স্বাস্থ্য সেবা না পাওয়ায় ও আইসোলেশনে দায়িত্বরত চিকিৎসাসেবীদের বাজে আচরণের কারণে আমরা মাকে বাসায় নিয়ে আসি। মাকে বাসায় আনার একদিন পরই গত সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর রাতেই স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মায়ের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  উলিপুরে দলদলিয়া বাজার এলাকায় জলাবদ্ধতায় দূর্ভোগে মানুষ

এবিষয়ে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শওকত আকবর বলেন, শেফালী সেনকে যখন হাসপাতালে আনা হয়েছিল, তখন উনার খুবই খারাপ অবস্থা ছিল। রোগীর প্রতি মিনিটে ৬০ লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছিল, আর আমাদের যে সিস্টেম সে হিসেবে আমরা ১০লিটারের ওপর অক্সিজেন দেয়ার সামর্থ্য নেই। হাইফ্লো অক্সিজেন দেয়ার সামর্থ্য আছে চট্টগ্রামে আমাদের সে ব্যবস্থা না থাকায়, আমরা উনাদের অনুরোধ করেছি চট্টগ্রামে নিয়ে যেতে। কিন্তু তারা যেতে রাজি হচ্ছিল না, পরে আমি এনডিসির সাথে কথা বলে তাদের জন্য বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থার কথাও বলি, কিন্তু রোগীর স্বজনরা তাঁকে চট্টগ্রামে না নিয়ে বাসায় নিয়ে যায়। চট্টগ্রামে নিয়ে গেলে হয়তো উনাকে বাঁচানো সম্ভব হতো।

রাঙামাটি হাসপাতালের সার্বিক অক্সিজেন ব্যবস্থার বিষয়ে জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত এই চিকিৎসক বলেন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা ছাড়া আমাদের এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। করোনার জন্য হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। বর্তমানে আমাদের যা রয়েছে, তা মোটামুটি বলা চলে। পুরোপুরি উত্তরণের জন্য আমাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা প্রয়োজন।

রাঙামাটির সিভিল সার্জন বিপাশ খীসাকে এবিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, গতকাল আমাকে এমপি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্যারও একই বিষয়ে জানিয়েছেন, উনাদের নাকি একজন অভিযোগ করেছেন, হাসপাতালে অক্সিজেন নাই। আসলে বিষয়টা হচ্ছে আমাদের হাইফ্লো অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা নেই। ওই রোগীর হাইফ্লো অক্সিজেনের প্রয়োজন ছিল। আমি স্যারদের বিষয়টা জানিয়েছি।

হাইফ্লো অক্সিজেন প্রসঙ্গে জেলার স্বাস্থ্যবিভাগের শীর্ষ এই কর্মকর্তা বলেন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছাড়া আমাদের হাইফ্লো রোগীদের চিকিৎসা দেয়া কোনওভাবে সম্ভব না। এটা চট্টগ্রামেই সম্ভব। সেন্ট্রাল অক্সিজেনের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের আবেদন করেছি। এছাড়া জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব পবন চৌধুরীকেও একটি কপি দেয়া হয়েছে। কবে হবে জানি না, তবে আশা করছি সেন্ট্রাল অক্সিজেন হবে রাঙামাটিতে।
বর্তমানে জেলায় সাধারণ শ^াস কষ্ট রোগীদের জন্য অক্সিজেনের সিলিন্ডারের ঘাটতি নেই বলেও জানান সিভিল সার্জন।

আরও পড়ুনঃ  অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন দ্বিগুণ কার্যকারিতা দেবে 

এর আগে করোনা প্রতিরোধে সরকারের জেলাভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব পবন চৌধুরী পিসিআর ল্যাবের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে অর্থের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া তিনি ভেন্টিলেটর ব্যবস্থা করে চাইলেও রাঙামাটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকায় সেগুলোও নিতে পারেনি স্বাস্থ্যবিভাগ। সবশেষ সভায়ও তিনি জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয় থেকে যদি সেন্ট্রাল অক্সিজেন বসাতে দেরি হয়, প্রয়োজনে তিনি সেন্ট্রাল অক্সিজেন বসানোর অর্থের যোগানও নিশ্চিত করবেন।

আনন্দবাজার/মিশু

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন