শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধর্মপাশার সড়ক উন্নয়ন কাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগে ৩০ হাজার মানুষ

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার তিনটি সড়ক উন্নয়ন কাজের দ্বিতীয় দফা মেয়াদ শেষ হওয়ার চারমাস পার হলেও তা এখনো শেষ হয়নি। সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারদের চরম গাফিলতি ও কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় এই তিনটি সড়ক উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়নি বলে এলাকাবাসী অভিযোগ জানিয়েছেন। এ অবস্থায় এখানকার ১১টি গ্রামসহ আশপাশের প্রায় ৩০হাজার মানুষজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মাইজবাড়ী গ্রামের সামনের কবরস্থান সংলগ্ন সড়ক থেকে আবদুল খালেক আহমদ সাহেবের বাড়ির সামনের সড়ক হয়ে সলপ পূর্বপাড়া মসজিদের সামনের সড়ক পর্যন্ত এক কিলোমিটার, বাদশাগঞ্জ –গেরিয়া রাস্তা থেকে শরিশ্যাম ব্রীজ পর্যন্ত এবং শরিশ্যাম রাস্তা থেকে বাহিরকান্দা গ্রামের সামনের সড়ক পর্যন্ত এক কিলোমিটার, গাবী কান্দাবাড়ি গ্রামের সামনের সড়ক থেকে ঈদগাহ পর্যন্ত এক কিলোমিটার গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমূহ টেকসই করণের লক্ষ্যে এইচবিবি করণ (মাটির সড়কে বক্স তৈরি করে সেখানে ভিটবালি ফেলে সেটির ওপর প্রথমে সমান ভাবে এবং পরে আঁড়াআঁড়িভাবে ইট বিছানোসহ অন্যান্য কাজ) প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে উপরে উল্লেখিত প্রথম কাজটির জন্য ৫৪লাখ ৮৫হাজার ২৩২টাকা, দ্বিতীয় কাজটির জন্য ৫৪লাখ ৮৬হাজার২২৯টাকা, এবং তৃতীয় কাজটির জন্য ৫৪লাখ ৮৪হাজার ৮৩২টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

দরপত্রের মাধ্যমে প্রথম দুটি সড়ক উন্নয়ন কাজ পান কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার মেসার্স হামিদা কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অপর কাজটি পান কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মেসার্স সানজিবা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ৩০ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। ঠিকাদারেরা কাজ শুরু না করায় উপজেলা প্রশাসন থেকে গত বছরের ১২ডিসেম্বর, ২৪ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ৪ফেব্রুয়ারি তিনটি তাগিদপত্র তাঁদেরকে দেওয়া হয়। পরে এ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ঠ বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।

আরও পড়ুনঃ  জয়পুরহাটে হত্যা মামলায় ১৪ জনের যাবজ্জীবন

এ অবস্থায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের এইচবিবি প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ চলতি বছরের ১২ফেব্রুয়ারি ধর্মপাশায় এসে সরোজমিনে সড়কগুলো পরিদর্শন করেন। ওইদিন ওই দুজন ঠিকাদারও ধর্মপাশায় এসে উপস্থিত হন। পরে তাঁরা এ নিয়ে সময় বাড়ানোর জন্য তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ওইদিন লিখিতভাবে আবেদন করে ১৩ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ৩মার্চের মধ্যে সড়ক উন্নয়ন কাজ গুলোর কাজ শেষ করবেন বলে তিনশত টাকা মুল্যের স্টাম্পের মধ্যে পৃথক পৃথক লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু অঙ্গীকার করলেও তিনটি সড়ক উন্নয়ন কাজ এখনো শেষ করা হয়নি।
সরোজমিনে গতকাল শুক্রবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ওই তিনটি সড়কের মধ্যে প্রথম সড়কটিতে শুধু মাত্র মাটির কাজ করা হয়েছে। সেটিও বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে যাচ্ছে। আর বাকি দুটি সড়কের পুরো কাজ শেষ করা হয়নি। ওই দুটি সড়কই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের বীর দক্ষিণ পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হিরন মিয়া বলেন, সড়কটায় বক্স তৈয়ার কইর‌্যা বালি ফালাইয়াই কন্ট্রাকটার কামডা শেষ কইরা হালছে। এক ট্রলি ইট আইন্যা হেই ইট ফরে (পরে) নিয়া গেছে। অফিসাররারে বাও (ম্যানেজ) কইর‌্যা নয়ছয় কইর‌্যা কন্ট্রাকটার টেহা লুটপাট করবার চেষ্ঠা করতাছে। সড়কের কামডা অইলে আমরার খুব ভালা অইবো।

ওই ইউনিয়নের শরিশ্যাম গ্রামের কৃষক আবু সায়েম বলেন, বাদশাগঞ্জ –গেরিয়া রাস্তা থেকে শরিশ্যাম ব্রীজ পর্যন্ত এবং শরিশ্যাম রাস্তা থেকে বাহিরকান্দা গ্রামের সামনের সড়ক পর্যন্ত এক কিলোমিটারে মধ্যে তিনশত মিটার সড়কে ইটের কাজ হয়েছে। গাবী কান্দাবাড়ি গ্রামের সামনের সড়ক থেকে ঈদগাহ পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কের মধ্যে বেশির ভাগ সড়কে ইট বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ওই দুটি সড়কের কাজ শেষ না করে ঠিকাদার সংশ্লিষ্ঠদের ম্যানেজ করে পুরো টাকা তুলে ফেলার পায়তারা করছেন। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ এ বিষয়ে সুদৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ  হাসপাতালে ৩ মাস ধরে মৃত মালিকের অপেক্ষায় কুকুর!

মেসার্স হামিদা কনস্ট্রাকশনের ঠিকাদার আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, সড়ক উন্নয়ন কাজে আমার কোনো গাফিলতি ছিল না। স্থানীয় দুজন ব্যক্তিকে সড়কের বাস্তবায়ন কাজ করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের গাফিলতির কারণে সড়ক দুটির শতভাগ কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী সুস্ক মৌসুমে যাতে কাজটি করা যায় সে জন্য সংশ্লিষ্ঠ প্রকল্পের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আবদেন করব।

মেসার্স সানজিবা এন্টার প্রাইজের ঠিকাদার রফিক মোশারফের ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রজেশ চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের বলেন, ওই তিনটি সড়ক উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে আমাদের কোনা অবহেলা ছিল না। ঠিকাদারদের চরম অবহেলার কারণে মেয়াদ শেষ হলেও তাঁরা ওই তিনটি সড়কের পুরো কাজ শেষ করেননি। প্রথম সড়কটি ছাড়া বাকি দুটি সড়কের কাজে গড়ে শতকরা ২০ভাগ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। যথাসময়ের মধ্যে তাঁরা কাজ শেষ না করায় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এইচবিবি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মহোদয়ের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.মুনতাসির হাসান বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আনন্দবাজার/শাহী/মোবারক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন