১৯৯৮ সালে যখন বঙ্গবন্ধু সেতু’র মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর বঙ্গের রেল যোগাযোগের শুভ সূচনা হলে জয়দেবপুর রেল স্টেশন থেকে জয়দেবপুর জংশনে রুপান্তরিত হয়।
এদিকে জয়দেবপুর রেল জংশন হওয়ার পর থেকে গাজীপুর সারাদেশের রেল যোগাযোগের জন্য হয়ে ওঠে এক গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। এছাড়াও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে গাজীপুরের দূরত্ব সড়ক আর রেল যোগাযোগ বিবেচনায় চাকুরীজীবিদের তথা পেশাজীবিদের বসবাসের জন্য সহজ সাধ্য এলাকা হচ্ছে গাজীপুর।
কিন্তু বর্তমানে করোনা মহামারীর কারণে সারা দেশের মতো শিল্প অধ্যুশিত এলাকা গাজীপুর মহানগরীর জীবন-জীবিকায় লেগেছে ব্যাপক পরিবর্তনের ছোয়া। আর অন্যদিকে জয়দেবপুর রেল জংশন থেকে ট্রেন যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে ঢাকায় নিয়মিত যাতায়াতকারী কর্মজীবি গাজীপুরের মানুষকে গুনতে হচ্ছে বড় অর্থের দন্ডি। একদিকে করোনার ঝুঁকি নিয়ে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন উপায়ে ছুটে যেতে হচ্ছে তাদের কর্মস্থলে। সেই সাথে সীমিত আয়ের মানুষ গুলোর আয়-ব্যায়ের হিসেব মিলাতে হিমশীম খাচ্ছে।
এদিকে গাজীপুর থেকে ঢাকার মতিঝিলে নিয়মিত বেসরকারী অফিস করা বশির আহাম্মেদ ‘দৈনিক আনন্দবাজার কে জানান, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের বেতন শতকরা ৪০ ভাগ কমিয়ে দিয়েছে আমাদের প্রতিষ্ঠান। এখন লকডাউন তুলে সীমিত পরিসরে সবকিছু খুলে দেওয়ার পর আমাদের যাতায়াত ভাড়া গুনতে হচ্ছে দ্বিগুনের চেয়েও বেশি। তবে জানিনা এভাবে আর কতোদিন চালিয়ে যেতে পারবো। ঢাকার শাহজাহানপুর থেকে গাজীপুরের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আসা নিজাম উদ্দিন জানান, রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার মা-বাবাকে ছেড়ে গাজীপুরে ভাড়া বাসায় উঠতে হয়েছে।
অন্যদিকে, জয়দেবপুর রেল স্টেশন কেন্দ্রীক গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং পেশাজীবিদের জীবনে নেমে এসছে এক নিদারূণ অভাব অনটন। রেল স্টেশনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সাধারণ কুলি,মুজুর,হকার ও ভিক্ষুকদের একটি বড় অংশ এখন চরম হতাশায় জর্জরিত। দিন আনা দিন খাওয়া এই মানুষগুলোর বড় একটা অংশ তাদের পূর্বের পেশা পরিবর্তন করে উভয় সংকটে পড়েছে।
রেল স্টেশনের ছোলা বুট বিক্রেতা আবুল হাশেম এখন তার পূর্বের পেশা পরিবর্তন করে এখন কাঁচা মরিচ বিক্রেতা। কিন্তু শহরে মানুষ কমে যাওয়ার কারণে এই ব্যবসায় এক ভ্যান কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে মধ্যরাত হয়ে যায়। সাধারণত এই মরিচ বিক্রিতে গামের্ন্টস শ্রমিক ছাড়া অন্য কোন পেশার ক্রেতা পাওয়া যায় না। জয়দেবপুর রেল স্টেশন থেকে কমলাপুর রেল জংশন পর্যন্ত ভিক্ষা করতো জন্ম থেকে অন্ধ মনির হোসেন সে জানায়, দুঃখের কথা কাউকে বলে কোন লাভ নাই। আমরা দিন ভিখারীরা করোনা শুরুর পর তিনবার সাহায্য পেয়েছি। এখন আর পাইনা। ট্রেনে ভিক্ষা করে একবেলায় যে আয় হতো, মহল্লায় মহল্লায় দুই তিন দিন ঘুরে সেই আয় করতে হয়।
এদিকে গত মঙ্গলবার দুপুরের সময় সরেজমিনে জয়দেবপুর রেল জংশনে গিয়ে স্টেশন মাষ্টারের রুমে কাউকে পাওয়া যায়নি। অলস সময় পার করছেন অন্যান্য কর্মচারী বৃন্দ। গাজীপুর থেকে ঢাকায় সহজলভ্য ও স্বল্প সময়ে যাতায়াতকারী পেশাজীবি মানুষেরা আর এই রেল স্টেশনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দিনমজুর, শ্রমজীবি মানুষেরা অধির আগ্রহে আশায় রয়েছেন কবে আবার রেল যোগাযোগ পূর্বের ন্যায় দ্রুত স¦াভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। সেই সাথে কখন ফিরে আসবে জয়দেবপুর রেল জংশনের জীবন জীবিকার চেনা রুপ।
আনন্দবাজার/সবুজ